বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদ, দিনভর নাটক

প্রকাশঃ জুন ২৫, ২০১৬ সময়ঃ ৪:৩০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:২৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

160605091909_bangla_chittagong_killing_sp_wife_police_babul_akhtar_640x360_focusbangla_nocredit

নাটকীয় মোড় নিয়েছে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্ত। জঙ্গি দমনে আলোচিত পুলিশ অফিসার এসপি বাবুল আক্তার নিজেই স্ত্রী মিতু হত্যা পরিকল্পনা করেছিলেন। শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি এ কথা স্বীকার করেছেন বলে মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের দামপাড়ার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বাবুল আক্তারের মনোমালিন্য চলছিল। স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক মেনে নিতে না পারায় নিজেই পরিকল্পনা করে স্ত্রীকে হত্যা করিয়েছেন বলে বাবুল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।

এর আগে, শুক্রবার গভীর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় শ্বশুরের বাসা থেকে বাবুল আক্তারকে আটক করে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাত আড়াইটার দিকে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশাররফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

গত ৫ জুন সকাল ৭টার দিকে নগরীর জিইসি মোড়ে প্রকাশ্যে গুলি করে পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। ছেলেকে নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট স্কুলে যাওয়ার সময় এ ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি বাবুল আক্তারের পদোন্নতির পর ঢাকায় অবস্থান করলেও তার স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি এলাকার একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন।

এ ঘটনায় বাবুল আক্তার নিজে বাদি হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পরে শুরু হয় ব্যাপক তদন্ত। তারই ধারাবাহিকতায় বের হয়ে আসে ঘটনার পেছনের ঘটনা।

এদিকে এই স্পর্শকাতর হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিরা এখন গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে। এই খুনিদের সংখ্যা ৫ থেকে ৬ জন বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সুত্র। এদেরকে আটক করেছেন, বন্দর থানার অফিসার ইনচার্জ মহিউদ্দিন সেলিম। গত এক সপ্তাহের ভেতর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে খুনিদের আটক করে তিনি। এরা সকলেই ‘পেশাদার ভাড়াটে খুনি’ বলে ধারনা করা হচ্ছে।

পুলিশের একটি সুত্র জানিয়েছে, মিতু হত্যা মামলা তদন্তভার গোয়েন্দাদের হাতে থাকলেও খুনিদের ধরার ব্যাপারে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের বন্দর থানার ওসি মহিউদ্দিন সেলিম।

দীর্ঘদিন চট্টগ্রামে কাজ করার সুবাদে বন্দরনগরীর অপরাধ জগতের অনেক অপরাধীকেও তিনি চিনতেন। এ কারনেই তাকে খুনিদের শনাক্ত করে গ্রেফতারের জন্য পুলিশের উদ্ধতর্ন কর্মকর্তারা তাকে বলেছিলেন।

ঘটনার সময় ওসি মহিউদ্দিন সেলিম বিদেশে ছিলেন। বিদেশ থেকে চট্টগ্রামে ফেরার পর তাকে অলিখিতভাবে খুনিদের ধরার জন্য বলা হয়। এরপরই ওসি মহিউদ্দিন সেলিম মাঠে নামেন এবং মিতুর ৪ জন খুনিকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা পুলিশকে সহযোগীতা করেন।

বন্দরনগরীর একটি সুত্র জানিয়েছে, খুনিদের আটকের পরই তাদের কাছ থেকে মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের স্ত্রীর পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা। আটক হওয়া খুনিদের মধ্যে মুসা ও ওয়াসিম হচ্ছে এসপি বাবুল আক্তারের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সোর্স। সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, এদের মাধ্যমেই নিজ স্ত্রীকে খুন করার পরিকল্পনা করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, আটকের পর ৪ জনের আলাদা আলাদা করে জবানবন্দিও নেওয়া হয়। ওই জবানবন্দিতে তারা হত্যার দায় স্বীকার করেন। তখনই তারা খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে বাবুল আক্তারের কথা সুনির্দিষ্ট করে জানান। মূলত এরপরই পুলিশ বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেফাজতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে। শনিবার সকাল থেকে ওই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়।

এছাড়াও হত্যাকান্ডের আগে ও পরে খুনিদের সঙ্গে বাবুল আক্তারের কথোপকপনের রেকর্ড মিলেছে এসপির ও খুনিদের ব্যবহৃত কললিষ্ট থেকে। এই কললিষ্ট ও কথোকপনের রেকর্ডও রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে।

তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে। বাবুল আক্তারকে ডিবি কার্যালয় থেকে শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এসপি বাবুল আক্তার নিজেই সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

 

 

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G