ফেরদৌসি মজুমদারের মুখোমুখি
প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ
বাংলাদেশের নাট্যজগতে তিনি সম্রাজ্ঞী। ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি অভিনয়ের সাথে জড়িত। বাংলাদেশ টেলিভিশনের সর্বপ্রথম নাটকটিতেও তিনি অভিনয় করেছিলেন। আমাদের নাট্যজগতের পথিকৃৎ ফেরদৌসি মজুমদার এবার মুখোমুখি হয়েছেন।
কেমন আছেন? কি করছেন?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ ভালো আছি। বই পড়ছি।
অভিনয়ের শুরুটা কিভাবে?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ অভিনয়ের শুরুটা থিয়েটার দিয়ে। আমরা যখন গ্রুপ থিয়েটার শুরু করি তখন থেকে একটা পরিবারের মত হয়ে গেছি। আজকের এই যে আমি এর পেছনের সবটুকু অবদান থিয়েটার এর।
থিয়েটারের কোন বিশেষ স্মৃতি কি মনে পড়ে সবসময়ে?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ থিয়েটার আমাকে সব দিয়েছে। ‘কোকিলারা’ যখন এর ৫০তম প্রদর্শনী করলো, তখন সবাই মিলে ঠিক করলো আমাকে কিছু দেবে। যা সারা জীবন আমার সঙ্গে থাকবে। তারা তখন আমাকে সোনার বালা দিলো। থিয়েটার এর মনোগ্রাম খোদাই করা। সেটা আমি সব সময় পরে থাকি।
নাট্যজগতের কার কাছ থেকে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন এবং আপনার বন্ধুত্ব ছিলো সবচাইতে বেশি?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ মামুন ভাইয়ের (আব্দুল্লাহ আল মানুন) সাথে আমার দীর্ঘ ৪৭ বছরের বন্ধুত্ব। আমি তো কিছুই ছিলামনা। উনি আমাকে গড়ে তুলেছেন। উনি আমাকে হাত ধরে শিখিয়েছেন, অভিনয়ের প্রতিটি কাজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, বুঝিয়েছেন মঞ্চের খুঁটিনাটি। কোকিলারা নাটকটি আমার জন্য উনি লিখেছিলেন। তিনি আমাদের জন্য যা করেছেন তা ভোলার মত নয়। নিজেতো অভিনয় পারতেনই নাটক নির্মাণ, চিত্রনাট্য তৈরি -নাটকের সবকিছু নিজেই করতেন। বুঝতেন কাকে দিয়ে কি হয়।
তাকে ছাড়া তো থিয়েটারে আপনারা নাটক প্রদর্শনী করছেন, এ মুহূর্তের অনুভূতি কেমন?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ মামুন ভাইকে ছাড়া নাটক প্রদর্শনী অবশ্যই খুবই বেদনাদায়ক। তার স্মৃতি ধরে রাখতে হলে তো নাটক নিয়ে আমাদের কাজ করতেই হবে।
আমার কর্মজীবন নিয়ে ৮৬ মিনিটের একটি তথ্যচিত্র ‘জীবন ও অভিনয়’ নির্মিত হয়েছে। এটাও মানুন ভাইয়ের কীর্তি। আমার দশটি নাটকের খন্ড খন্ড অভিয়ের অংশ রয়েছে এতে। বেঁচে থাকতে কোন অভিনেতা অভিনেত্রীর ভাগ্যে সহজে এমন জোটেনা।
মঞ্চে আপনার প্রথম নাটকের নাম কি?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ আমার প্রথম নাটক ‘রাক্তাক্ত প্রান্তর।’
রামেন্দু মজুমদারের সাথে প্রথম কোথায় দেখা হয়?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুনির চৌধুরির ‘অমর’ নাটক এ।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের ইতিহাসের প্রথম নাটকটিতে আপনি অভিনয় করেছেন। সে অভিজ্ঞতা একটু বলবেন?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ সময়টা ছিলো একেবারে অন্যরকম। পুরো একমাস অনুশীলন করেছিলাম। ওই সময় তিনটি ক্যামেরা ব্যবহার করা হতো। ফলে আমাদের ছিলো অবাধ চলাফেরার স্বাধীনতা। এখন তো অভিনেতারা স্ক্রিপ্টই মুখস্থ করেনা। এতে সংলাপে আবেক ঠিকমত আসেনা। পুরো বিষটি মেকি ও অর্থহীন মনে হয়।
এখন তো অনেক চ্যানেল চারিদিকে, কাজ করছে অনেকেই -কেমন লাগছে এসব কাজ?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ তরুনদের তো আমি খুব ভালোবাসি। আমি মনে করি ওদের কাছ থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে।
কাদের কাজ বিশেষ করে মনে ধরে?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ আমার বিবেচনায় গিয়াস উদ্দিন সেলিম, নরুল আলম আতিক, মাসুম রেজা -এদের কাজ তো খুবই ভালো।
রবীন্দ্রনাথের অনেক নাটকে আপনি অভিনয় করেছেন -এর কি কোন বিশেষ কারণ আছে?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ রবীন্দ্রনাথ আমার দুর্বলতা। রবীন্দ্রনাথের কাজ আমি তাই আগ্রহ নিয়ে করেছি। ঘরে বাইরে, দুই বোন -নাটকগুলো আমার নিজের কাছেই অনেক ভালো লেগেছে।
আপনারা কয় ভাই বোন?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ আমরা ১৪ ভাইবোন ছিলাম। অনেক কিছু বদলে গেছে। শৈশব, কৈশর ছিলো খুবই আনন্দের। বাড়ি ভর্তি মানুষ, বিশাল পরিবার। মা ব্যাস্ত থাকতেন রান্নাবান্নায়। মা’কে একাই করতে হতো সবকিছু -এখন মনে হলে কষ্ট লাগে। কিন্তু তখনকার সময় এটাই বাস্তবতা ছিলো। পিতৃতান্ত্রিক পরিবার।
ত্রপা কে নিয়ে কিছু বলবেন?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ আমার মেয়ে একটাই। মেয়েটা কোন কিছু করার আগে আমাকে জিজ্ঞেস করে নেয়। আমার ব্যাপারে তার হাজার খেয়াল। মা তুমি খেয়েছো, ওটা করেছো, ওখানে গিয়েছে ইত্যাদি। আমার ছোট বেলায় আমি এমন ছিলাম না ভাবলে মা’র জন্য খুব খারাপ লাগে।
আপনাদের সময়ে নাটকের স্বর্ণযুগ ছিলো -এখনকার নাটক সেরকম প্রতিষ্ঠা পাচ্ছেনা কেন?
ফেরদৌসি মজুমদারঃ আমাদের নাটক কিন্তু ভারতে ওরা খুবই পছন্দ করে। ওরা আমাদের নাটক দেখার সুযোগ পায়না। আর এখন তো অজস্র টিভি চ্যানেল। মিডিয়ার বিস্তার বেশি। হাজার নাটক তৈরি হচ্ছে প্রতিদিন। এ কারণে মানসম্মত নাটক ইদানিং হচ্ছেনা। অনেক দিক থেকেই নাটকের মান কমতির দিকে। নাটকের ভাষার মান এত নেমে ভেছে যা সহ্য করার পর্যায়ে নেই। আইসি, গেসি, খাইসি, করসি -করতে হলে ভাষার সাহিত্য মানটি আর কোথায় থাকলো?
মূল্যবান সময় দেবার জন্য আপনাকে কমিউনিটির পক্ষ থেকে অনেক ধন্যবাদ। অনেক কথা জানতে পারলাম আপনার কাছ থেকে।
ফেরদৌসি মজুমদারঃ আপনাদেরকেও অনেক ধন্যবাদ। বিদেশের সকল শুভাকাঙ্খীদের জন্য আমার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা রইলো।
প্রতিক্ষণ/এডি/সাইমুম