সাবিনা ইয়াসমিনের যত কথা
ডেস্ক নিউজ ,প্রতিক্ষণ ডটকম
বাংলাদেশের সংগীত জগতের কিংবদন্তী সাবিনা ইয়াসমিন। ৪০ বছর ধরে গান গাইছেন এ দেশের মানুষের জন্য। তার গানের জনপ্রিয়তা দেশের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে। তার অসংখ্য গান যুগ যুগ ধরে মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। বাংলাদেশের সংগীত জগতের এই সম্রাজ্ঞী এবার মুখোমুখি হয়েছেন। একান্ত আপনজনের মত এই গুনী শিল্পী জানালেন তার জীবনের অনেক কথা।
কেমন আছেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ ভালো আছি।
সংগীত শিল্পী না হলে কি হতেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ শিক্ষক হতাম। স্কুলের ছোট বাচ্চাদের পড়াতে আমার খুব ভালো লাগতো মনে হয়।
আপনার পরিবার সম্পর্কে একটু জানতে চাই।
সাবিনা ইয়াসমিনঃ আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। ওরা তো বড় হয়ে গেছে। মেয়ে ব্যাংকে চাকরি করে আর ছেলে পড়াশোনা করছে ইংল্যান্ডে।
রেডিও, টিভি, চলচ্চিত্র ও মঞ্চ -কোথায় গান গেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য পান?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ পছন্দ একটা আর স্বাচ্ছন্দ্য আরেকটা। কেন বলছি। ছায়াছবির গান রেকর্ডিং এর সময় আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমার ভালো লাগে গান গাইতে। তবে মঞ্চে গান বেশি ভালো লাগে। সরাসরি দর্শকদের অনুভূতি জানা যায়।
আপনার স্বপ্ন কি ছিলো বড় হয়ে শিল্পী হবেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ এটা একটা মজার প্রশ্ন। কারন স্বপ্ন কি ছিলো তা ভাবার আগেই গান গাইতে শুরু করেছি। সুতরাং অন্য কিছু চিন্তা করতে পারিনা। মনে হয় এর জন্যই হয়ত পৃথিবীতে এসেছি।
সংগীত শিল্পীদের মধ্যে কাকে অনুসরণ বা বা আদর্শ বলে মনে করতেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ আমি ছোট বেলায় প্রতিমা ব্যানার্জির মতো গান গাইতে চেষ্টা করতাম। খুব পছন্দ করতাম। আর, লতা, আশা, নির্মলা মিশ্র, গীতা দত্ত এদের গান আমার খুব ভালো লাগতো।
আপনার দেশাত্মবোধক গানগুলি খুবই জনপ্রিয় -এর কারন কি বলে মনে করেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ দেশাত্মবোধক গান আমার খুব ভালো লাগতো। দেশাত্মবোধক গান শুনলেই আমি সব কাজ ফেলে ওখানে ছুটে যেতাম। ৭১ সালে যেটুকু দেখেছি তারপর গান যেন আপনা থেকেই বেরিয়ে আসতো।
একজন ভালো শিল্পী হতে হলে কি কি করা প্রয়োজন বলে আপনি মনে করেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ গ্রামার বলতে গানের ক্ল্যাসিকাল বুঝি, উচ্চাঙ্গ সংগীত। আমি এটা বলবো না যে খুব বেশি পারদর্শী হতে হবে। তবে বেইজটা প্রয়োজন। উচ্চাঙ্গ সংগীত চর্চা না থাকলে সব গান গাওয়া কঠিন। প্রতিদিন রেওয়াজ করা, প্র্যাকটিস করা, গলা সাধা প্রয়োজন। অবশ্যই শুদ্ধ উচ্চরণ এর দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আপনি তো অনেক পুরুস্কার পেয়েছেন। কি কি ধরনের পুরুস্কার পেয়েছেন একটু বলবেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ রাষ্ট্রীয় পুরুস্কারের মধ্যে আছে একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরুস্কার। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরুস্কার পেয়েছি ১১ বার। এছাড়া, বাচসাস ও জহির রায়হান পুরুস্কার।
আপনার নিশ্চয়ই অনেক বড় মাপের শিল্পীদের সামনে গান গাওয়ার অভিজ্ঞতা আছে। দু’একটি অভিজ্ঞতার কথা বলবেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ প্রথমেই বলতে হয় লতাজির কথা। ওনার সংগে আমার আলাপ হয়েছিলো বোম্বেতে। বোম্বেতে একবার গান গাইতে গিয়েছিলাম। তখন আমি হারমোনিয়াম বাজিয়ে সব জায়গায় গান গাইছি। গান গাওয়ার ওখানে অনেকে বসেছিলেন। যেমন, এস ডি বর্মন, অমিতাভ বচ্চন, জয়া ভাদুড়ী, রাজ কুমার আরো অনেকে। হঠাৎ দেখি লতা মঙ্গেশকর ঢুকছেন। তাকে দেখে আমি এতই ভয় পেয়ে গেছি যে হারমোনিয়াম বন্ধ করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলাম। এটা ৭২ সালের কথা। বয়স তখন কম ছিলো। তারপর সবাই আবার জোর করে ধরে বসিয়ে দিলো। ওখানে শচীন দেব আমাকে বল্লেন, আমার দেশের পল্লীর গান শোনাতে। আমি তখন ‘নাইয়ারে নাওয়ের বাদাম তুইলা…’ গানটি গাইলাম। তখন লতা মঙ্গেশকর উঠে এসে আমাকে আশীর্বাদ করলেন। সেই দিনটির কথা আমি জীবনেও ভুলবনা।
আপনিতো আপনার মেয়ের সাথে একটি গানের ক্যাসেট বের করেছিলেন তাইনা?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ হ্যাঁ, প্রতিচ্ছবি নামে একটি ক্যাসেট আমি আর বাঁধন করেছিলাম।
কার গান ভালো লাগে?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ মেহেদী হাসান, রুনা লায়লা এবং শাহনাজ রহমতুল্লাহ।
আপনার জন্মস্থান কোথায়?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ আমি সাতক্ষীরার মেয়ে। জন্ম ৪ঠা সেপ্টেম্বর।
কত বছর ধরে গান করছেন? মোট গানের সংখ্যা কত?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ আমি ৪০ বছর ধরে গান করছি। গানের সংখ্যা ১০-১২ হাজার তো হবেই।
এত গানের মাঝে আপনার প্রিয় গান কোনটি?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ শ্যামল মিত্রের -তুমি কি এমনই করে থাকবে দূরে, যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন ইত্যাদি।
আজকের সাবিনা ইয়াসমিন হওয়ার পেছেনে কার অবদান সবচাইতে বেশি বলে মনে করেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ অবশ্যই আমার মায়ের। একজন মা-ই পারেন তার সন্তানকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে।
আজকাল বিভিন্ন চ্যানেলগুলোতে যে সব গানের প্রতিযোগিতা হচ্ছে, আপনার কি মনে হয় এর থেকে ভালো গায়ক-গায়িকা বেরিয়ে আসছে?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ আসছেতো বটেই। তবে তারা তেমন মনোযোগী না। এত অল্প সময়ে তারা সব পেয়ে যাচ্ছে যা তারা চিন্তাই করতে পারেনি। অর্থের পেছনে ছুটছে। নিজেকে ধরে রাখতে পারছেনা বলে ওরা টিকে থাকতে পারছেনা। সব কিছুরই অধ্যাবসায় দরকার।
বাংলাদেশে আর কোনো সাবিনা বা রুনা তৈরি হয়নি কেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ এটা অনেক কঠিন প্রশ্ন। তবে কনক চাঁপা খুব ভালো গান গায়। আর তোমার মত মা থাকলে ভবিষ্যতে নিশ্চয়ই সাবিনা ও রুনা পাওয়া যাবে। সবচাইতে বড় কথা ছোটবেলায় হাতে খড়ি যাকে বলে তা মজবুত না হলে ভালো শিল্পী পাওয়া কঠিন।
যারা বিদেশে থাকেন তারা তাদের সন্তানদেরকে কি ভাবে ভালো গান শেখাতে পারেন?
সাবিনা ইয়াসমিনঃ প্রথমত গানের স্কুলেতো দিতেই হবে। ওখান থেকে সুর ভালো শিখবে। আর বাংলা গান শোনাতে হবে বেশি বেশি। আর যেটা জরুরী তা হলো শুদ্ধ করে বাংলা শব্দগুলো খেয়াল করা। তাহলে এক সময় অবশ্যই ভালো বাংলা গান গাইতে পারবে।
আপনারা গান শেখান না কেন? তাহলে হয়ত ভালো শিল্পী বেরিয়ে আসতো!
সাবিনা ইয়াসমিনঃ দেশে ফিরলে তোমার মেয়েকে শেখাবো…হা হা হা।
আপানার এত মূল্যবান সময় আমাদেরকে দেবার জন্য কমিউনিটির পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সাবিনা ইয়াসমিনঃ আমার পক্ষ থেকে কমিউনিটির পাঠকদেরকে শুভেচ্ছা। দোয়া করবেন যেন আরও ভালো গান আপনাদের জন্য গাইতে পারি।(তথ্য সূত্রঃ কমিউনিটি)
প্রতিক্ষণ/এডি/মন্ডল