লুকিয়ে সিনেমা দেখতে যেতাম

প্রকাশঃ জুন ১৩, ২০১৫ সময়ঃ ৯:১৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৫ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

masud sajanবাংলাদেশের বর্তমান নাটকের মান, দর্শক বিমুখতা, চ্যানেলগুলোর ভুল কৌশল এবং এ থেকে উত্তরণের উপায়সহ ব্যক্তিগত এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার নানা বিষয় নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন এ সময়ের জনপ্রিয় নাট্যকার ও নির্মাতা মাসুদ সেজান।

প্রশ্ন : নাটকের সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন?

উত্তর : এসএসসি পরীক্ষার পর কলেজে প্রবেশের আগেই আমি ছাত্র ইউনিয়নে যোগ দেই। তখন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন তুঙ্গে। এই আন্দোলনের অংশ হিসেবেই পথনাটক রচনা ও পরিচালনা করি। ‘কিসের আলামত’ ‘সংগ্রাম চলবেই’ এবং ‘মাননীয় কুত্তার বাচ্চা’ নামের নাটকগুলো সেই সময় জেলাজুড়েই খুব আলোচিত হয়েছিল। এইচএসসি পরীক্ষার পর ঢাকায় এসে নাট্যকেন্দ্রের সাথে যুক্ত হই। পরবর্তী পর্যায়ে আবৃত্তি চর্চা, আবৃত্তির সংগঠন, মঞ্চনাটক আর পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে বেছে নেওয়ার পর, বলা যায় হঠাৎ করেই টেলিভিশনের জন্য নাটক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি। টেলিফিল্ম ‘তুলারাশি’ দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও আমার তৃতীয় একক নাটক ‘লেট লতিফ’ প্রথম প্রচারিত হয়। এই সময় সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে প্রথম ধারাবাহিক ‘এইম ইন লাইফ’-এর কাজ শুরু করি।

প্রশ্ন : আবৃত্তির কথা বললেন, দীর্ঘদিন ‘আবৃত্তিলোক’ নামের একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন। নাটক নির্মাণের ক্ষেত্রে এই সম্পৃক্ততা কীভাবে কাজে লেগেছে?

উত্তর : নাটক যেহেতু শিল্প মাধ্যম, সেখানে কবিতা কিংবা আবৃত্তি তো শিল্পেরই আদিরূপ। আমার ভালোলাগা কিংবা অসহায় মুহূর্তে আমি এখনো কবিতার কাছেই ফিরে যাই। নাটক রচনা কিংবা নির্মাণ করতে এসে ফাইনালি কবিতাকেই আমার মূলমন্ত্র মনে হয়, আর সাংবাদিকতা আমার লেখালেখির আলসেমিটা দূর করে দিয়েছে। উভয় মাধ্যমই আমাকে পড়তে এবং জানতে সহায়তা করেছে।

প্রশ্ন : কী ধরনের নাটক নির্মাণ করেন?

উত্তর : সেটা দর্শক ভালো বলতে পারবেন, তবে নাটক নিয়ে আমাদের যে প্রচলিত ধারণা, ‘হাসির নাটক’ কিংবা ‘সিরিয়াস নাটক’, আমি এই বিভাজন মানি না। কারণ নাটক যদি জীবনের প্রতিচ্ছবি হয়, নাটক যদি সমাজ বদলের হাতিয়ার হয়, সেই নাটকে শুধুই বিনোদিত করার লক্ষ্য নিয়ে লোক হাসাতে হবে অথবা কঠিন কোনো মেসেজ দেওয়ার জন্য অন্ধকার অন্ধকার দৃশ্য এবং জটিল জটিল সংলাপ দিয়ে সিরিয়াস নাটক নির্মাণ করতে হবে- আমি এটা বিশ্বাস করি না। কারণ, সকাল থেকে রাত অবধি একজন মানুষের জীবনে, একটি সমাজের ঘটনা পরম্পরায় হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। আমার নাটকে জীবনের, সমাজের এই সার্বিক চিত্রটিই তুলে ধরতে চাই, তবে দর্শক মাত্রই জানেন আমার গল্প বলার ধরনটা একটু আলাদা। সংলাপে হিউমার ব্যাপারটা থাকে এবং স্যাটায়ার ফর্মে কাজ করতে পছন্দ করি।

প্রশ্ন : নাটকের মধ্য দিয়ে কী বলতে চান?

উত্তর : প্রথমত একজন মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত ভাবনার জায়গাটাতে আমি নাড়া দিতে চাই, কারণ আমরা সমাজ বলি, রাষ্ট্র বলি- তার একক কিন্তু একজন মানুষ। সেই একজন মানুষ শিক্ষিত হয়েও যখন অশিক্ষিতের মতো আচরণ করে ফেলে তার সমষ্টিতেই পুরো সমাজ কলুষিত হয়। সমাজ রাষ্ট্রকে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করে। আমি মনে করি এখন পর্যন্ত সমাজের বেশির ভাগ মানুষই ভালো, যাঁরা নিজেকে সৎ রেখে সমাজটাকে সুন্দর করে সাজানোর স্বপ্ন দেখেন। কতিপয় লোভী, অসৎ ও খারাপ মানুষের উচ্চকিত অপতৎপরতায় পুরো প্রক্রিয়াটাই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি আমার নাটকের মধ্য দিয়ে অসংখ্য ভালো কিন্তু ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে চাই। বলতে চাই, তোমরা জেগে উঠলে ওই কয়েকজন খারাপ মানুষ পালাবার পথ খুঁজে পাবে না।

প্রশ্ন : বাংলাদেশের নাটকের মান কেমন?

উত্তর :  বাংলাদেশের নাটকের মান অত্যন্ত ভালো এবং বাংলাদেশের নাটকের মান অত্যন্ত খারাপ। আমি বলতে চাচ্ছি এখানে ভালো নাটক যেমন নির্মিত হচ্ছে তেমনি খারাপ নাটকের সংখ্যাও কম নয়। কেন, কীভাবে- এই বিশ্লেষণে যেতে চাইলে অনেক কথা বলতে হবে। যা অনেকের শুনতেও ভালো লাগবে না। শুধু সংক্ষেপে এইটুকু বলতে পারি, বাংলাদেশে মানসম্পন্ন নাট্যকার আছেন, মানসম্পন্ন ডিরেক্টর আছেন, তাদের আগে মান্য করতে হবে। সঠিক মূল্যায়ন ছাড়া মান নির্ধারণের হিসেব-নিকেশ করাটাও বেশ কষ্টসাধ্য। এই মূল্যায়নের জায়গাটিতেই আমাদের ঘাটতি আছে।image_1367

প্রশ্ন : কলকাতার নাটক কেন আমাদের দর্শক বেশি দেখে? আমাদের নাটক কেন দেখছে না?

উত্তর :  আমাদের নাটক দর্শক বেশি দেখতে চায়, কিন্তু চ্যানেলগুলো দেখাচ্ছে না, কারণ আমাদের চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপন খুব পছন্দ করে। কোন ডিরেক্টরের কোন নাটকটি কোন সময়ে প্রচার করা উচিত- এই গবেষণা না করে তাদের গবেষণার অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে কতগুলো বিজ্ঞাপন এজেন্সি তাদের হাতে আছে, কতগুলোকে তাদের হাতে আনতে হবে। নিজেদের মধ্যে ন্যূনতম সমন্বয় করে বিজ্ঞাপনের রেটটাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতেও তারা ব্যর্থ, বিজ্ঞাপন প্রচারের নীতিমালা প্রণয়ন করা তো দূরের কথা এখন তো শুনতে পাচ্ছি হাতেগোনা দুই তিনটি চ্যানেল ছাড়া সবাই নাকি বিজ্ঞাপন এজেন্সির কাছে ধরনা দিচ্ছে, তারা কোন নাটকটি চালাবে, কে কে অভিনয় করবে সেটা নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য। এই সুযোগে এখন এজেন্সিগুলোই নাকি নিজেদের লাভ-লোকসানের হিসাব কষে নাটক কিনতে শুরু করেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এই অবস্থা চলতে থাকলে আমরা কলকাতার প্রতি আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠব। কারণ তারা বিজনেসটাও বোঝে, বিজ্ঞাপন কতটুকু চালাতে হবে সেটাও জানে, দর্শককে কিভাবে সেটের সামনে বসিয়ে রাখতে হবে সেই ব্যাপারেও সচেতন। অর্থাৎ নাটকটাকে দেখানোর মতো করে সম্প্রচার করছে।

প্রশ্ন : দর্শক টানতে হলে কী করা উচিত?

উত্তর :  আমার মনে হয় দর্শক টানতে হলে একটা সার্বিক সমন্বয় দরকার। চ্যানেলের সাথে পরিচালকের, পরিচালকের সাথে প্রযোজকের, প্রযোজকের সাথে শিল্পীর। সর্বোপরি চ্যানেলের মার্কেটিং বিভাগ নয়, প্রোগ্রাম বিভাগকে অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব দিতে হবে। প্রোগ্রাম বিভাগের দায়িত্বে যাঁরা থাকবেন নাটকের শিল্পমান বুঝবেন তাদের নাটক কিনতে হবে এবং অবশ্যই অবশ্যই বিজ্ঞাপনের অত্যাচার থেকে দর্শককে মুক্তি দিতে হবে।

প্রশ্ন: আগামী দিনের পরিকল্পনা কী?

উত্তর :  অনেকদিন ধরেই ভাবছি নাটকের বাইরে গল্প, উপন্যাস লিখব। একটি উপন্যাসের খসড়া মাথায় নিয়ে ঘুরছি, যে কোনো মুহূর্তে লিখতে বসে যাব। এ ছাড়া চলচ্চিত্রের কাহিনী ও চিত্রনাট্য নিয়েও ভাবছি।

প্রশ্ন : চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন কবে?

উত্তর :  চলচ্চিত্র নির্মাণের দিন তারিখ এই মুহূর্তে বলা সম্ভব না হলেও আগামী বছরের মাঝামাঝি সময়ে টার্গেট করছি। এরই মধ্যে যে কয়েজন প্রযোজকের সাথে কথা হয়েছে তাদের চাওয়ার সাথে আমি নিজেকে মেলাতে পারব বলে মনে হচ্ছে না। আমি আমার মতো করে আমার সিনেমা বানাতে চাই। প্রযোজকের আরোপ করা গল্প কিংবা নায়ক-নায়িকার কাস্টিং নিয়ে সিনেমা বানিয়ে দিবে, দেশে এমন পরিচালকের অভাব নেই।

সূত্র-এখানে

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G