সমাধি থেকে উঠে আসা ভ্যাম্পায়ার!

প্রকাশঃ মে ১৭, ২০১৫ সময়ঃ ৮:১৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:০১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম:

vampire-skeleton_1শত শত বছর ধরে মানুষ মৃতদের কবর থেকে উঠে এসে জীবিত মানুষদের হত্যা করার ভয়ে আতঙ্কিত হয়েছে। সেই ১২ শতকের সময় থেকে কোথাও লোকগল্প আর কোথাও সত্য ঘটনা [স্থানীয়দের দাবি] অনুযায়ী পুরো ইউরোপ জুড়ে ত্রাস সৃষ্টি করে গিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। গির্জাগুলো সবসময় বলে এসেছে, অশুভ আত্মারা নরকে যাবার আগে এই পৃথিবীতে তাদের কৃতকর্মের জন্য সাজা ভোগ করবে। কিন্তু কী হবে যদি এই আত্মাগুলোর কোনটি আবার তাদের দেহে ফিরে আসে? পৃথিবীর বুকে হেঁটে বেড়ায় প্রতিশোধ স্পৃহায়? আয়ারল্যান্ডে কি এরকম কিছুই ঘটেছিল?

খ্রিস্টধর্মের আবির্ভাবের অনেক আগে থেকেই আয়ারল্যান্ড রহস্য, লোকগল্প আর জাদুবিদ্যার চর্চার এক উৎকৃষ্ট স্থান ছিল। আর এর ইতিহাস ছিল অন্ধকারে ঢাকা। ২০০৫ সালে পশ্চিম আয়ারল্যান্ডে এক প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চলার সময় যা আবিষ্কৃত হলো, তা আবিষ্কারকদের মেরুদণ্ড দিয়ে ভয়ের শীতল স্রোত বইয়ে দিল নিমিষেই। স্লিগো ও সেইন্ট লুইসের একটি যৌথ দল মধ্যযুগের একজন বিশপের ব্যবহার করা প্রাসাদ নিয়ে কাজ করছিলেন। এই প্রাসাদটি ১৪ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ব্যবহার করা হতো। এরপর ইউরোপজুড়ে প্লেগের ব্যাপক বিস্তৃতিতে অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর পর থেকে এই প্রাসাদটি ব্যবহার করা হয় নি। আয়ারল্যান্ডের রসকমন কাউন্টির কিল্টেসিয়ানের এক প্রত্নতাত্ত্বিক ক্ষেত্রে গবেষকরা তাদের খননকাজ শুরু করেন।

প্রাসাদের নিচের পাথর সরাতে সরাতে বেশ গভীর একটি গর্তের সন্ধান পাওয়া গেল, অনেকটা সমাধির মতো। ভয়াবহ দৃশ্যটি দেখা গেল তখনোই। সেই একটি গর্তেই অসংখ্য চূর্ণ-বিচূর্ণ মানুষের কঙ্কাল স্তূপীকৃত হয়ে আছে। পরে দেখা গেল, সেখানে প্রায় ৩০০০ মৃতদেহ ছিল! এই সমাধিক্ষেত্রের পরিসীমার মাঝেই আরো দুটি সমাধিস্থল পাওয়া গেল। খননকাজ শুরু করার পরই বোঝা গেল এগুলো কোন Vampires-সাধারণ সমাধি নয়। কারণ সেই মৃতদেহগুলোর কোনটিই সেই সময়ের প্রচলিত খ্রিস্টধর্মীয় রীতিতে সমাধিস্থ করা হয়নি। সবগুলো কঙ্কাল উদ্ধার করার পরই বোঝা গেল কেন তাদেরকে এতো ভয়াবহভাবে কবর দেয়া হয়েছিল। এই দুই সমাধিতে প্রাপ্ত একটি মৃতদেহ ছিল কোন মধ্যবয়স্ক মানুষের, আরেকটি ছিল ২০ বছর বয়সী একটি ছেলের। তাদেরকে সমাহিত করা হয়েছিল বেশ অদ্ভুতভাবে। উভয়ের একটি হাত ও একটি পা ভেঙে দেয়া হয়েছিল, দেহ বেঁধে রাখা হয়েছিল একটি মসৃণ গোলাকার পাথরের সাথে। আর দুটি মৃতদেহের মুখেই গুঁজে দেয়া হয়েছিল পাথরের টুকরো।

এটা থেকে বোঝা যায়, যারা এ মৃতদেহগুলোকে সমাধিস্থ করেছিল, তারা এদেরকে ভ্যাম্পায়ার মনে করতো ও এদেরকে এমনভাবে কবর দেয়া হয়েছে যাতে এরা আর কখনো ফিরে আসতে না পারে। শুধু তাই নয়, ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা যায়, এদের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে হয়নি। এদের হাড়ে ধারালো ব্লেড বা এধরণের কিছুর আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। কিন্তু সবশেষে অস্বাভাবিক ঘটনা ছিল অন্য জায়গায়। প্রথমে যে ৩০০০ কঙ্কাল পাওয়া গিয়েছিল, কার্বন ডেটিং এর মাধ্যমে জানা গেল এ কঙ্কালগুলো ৬০০ থেকে ৮০০ সালের। লোকগল্পেও এত আগে ভ্যাম্পায়ারের কাহিনী শোনা যায় নি। কিন্তু এদের অনেকগুলো কঙ্কালকেই এমনভাবে সমাধিস্থ করা হয়েছে যেন তারা ভ্যাম্পায়ার ছিল। আয়ারল্যান্ডের ঐ ছোট গ্রামের অধিবাসীরা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে, যাতে এই কঙ্কালগুলো আর কখনো তাদের সমাধি থেকে বের হয়ে কোন জীবিত মানুষকে হত্যা করতে না পারে। তাই প্রশ্ন থেকেই যায়, আসলেই কি তারা ভ্যাম্পায়ার ছিল?

প্রতিক্ষণ/ এডি/ পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G