WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS
WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'
WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''
শেখ দরবার আলম
প্রতিবেশী সমাজ শাসিত স্বাধীন ভারতে আমি যখন আমার কৈশোরে চব্বিশ পরগনায় আমাদের পারুলিয়ার বাড়িতে থেকে জাড়োয়া পীর গোরচাঁদ হাই স্কুলে এবং বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজে পড়তাম তখন প্রতিটি হিজরী সালের ১০ মর্হরম তারিখে আশুরার দিন সকাল থেকে দুপুর এবং বিকালে কতবার যে এই কবিতাটি পড়তাম তার ইয়ত্তা নেই! আমি পড়তাম এবং আমার চোখ দুটো ভিজে যেত এবং আমার দু’চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পড়তো। এভাবেই আমি আমার ইতহিাস-ঐতিহ্য ও ইসলামী সংস্কৃতির পরম্পরা এবং এই পরম্পরাভিত্তিক মুসলিম জাতিসত্তার আশ্রয়ে থাকতাম। এই আশ্রয় আমি কোন মূল্যেই কোনো দিনই ত্যাগ করতে চাইনি। ত্যাগ করতে রাজি হইনি। আমার সবসময়ই মন হয় আমি বাংলাভাষী ঠিকই; কিন্তু যখন যে দেশেরই নাগরিক হই না কেন আমি মুসলমান। আমার সবচেয়ে বড় পরিচয় এই যে, আমি মুসলমান। ‘মহররম’ কবিতা পড়তে গিয়ে শুরু থেকেই আমার চোখ দুটো ভিজে যেত। কবিতাটির প্রথম দিকে আছে কারবালা কেন্দ্রিক সমস্ত ইতিহাস এবং শেষের দিকে আছে মুসলমান জাতির সতর্ক হওয়ার বিষয়ে শিক্ষনীয় কিছু কথা। আমি পড়তাম :
“নীল সিয়া আসমান, লালে লাল দুনিয়া
আম্মা! লাল তেরি খুন কিয়া খুনিয়া।”
কাঁদে কোন ক্রন্দসী কারবালা ফোরাতে,
সে কাঁদনে আঁসু আনে সীমারেরও ছোরাতে।
রুদ্র মাতম ওঠে দুনিয়া-দামেসকে
“জয়নালে পরালো এ খুনিয়ারা বেশ কে?”
‘হায় হায় হোসেনা’, ওঠে রোল ঝঞ্ঝায়,
তলোয়ার কেঁপে ওঠে এজিদেরো পঞ্জায়।’
উন্মাদ দুলদুল ছুটে ফেরে মদিনায়,
আলিজাদা হোসেনের দেখা হেথা যদি পায়।
মা ফাতিমা আসমান কাঁদে খুলি কেশপাশ,
বেটাদের লাশ নিয়ে বধূদের শ্বেত বাস!
রণে যায় কাসিম ঐ দু’ঘড়ির নওশা;
মেহেদীর রঙটুকু মুছে গেল সহসা।
‘হায় হায়’ কাঁদে বায় পূরবী ও সখিনা
‘কঙ্কন পঁইচি খুলে ফেল সকীনা!’
কাঁদে কে রে কোলে করে কাসিমের কাটা-শির?
খান খান খুন হয়ে করে বুক-ফাটা নীর।
কেঁদে গেছে থামি হেথা মৃত্যু ও রুদ্র,
বিশ্বের ব্যথা যেন বালিকা ও ক্ষুদ্র!
গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদে কচি মেয়ে ফাতিমা,
‘আম্মা গো, পানি দাও, ফেটে গেল ছাতি, মা!”
নিয়া তৃষা সাহারার দুনিয়ার হাহাকার
কারবালা-প্রান্তরে কাঁদে বাছা আহা কার।”
অবিস্মরণীয় কবিতা! নজরুল এই কবিতাটি যখন লিখেছিলেন তখন তার বয়স মাত্র একুশ বছর তিন মাস। কারবালার সমস্ত ইতিহাসটাই যেন এই দীর্ঘ কবিতাটির মধ্যে তিনি এনেছেন। অনন্য সাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল তার। অনন্য সাধারণ ছিল তার প্রতিভা। তার ভাষার কথা মনে পড়লে ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারের ভাষার কথা মনে পড়বে। মুসলমান সমাজের যন্ত্রণার ইতিহাসটাও মনে পড়বে এই কবিতায়। শেষের দিকে নজরুল লিখেছেন :
‘কত মহররম এলো, গেল চলে বহু কাল
ভুলি নি গো আজো সেই শহীদের লোহু লাল!
মুসলিম! তোরা আজ ‘জয়নাল আবেদীন’
‘ওয়া হোসেনা-ওয়া হোসেনা’ কেঁদে তাই যাবে দিন।
ফিরে এলো আজ সেই মহররম মাহিনা,
ত্যাগ চাই, মর্সিয়া ক্রন্দন চাহি না।
উষ্ণীষ কোরানের হাতে তেগ আরবীর
দুনিয়াতে নত নয় মুসলিম কারো শির,
তবে শোন ঐ শোন বাজে কোথা দামামা,
শমশের হাতে নাও, বাঁধো শিরে আমামা!
বেজেছে নাকাড়া, হাঁকে নকীবের তূর্য,
হুশিয়ার মুসলিম ডুবে তব সূর্য।
জাগো, ওঠো মুসলিম হাঁকো হায়দরী হাঁক,
শহীদের দিনে সব লালে লাল হয়ে যাক!
নওশার সাজ নাও খুন-খচা আস্তীন,
ময়দানে লুটাতে রে লাশ এই খাস দিন!
হাসানের মতো পিব পিয়ালা সে জহরের,
হোসেনের মতো নিব বুকে ছুরি কহরের,
আসগর সম দিব বাচ্চারে কোরবান
জালিমের দাদ নেবো, দেব আজ গোর জান!
সকীনার শ্বেত বাস দবো মাতা-কন্যায়,
কাসিমের মতো দেবো জান রুধি অন্যায়।
মহররম! কারবালা! কাঁদো ‘হায় হোসানা’!
দেখো মরু-সূর্য এ খুন যেন শোষে না!”
প্রতিক্ষণ/ এডি/ শাআ