ছবি বানানোর পরিকল্পনা আছে:আবু হেনা রনি

প্রকাশঃ মার্চ ৪, ২০১৫ সময়ঃ ৩:৩৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৩৯ অপরাহ্ণ

বিনোদন প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

‘এখনও ট্রেনের ছাদে, আবার কখনও লোকাল বাসে চড়ি’ বলছিলেন অাবু হেনা রনি। জান‌‌‌ালেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি ভীষণ আড্ডাপ্রিয়। মীরাক্কেল-৬ এর সুবাদে দুই বাংলায় জনপ্রিয় বনে যাওয়া এই কৌতুকশিল্পী সম্প্রতি সাক্ষাতকারে মুখোমুখি হয়েছিলেন। আজ আমাদের অতিথি আবু হেনা রনি।180_e3

**: অাপনার এখনকার পরিকল্পনাগুলো নিয়ে কিছু বলুন-

আবু হেনা রনি: এখন দেশে কমেডি নিয়ে এখন অনেক কাজ হচ্ছে। আমরা ‘বুনো পায়রা’ নামে একটা কমেডি ক্লাব করেছি। এখন দেশব্যাপী বিভিন্ন শহরে কমেডি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এছাড়াও ভবিষ্যতে এই নামে প্রোডাকশন হাউজ হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছে আছে। এখান থেকে ছবি বানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বলতে পারেন, উঠতি কৌতুকশিল্পীদের প্ল্যাটফর্ম বুনো পায়রা। যারা ভবিষ্যতে আমাদেরকেও ছাড়িয়ে যাবে।

**: এমনিতে ‘কমেডি’ বিষয়টিকে আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?

আবু হেনা রনি: এই শব্দটাকে অনেকেই অনেকভাবে ব্যাখ্যা করেন। কেউ বলেন কৌতুক, কারোর কাছে এটা ভাঁড়ামি, আবার কারোর কাছে এটা অনেক বড় একটা শিল্প। তবে এই কৌতুকগুলোতো আমাদের জীবনের বা সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকেই নেওয়া। সমাজের বিভিন্ন সমস্যাগুলোকে একটু অন্যভাবে হাস্যরসের মাধ্যমে উপস্থাপন করাটাকেই আমি মনে করি প্রকৃত কমেডি বা কৌতুক বলে। এতে একটা মানুষ শুধু যে মজাই পায়- তা নয়, এই কথাগুলো খুব সহজে মনে দাগও কাটে এবং মানুষ তাদের এই সমস্যাগুলো নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে।

**: মীরাক্কেলের সুবাদে অাপনি এখন পরিচিত। এর অাগে যাপিত জীবন কেমন ছিল?

আবু হেনা রনি: কখনও বন্ধুদের মন খারাপ হতে দিতাম না। হয়তো জোকস বলতাম না, কিন্তু এমন কিছু বলতাম বা করতাম যে সবার মন ভালো হয়ে যেত। অার বন্ধুরাই জানিয়েছে, অামার মধ্যে নাকি অালাদা কিছু একটা আছে। ওরাই মীরাক্কেলে যাবার জন্য উৎসাহ দেয়।

**: খ্যাতি পাবার পর নিজের মধ্যে কী ধরনের পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করেন?

আবু হেনা রনি: খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। আগে ছিলাম আড্ডাপ্রিয়, সবসময় হইচই করতাম। এখনও তেমন আছি। শুধু নিজের কিছুটা দায়িত্ববোধ বেড়েছে। যেমন পরিবার, সমাজ, এবং যাদের আশীর্বাদে এই পর্যায়ে এসেছি, তাদের প্রতি।

**: এমনিতে এই জীবনটাকে কীভাবে উপভোগ করেন?

আবু হেনা রনি:  দেখুন, আমি অনেক বড় তারকা বা আমার অনেক ভক্ত- ব্যাপারটিকে আমি এভাবে দেখি না। ‘বড় তারকা’ শব্দটা শুনলেই মনে হয়, কালো গ্লাসের গাড়ির ভেতরের কোনও একজন মানুষ! যারা নিজেকে অন্যের কাছ থেকে আড়াল করে রাখে বা ক্যাপ দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখেন। অার হ্যাঁ, এটাও ঠিক অনেকেই আমাকে বলেন, তুমি এখন তারকা। খুব সহজে মানুষের কাছে না যেতে বলেন। কিন্তু আমি তেমনটা করতে পারি না। কারণ আমার জীবনের এই প্রাপ্তি এবং শিক্ষাগুলো সব পেয়েছি সাধারণ মানুষের কাছ থেকেই। এখনও অামি ট্রেনের ছাদে, আবার কখনও লোকাল বাসে চড়ি। যদি আমার গাড়ির কালো কাঁচটা তুলে দেই, তাহলে বাইরের লোকদের আমি দেখব না, বা তারা আমাকে দেখবে না। অার এটা হবে আমার জন্য কষ্টকর। তাই আমি সবার ভালোবাসা নিয়ে সাধারণ মানুষের মতোই এখনও চলি এবং চলতে চাই।2013-01-06-18-59-23-50e9c98b17508-22

**: এখনও অাপনি ব্যাচেলর। মেয়ে ফ্যানদের নিয়ে কোনও মজার ঘটনা অাছে কি?

আবু হেনা রনি: এরকম ঘটনাতো মাঝে মধ্যেই ঘটে। এমনও হয়েছে মায়ের সামনেই মেয়ে বলে ফেলল, ‘ভাইয়া, আপনাকে আমার এত ভালো লাগে…’। এটা শুনে তখন মা হয়তো গলা কাশি দিচ্ছেন। অার বইমেলাতেই বাবার সামনে এক মেয়ে বলেছে, ‘ভাইয়া আপনাকে আমি কী বলব…এখন আব্বু না থাকলে…।’ মেয়েটির বাবাও বুঝতে পারেন উনার মেয়ে কী বলতে চাইছে। আর এদিকে আমিও ভ্যাবাচ্যাকা খেলাম।

**: তারকা হবার অাগের প্রেম সম্পর্কে কিছু বলুন-

আবু হেনা রনি:  ওই সময়টায় একটা অন্যরকম অনুভূতি ছিল। হয়তো অামার কোনও ভালো লাগা ছিল, কিন্তু কখনও বলা হতো না। কিংবা আমার প্রতিও হয়তো কারো ভালো লাগা ছিল, কিন্তু কেউ কখন বলেনি।

**: মীরাক্কেলে শুরুর দিকে কার বা কাদের সহযোগিতা বেশি পেয়েছেন ?

আবু হেনা রনি:  আমার প্রথমদিকে মানিয়ে নিতে একটু কষ্ট হয়েছিল। ভারতীয় মেন্টরদের সম্পর্কে যা শুনেছিলাম তাতে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু শোয়ের প্রযোজক শুভঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানি না কি বুঝলেন মীরাক্কেলের প্রথম শোয়ের শুরুটা আমাকে দিয়েই করালেন। আমার শুরুটা যদিও একটু ধীর গতির হয়েছিল কিন্তু পরে সবাই অনেক সহযোগিতা করেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো মীরাক্কেল-৬ এর শুরুর এবং শেষ দুইটা পারফরমেন্সই আমি করি।

**: আপনার ছোটবেলা…

আবু হেনা রনি: আমার বাবা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। আর মা গৃহিণী। চার ভাইয়ের মধ্যে আমি দ্বিতীয়। স্কুলের ভর্তি পরীক্ষাতেই আমার রোল এক ছিল, তবে পরে কখনও আর এক হয়নি, আশেপাশে ছিল। ক্লাস ফাইভে আমি দুই বছর ছিলাম। বাবা-মা বলেন, তখন আমি নাকি অনেক দুষ্টু ছিলাম। যদিও আমি এটা বিশ্বাস করি না। গ্রামের প্রাইমারি এবং হাই স্কুলেই আমার স্কুল জীবন কাটে। পরে রাজশাহীর বরেন্দ্র কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার আমার বড় ভাইয়ের হাত ধরে রাজশাহী থিয়েটারে যাই। বড় ভাই আবৃত্তি করতো, কিন্তু আমার ভালো লাগতো অভিনয় এবং গান। এর পরে আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগে পড়াশোনা করি।

**: আপনার প্রিয় কৌতুক শিল্পী কারা?

আবু হেনা রনি:  দেশের প্রয়াত দিলদার এবং টেলি সামাদ। কলকাতায় ছিলেন ভানু। তাদেরকে তো ভালো লাগেই, তবে বর্তমানের নাভিদ মাহবুব যিনি বাংলাদেশের প্রথমসারির একজন স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান। আরও ভালো লাগার হচ্ছে মীর আফসার আলী। উনার মতো স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান আমি আর দেখিনি। শুধু কথা বলে মুগ্ধ করে রাখার মতো এমন মানুষ কমই দেখেছি। এছাড়াও পছন্দের তালিকায় অাছেন বাংলাদেশের সোলাইমান শোখন এবং এনটিভির ‘হা-শো’ বিজয়ী সাইফুল ভাই।

**: এবার অভিনয় নিয়ে বলুন-

আবু হেনা রনি:  বেশ কিছু নাটকে কাজ করা হয়েছে। করেছি বিজ্ঞাপনও। ঢাকা এবং কলকাতায় কিছু চলচ্চিত্রে অভিনয় করারও অফার পেয়েছি। কিন্তু হয়তো কোথাও কিছু একটার অভাব থাকছে বা হয়তো চরিত্র পছন্দ হচ্ছে না বা স্ক্রিপ্ট ভালো লাগছে না- বলতে পারেন এজন্যই ছবিগুলো করা হচ্ছে না। তবে ‘ক্ষুদে রসিকরাজ’ নামে ছোটদের একটি কৌতুক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করছি। এছাড়াও বেশ কিছু চ্যানেলের অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত অাছি।

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদ। সূত্র:বাংলা ট্রিবিউন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G