দর্শকদের উচিত শিক্ষা নেওয়া- চঞ্চল
ডেস্ক রিপোর্ট: প্রতিক্ষণ ডটকম
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত দর্শকনন্দিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী । আরণ্যক নাট্যদল দিয়ে অভিনয় জীবন শুরু করা এই অভিনেতা দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন নিজের সাবলিল অভিনয় দিয়ে । অসংখ্য জনপ্রিয় নাটকের পাশাপাশি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন মনপুরা টেলিভিশন ও মনের মানুষসহ এর মত মানসম্পন্ন কিছু চলচ্চিত্রও।সম্প্রতি উত্তরার আনন্দ বাড়ি শুটিং হাউজে ঘোমটা নাটকের সেটে জনপ্রিয় এই অভিনয় শিল্পীর মুখোমুখি। চৌধুরীর সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল:-
*কেমন আছেন?
চঞ্চল চৌধুরী : জি, ভালো আছি।
*ঘোমটা নাটকে আপনার চরিত্রটি কেমন?
চঞ্চল চৌধুরী : নাটকে আমার চরিত্রের নাম রিয়াজ । যে অনেক বড় সাম্রাজ্যের অধিকারী। ঘটনা চক্রে ছেলেটি দুটি মেয়েকে তাঁর বাড়িতে আশ্রয় দেয়। যা নিয়ে ছেলেটির সৎ বোন চিন্তায় থাকে। এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে কাহিনী।
*আপনার সাম্প্রতিক ব্যস্ততা সম্পর্কে বলুন ?
চঞ্চল চৌধুরী : বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচারে থাকা ৬-৭ টি ধারাবাহিকের কাজ করছি। । এছাড়াও বৃন্দাবন দাশের একটি নাটক আগামী মাস থেকে শুরু হবে।
*বর্তমানে চলচ্চিত্রে কোনো কাজ করছেন ?
চঞ্চল চৌধুরী : চলচ্চিত্রে তো নিয়মিত কাজ করার ক্ষেত্র নেই। আমি যে ধরনের চলচ্চিত্রে কাজ করতে চাই ঐ ধরনের চলচ্চিত্র তো বছরে ১-২টা আসে। যা করা সম্ভব। তারপরও ভালো গল্প ও পরিচালক হলে আমি কাজ করি। আসলে চলচ্চিত্রে অনেক ভেবে চিন্তে কাজ করা হয়।
*চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরুটা কিভাবে ?
চঞ্চল চৌধুরী : দেখুন, একজন অভিনেতার সব ক্ষেত্রেই অভিনয়ের ইচ্ছা থাকে। যেমন আমি মঞ্চ দিয়ে শুরু করি। একজন অভিনেতার টার্গেটই থাকে সব মাধ্যমে অভিনয় করার। তারমধ্যে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের একটা আগ্রহ থাকে কারন একটা ভালো চলচ্চিত্র কয়েকশ বছর বেঁচে থাকে। টেলিভিশন নাটক ক্ষণস্থায়ী, তবে এখন সিডি বা ইউটিউবের মাধ্যমে দর্শক নাটকটি কিছুদিন মনে রাখে। কিন্তু আগে তো এসব ছিলো না। তাই সব শিল্পীর স্বপ্ন থাকে একটা ভালো কাজের মাধ্যমে দর্শক তাঁকে মনে রাখবে।
*আপনাকে দর্শক বহু চরিত্রে দেখেছে। বিশেষত, হাসির চরিত্রে আপনাকে অনেক প্রাণচ্ছল দেখেছে। আপনি কোন চরিত্রে অভিনয় করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন ?
চঞ্চল চৌধুরী : আমরা নাটক করি দর্শকদের বিনোদন দেওয়ার জন্য। সেখানে তাদের জন্য কিছু বার্তা থাকে। আমার অভিনয় দেখে দর্শক যেন বিনোদিত হয়। আর বিনোদন পাওয়া মানে শুধু হাসি নয়। একজন অভিনেতার কাজ হচ্ছে নিজেকে ভিন্ন রুপে দর্শকের সামনে উপস্থাপন করা। প্রত্যেকটি চরিত্র যেন ভিন্ন থাকে। আমি সব সময় চেষ্টা করি যে, বিনোদনের ভিতর দিয়ে দর্শক যেন অনেক কঠিন বিষয়গুলো দেখতে ও বুঝতে পারেন।
*আপনার স্বপ্নের চরিত্র কোনটি?
চঞ্চল চৌধুরী : আমি একজন পেশাদার অভিনেতা । যে কোনো চরিত্রে অভিনয় করার সময় আমি সর্বোচ্চ মনোযোগ দেই । দর্শক যেন দেখে নাহ বলে, এই চরিত্রটি আগের চরিত্রের মতো।
*ব্যক্তি জীবনে চঞ্চল চৌধুরী এবং অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মধ্য পার্থক্য কি ?
চঞ্চল চৌধুরী : ব্যক্তি জীবন আর অভিনয় জীবনে পার্থক্য এতোটুকুই যে, ব্যক্তি জীবনে আমি ঘুমাই বেশি (হাঁসি)। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে সিরিয়াস থাকি। ১৭ বছরের অভিনয় জীবনের ১ম দিন যেমন সিরিয়াস ছিলাম আজও আছি। তবে বাস্তবে অনেক রিল্যাক্স থাকি।
*অভিনেতা না হলে কি হতেন ?
চঞ্চল চৌধুরী : প্রথমত আমি চারুকলায় পড়াশুনা করেছি তাই শিল্পকলা রিলেটেড কিছু করতাম। আমি কিছুদিন শিক্ষকতাও করেছি। আথবা গান বাজনা করতাম। যদিও এ বিষয়ে আমার কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই।
*নাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি দর্শকেরা চঞ্চল চৌধুরীকে পেয়েছে একজন সঙ্গীত শিল্পী হিসাবেও। গান নিয়ে কিছু করার পরিকল্পনা আছে সামনে ?
চঞ্চল চৌধুরী : গান করি শখের বসে। ভালো লাগে তাই গান করা। আমি নিজেকে শিল্পী ভাবি না। গানের মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করতে পারবো তাও ভাবি না। আমাদের দেশে খুব অল্প যোগ্যতা নিয়ে আমরা বেশী বড়াই করি। যা একদম ঠিক না। আমি শুনে শুনে গান করি। পুরানো দিনের গান শুনি। গান নিয়ে শখ ছিলো, স্বপ্ন নয়।
*শখটা কি ছিলো ?
চঞ্চল চৌধুরী : শখটা এরকম ছিলো যে, আমার গানের যদি সিডি বের হতো! যদি গান রেকর্ড হতো! সেটা পূরন হয়েছে। তাই কোনো স্বপ্ন নেই।
*সাংসারিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলুন।
চঞ্চল চৌধুরী : আমার একটি পুত্র সন্তান, নাম শৈশব রুদ্র শুদ্ধ। আমার স্ত্রীর নাম শান্তা । তিনি একজন ডাক্তার এবং একটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষিকা।
*আপনার নিজের ভালো দিক এবং খারাপ দিক যদি বলেন।
চঞ্চল চৌধুরী : আমার খারাপ দিক হচ্ছে আমি মাঝে ,মাঝে খুব রেগে যাই। আর ভালো দিক হচ্ছে রাগার কিছুক্ষণ পরেই ঠান্ডা হয়ে যাই(হাঁসি)।
*একজন ভালো অভিনেতার গুণাবলী কি কি হওয়া উচিত বলে আপনি মনে করেন?
চঞ্চল চৌধুরী : শুধু অভিনয় নয়, যে কাজই করি না কেনো শেখাটা জরুরি। সাথে চর্চা এবং নিয়মানুবর্তিতাও জরুরি। মূলত কাজটা ভালোবেসে সততাঁর সাথে সময় দিতে হবে এবং সাধনা করতে হবে।
*ভবিষ্যতে পরিচালনায় আসার ইচ্ছা আছে?
চঞ্চল চৌধুরী : আমি মূলত অভিনয়কে ভালোবাসি। পরিচালকের দায়িত্ব অনেক। শখের বসে যদি কখনো পরিচালনা করি তা আলাদা ব্যাপার তবে আপাতত কোন পরিকল্পনা নেই।
*দর্শকদের কিছু বলবেন?
চঞ্চল চৌধুরী : দর্শকদের অনুরোধ করবো আমাদের দেশের ভালো নাটক দেখুন এবং ভালো দর্শক হয়ে উঠুন। কারন প্রত্যেকটি নাটকেই দর্শকদের জন্য কিছু বার্তা থাকে। দর্শকদের উচিত সেই বার্তাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়া।
প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদুল ইসলাম