পাখা গ্রামের শিশুদের দিনকাল

প্রকাশঃ অক্টোবর ১১, ২০১৫ সময়ঃ ৯:৪৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:১০ পূর্বাহ্ণ

সোহেল রানা সবুজ

pakha 2

চট্টগ্রাম জেলার চন্দনাইশে অবস্থিত পাখা গ্রাম। শহর থেকে দূরে সবুজে ঘেরা নিভৃত এই পল্লীর বিশেষত্ব হচ্ছে, এখানে বসবাসরত সকলেরই পেশা তালপাতা দিয়ে হাত পাখা তৈরী। বংশ পরম্পরায় এই কাজটি করে আসছে এখানকার অধিবাসীরা।

বংশগত পেশা, তাই ছোটবেলা থেকেই পাখা তৈরীর দক্ষ কারিগরে পরিণত হচ্ছে পাখা গ্রামের ক্ষুদে শিশু-কিশোরেরা। লেখাপড়ার ফাঁকে পাওয়া অবসর সময়ে বাবা-মায়ের সাথে বাড়ির উঠোনে বসে মনের মাধুর্য মিশিয়ে কারুকার্যখচিত রং-বেরংয়ের বাহারী পাখা তৈরী করছে তারা। এখানকার ক্ষুদে পাখা কারিগররা জানায়,pakha 1

‘‘ একটা পাখা তৈরী করতে প্রথমে তালের পাতা লাগবে। তালের পাতা থেকে সাইজ করতে হবে এবং কেটাবেত লাগবে। এগুলো সাইজ করে শুকনা করে সমান করতে হবে। আমার মা বাবা- এগুলো সাইজ করে। ভবিষ্যতে আমি পাখার শিল্প দিতে চাই।’’

‘‘ লেখাপড়ার পাশাপাশি যে সময় পাই, সে সময়ে এই কাজ করি।’’

পাখা বিক্রির অর্জিত অর্থ দিয়ে নিজের লেখাপড়ার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারকে আর্থিকভাবে সহায়তা করছে পাখা গ্রামের শিশু-কিশোরেরা। বংশগত এই পেশায় টিকে থাকতে গিয়ে বর্তমানে এই ক্ষুদে কারিগররা

শিকার হচ্ছে নানা বৈষম্যের। যার ছাপ অভিযোগ আকারে ফুটে উঠেছে এদের চোখে-মুখে। এ নিয়ে তারা জানায়,

‘‘ পাখা তৈরীতে খরচ পড়ে যায় ২০ টাকা। কিন্তু বিক্রি করতে গেলে আমাদের এই দাম দিতে চায় না।’’

গ্রীষ্মে পাখা তৈরীর এই ব্যবসায় জোয়ার, শীতে থাকে খরা। দরিদ্রতার কারণে বাধ্য হয়েই সন্তানদের দিয়ে পাখা তৈরী করাচ্ছেন অসহায় বাবা-মায়েরা। তারা জানায়,

‘‘ সংসার চালাইতে পারি না। তাই সন্তানদের দিয়ে কাজ করাই।’’pakha 4

দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশের মাটিতেও রয়েছে পাখা গ্রামের শিশু-কিশোরদের কচি হাতে তৈরী হাত পাখার কদর। তাই ব্যাংক ঋণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বড়দের পাশাপাশি ক্ষুদে এই কারিগরদের সহায়তা করছে মহাজনরা। তাদের ভাষ্য,

‘‘ আমি বিভিন্ন থেকে টাকা নিয়া এদেরকে দিচ্ছি। এদের কাছ থেকে আমরা পাখা নেই।’’

ঐতিহ্যে পরিণত হচ্ছে পাখা গ্রামের বাসিন্দাদের পাখা তৈরীর পেশা। সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে পৃষ্ঠপোষকতা এই পেশাকে করে তুলবে আরো লাভজনক। যা বিশ্ব দরবারে পাখা তৈরীর কারু শিল্পে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনবে। এমনটাই প্রত্যাশা এখানকার বাসিন্দাদের।

প্রতিক্ষণ/এডি/এস. আর. এস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G