মায়ের জন্যই আমি: বারাক ওবামা

প্রকাশঃ জানুয়ারি ১৫, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৪৫ অপরাহ্ণ

obaপেছন ফিরে তাকালে খুবই খাপছাড়া লাগে মা-বাবার হঠাৎ করে বিয়ে করে ফেলাকে! বিয়ে তো হলোই, দেখতে দেখতে একটি শিশুও এল, সর্বসাকল্যে আট পাউন্ড দুই আউন্স! হাতে ও পায়ে ১০টি করে আঙুল, আর বিরামহীন কান্না! আমার জন্মের পরপরই মা-বাবা আলাদা থাকা শুরু করেন, আর আমার তিন বছর বয়সেই তাঁদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। তাই বলা যায়, আমার জীবনের পুরোটাই মায়ের হাতে গড়া।

একটা সময়, হাওয়াইতে আমি মা আর আমার বোন মায়ার সঙ্গে একটা ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে থাকতাম, আমার স্কুল পুনাহো থেকে এক ব্লক দূরে। স্টুডেন্ট হিসেবে মা যে টাকা পেতেন, তা দিয়েই আমাদের তিনজনের কোনো রকমে চলতে হতো।যখন স্কুলের বন্ধুদের বাসায় নিয়ে আসতাম, ওরা মাঝে মাঝে মুখ ফসকে বলে ফেলত, ফ্রিজে এত কম খাবার কেন, ঘরদোরই বা সেভাবে গোছানো হয় না কেন।

মা যখন এসব কথা শুনতেন, আমাকে এক পাশে টেনে এনে বুঝিয়ে দিতেন কীভাবে বাবা ছাড়া দুটো সন্তানকে একা হাতে মানুষ করছেন তিনি, পড়াশোনা করছেন, কীভাবে সংসারটা চালাতে হচ্ছে তাঁকে। এত কিছু করার পর যে কুকি বানানোর সময় তাঁর থাকে না, সে যে কেউ বুঝতে পারে।

আমি বুঝতাম সবই, মায়ের সঙ্গে অনেক গভীর একটা সম্পর্ক ছিল আমার। আমি মায়ের মুখে বাবাকে নিয়ে যা শুনেছিলাম, আমি নিশ্চিত, অন্তত কোনো সাদা মানুষের মুখে আর একজন কালো মানুষের জন্য এত গভীর ভালোবাসার কথা বেশির ভাগ আমেরিকানই কখনো শুনবে না। তাই তারা বিশ্বাসও করতে পারে না সাদা আর কালোর মধ্যে কীভাবে সম্পর্ক তৈরি হতে পারে, সে সম্পর্ক কতখানি নিবিড় হতে পারে। ভালোবাসার বন্ধন কতটা দৃঢ় হলে তা এত প্রতিকূলতার মধ্যেও টিকে থাকতে পারে; না পাওয়ার কষ্ট, হতাশা, গ্লানি-সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠতে পারে।
আমার মা ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে এই বই প্রকাশের কয়েক মাস পূর্বেই আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গিয়েছেন। বেঁচে থাকতে তিনি সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়িয়েছেন। আফ্রিকা, এশিয়ার গরিব নারীদের সেলাই মেশিন বা গরু কিনে দিয়ে সাহায্য করেছেন, শিক্ষার উপকরণ বিতরণ করেছেন।

উঁচু ও নিচু সব শ্রেণীতেই তাঁর অনেক বন্ধু হয়েছিল, অনেক দূর পথে হেঁটেছেন, জ্যোৎস্না উপভোগ করেছেন, দিল্লি আর মারাকেশের বাজারে হইহল্লা করেছেন, রিপোর্ট লিখেছেন, উপন্যাস লিখেছেন, শিশুদের জন্য পোস্টারিং করেছেন এবং স্বপ্ন দেখেছেন। আমরা প্রতিনিয়ত একজন আরেকজনের সঙ্গে ছিলাম।

বইটি লেখার সময় মা আমার ড্রাফটগুলো দেখতেন, ভুল ঠিক করে দিতেন। ক্যানসারকে তিনি হাসিমুখেই বরণ করে নিয়েছিলেন। আমাকে আর আমার বোনকে জীবনের হাল ধরার জন্য ক্রমাগত তাগাদা দিয়ে যেতেন।
আজ আমি আমার মেয়েদের মধ্যে আমার হারানো মাকে খুঁজে পাই। তাদের সারল্যে, উচ্ছ্বাসে, মায়ায়, হাসিতে আমি প্রতিদিনই আমার মাকে ফিরে পাই। আমি বোঝাতে পারব না মায়ের শূন্যতা আমাকে এখনো কতটা কাঁদায়।

আমি শুধু বলব, মা আমার দেখা সবচেয়ে দয়ালুতার মুক্ত মনের মানুষ। আমার মধ্যে আজ যা কিছু ভালো, সবই তাঁকে দেখে শেখা, তাঁর কাছ থেকে পাওয়া। আমার মধ্যে যা সবচেয়ে ভালো, সেটুকু মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া। আমি তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ, চিরঋণী।
সূত্র: প্রথম আলো

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G