লেখার অনুপ্রেরণা মা

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৫ সময়ঃ ১১:৩৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:৪৯ অপরাহ্ণ

10549831_376826552507223_8409275844447218735_oলেখালিখি এবং সাহিত্যের সাথে সখ্যতা সেই শৈশব থেকেই, শুধু সখ্যতা বললে ভূল হবে সাহিত্যকে ভালবাসা এবং রীতিমত নেশা হিসেবে নিয়ে লিখে চলেছেন তিনি। প্রকাশিত প্রথম লেখা ২০০২ সালে, যখন পড়েন ক্লাস টুতে; সেটাও আবার দেশের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক প্রথম আলোতে, এর পর শুধুই অবিরাম ছুটে চলা । ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় বেরিয়েছে শিশুতোষ উপন্যাস ‘সুং তুং পিং রাজ্য’ এবং একটি লেখা বেরিয়েছে কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের সম্পাদনায় প্রবন্ধ সংকলন ‘যুগলসম্মিলন’-এ। এছাড়াও নিয়মিত গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ লিখে চলেছেন সব বয়সী পাঠক দের জন্য, প্রথম আলোর ছুটির দিনে এবং গোল্লাছুট পাতা, ইত্তেফাফ, কালের কণ্ঠ, ইউকে থেকে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক মিলেনিয়াম, পথিক, কাঠ পেন্সিল, প্রতিস্বর, তুষারধারা, এবং মুক্তমনাসহ বিভিন্ন অসংখ্য অনলাইন পত্রিকা ও ব্লগে তার প্রচুর লেখা প্রকাশিত হয়েছে।

হ্যাঁ বলছিলাম বহুমূখী প্রতিভাধারী লেখিকা জান্নাতুন নাঈম প্রীতি ’র কথা । তার অর্জন এবং স্বীকুতির ঝুড়িতেও রয়েছে অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মাননা । পেয়েছেন জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড, ইউনিসেফ মিনা মিডিয়া এ্যাওয়ার্ডের মত পুরস্কার, সম্প্রতি ব্রান্ড এ্যম্বাসেডর হিসেবে যোগদান করেছেন মাইক্রোসফট বাংলাদেশে । নিজের সম্পর্কে এবং তার কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছেন প্রতিক্ষণ ডট কমের সাথে ।                                                         প্রতিক্ষণ’র এর পক্ষে বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সিফাত তন্ময় ।

লেখালিখির শুরুটা কিভাবে ?

আমার লেখা সর্বপ্রথম বের হয় প্রথম আলো পত্রিকায় ২০০২ সালে, দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্রী আমি তখন। সেদিন আসলে সেটা তেমন একটা স্পর্শ করেনি। কেননা লেখাটা ছিল অনেকটা খেলার মতন, সিরিয়াস কিছু না। তবে প্রথম যখন ঐতিহ্য-গোল্লাছুট-প্রথম আলো গল্পলেখা প্রতিযোগিতায় বাছাই ৩১ টা গল্পের গল্প সংকলন বের হয় সেদিন নিজের লেখা গল্পের বই নিজের হাতে- এটা চিন্তা করেই অদ্ভুত আনন্দ হচ্ছিল, আর সেই অনুষ্ঠানের উপস্থাপক বলেছিলেন আমার লেখা অনেকটা মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের লেখার মত, সেখানে স্যারও উপস্থিত ছিলেন, এটা আমাকে খুবই আনন্দ আর উৎসাহ দিয়েছিল পরবর্তী লেখাগুলির প্রতি।

লেখালিখির পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাই ।

গান শিখেছি বাংলাদেশ শিশু একাডেমী থেকে। এপর্যন্ত অসংখ্য ওস্তাদের কাছ থেকে তালিম নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার ওস্তাদজি শাহজাহান স্যারের কাছে থেকে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম পেয়েছি। তাছাড়া আমি ছোটবেলা থেকেই আবৃত্তি করতাম, এবং মজার ব্যাপার আমার আবৃত্তির প্রশিক্ষক ছিলেন আমার বড়বোন সুলতানা রাজিয়া, ক্লাস ফাইভ থেকে আমি বাংলাদেশ বেতার রাজশাহীর তালিকাভুক্ত আবৃত্তি শিল্পী। কিছুদিন বিতর্কও করেছি এবং জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে কয়েকবার সেরা বিতার্কিকও নির্বাচিত হয়েছি। ছবি আঁকতাম ছোটবেলা থেকেই, এই বিষয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছি। এই বিষয়গুলিতে জেলা, বিভাগীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছি। জাতীয় শিশু পুরস্কার ২০০৩-২০০৫, সার্ফ এক্সেল পেইন্টিং কারনিভাল ২০০৩ পুরস্কার ‘টপ টুয়েন্টি’, ফেবার ক্যাস্টাল ইন্টারন্যাশনাল এবং ন্যাশনাল পেইন্টিং কম্পিটিশান গুলোতে ২০০৫-২০০৬ সালে পুরস্কার,এসো বাংলাদেশ গড়ি এর ‘কৃতী শিক্ষার্থী ২০০৮’ সহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছি। আর স্কুলের উপস্থিত বক্তৃতা, আবৃত্তি, দেশগান, রবীন্দ্রসংগীতে পুরস্কার পেয়েছি অনেক। গান,আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, অভিনয়,বিতর্ক, ছবি আঁকা

আপনার অনুপ্রেরণা কে?

যিনি আমাকে সবচেয়ে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তিনি হলেন আমার মা। আর পাশাপাশি আমার ভাইবোনেরা, বড় খালা এবং খালুসহ পরিবারের সবার থেকেই অনেক উৎসাহ পেয়েছি সর্বদাই।

অবসরে কি করেন?Prity_1
অবসরের প্রতিটা মুহূর্তই মূল্যবান মনে করি, তাই বলে যে সবসময় রুটিনবাঁধা অবস্থায় কাটাই তা কিন্তু নয়। আমি আড্ডা দিতেও ভীষণ ভালোবাসি; মাঝে মধ্যে রাজশাহীর খুব বিখ্যাত একটা বইয়ের দোকান আছে ‘বইপত্র’ নামে সেখানে আমার সমমনাদের সঙ্গে আড্ডা দেই আর আমার প্রিয় লেখকদের সঙ্গে আড্ডা দেই সময় পেলেই; মূলত বই নিয়েই আলোচনা হয় বেশি। আর আমার বেডরুমেও কয়েক হাজার বইয়ের একটা ক্ষুদে লাইব্রেরী আছে, অবসর পেলেই বই নিয়ে বসি। অথবা বলা ভালো বইয়ের কারনেই অবসর খুঁজে বের করি। পাশাপাশি মাঝে মাঝে ছবি আঁকি বা আম্মুকে গান গেয়ে শোনাই অথবা আমি এবং আম্মু একত্রে গান শুনি আর আড্ডা দেই।

যারা লেখালেখি করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যে অাপনার পরামর্শ কি?

যারা লেখালিখি করতে চায় সেইসব ক্ষুদে বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলব- বিভিন্ন লেখকের লেখা বই পড়ো এবং বিভিন্ন ধরনের বই পড়ো- উপন্যাস, প্রবন্ধ, কিশোর উপন্যাস, ছোটগল্প, বিজ্ঞানের যেকোনো বিষয়, ভ্রমনকাহিনী, আত্মজীবনীসহ যাবতীয় বই। তাছাড়া কোথাও বেড়াতে যেতে পারো, গান শুনতে পারো, জীবনে অভিজ্ঞতারও প্রচুর দরকার লেখালিখির ক্ষেত্রে। মাঝে মধ্যে দুই এক কলম লেখো যেকোন বিষয় নিয়ে, সবচেয়ে ভালো হয় ডায়েরি লেখার অভ্যাস থাকলে। ডায়েরিতে যে শুধুই দিনলিপি লিখতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। মন চাইলে নিজেই কোন কবিতা লেখো,নিজের প্রিয় কোন কবির কবিতার বা গানেরও পঙক্তি তথা যা ভালো লাগছে, যা লিখতে মন চাইছে তাই-ই লেখো। লেখালিখিটাকে নাও নিজের আলাদা একটা জগৎ হিসেবে যেখানের রাজা কেবল তুমিই! তবে অবশ্যই পড়তে হবে প্রচুর, ভালো লেখক হতে চাইলে অবশ্যই ভালো মানের পাঠক হতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?

আমি বড় হয়ে হতে চাই অবশ্যই একজন লেখ,আর পেশাগত জীবনে ভাষাবিজ্ঞান, সাহিত্য এবং আর্কিওলজি নিয়ে উচ্চতর পড়াশুনা এবং গবেষণা করতে চাই। শিল্প ও সাহিত্যকলার প্রতি এবং প্রাচীন মানুষের প্রতি, তাদের সভ্যতা ও সমাজ ব্যাবস্থা এই দুইয়ের প্রতি আমার কৌতুহল এবং উৎসাহ কাজ করে বলেই এই দুটি বিষয়েই পড়তে চাই; উচ্চশিক্ষা নিতে দেশ ও দেশের বাইরে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়য়ে পড়ার ইচ্ছে আছে এই বিষয়গুলিতে। আর শখের কাজ হিসেবে সিনেমা তৈরির ইচ্ছা আছে, সেভাবেই নিজেকে দেখতে চাই একজন শখের নির্মাতা হিসেবে। ইতিমধ্যেই টিম মেম্বার হিসেবে কাজ করেছি ২০১৪ সালে দিল্লীর বিখ্যাত দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার জেতা “পোস্টার” চলচ্চিত্রে।

কাজ করছি “হিমু পরিবহণ” নামের একটি স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনে ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে। সংস্থাটি কাজ করছে হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সার হাসপাতাল তৈরির লক্ষ্যে। আমার সাথে ব্র্যান্ড এম্বাসেডর হিসেবে আরও আছেন সাকিব আল হাসান, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আবদুল্লাহ আবু সাঈদসহ প্রমুখ গুণীজনেরা।

দেশের জন্য বয়ে আনতে চাই সম্মান। বাংলাসাহিত্যকে নিয়ে যেতে চাই বিশ্ব দরবারে। সমাজের অবহেলিত জনগোষ্ঠীর পাশে থাকতে চাই, তাদের জন্য কাজ করতে চাই আজীবন।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/এস.টি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G