WordPress database error: [Disk full (/tmp/#sql_1df056_0.MAI); waiting for someone to free some space... (errno: 28 "No space left on device")]
SELECT COLUMN_NAME FROM INFORMATION_SCHEMA.COLUMNS WHERE table_name = 'sdsaw42_hsa_plugin' AND column_name = 'hsa_options'


Warning: mysqli_num_fields() expects parameter 1 to be mysqli_result, bool given in /var/www/vhosts/protikhon.com/httpdocs/wp-includes/wp-db.php on line 3547

WordPress database error: [Duplicate column name 'hsa_options']
ALTER TABLE sdsaw42_hsa_plugin ADD hsa_options VARCHAR(2000) NOT NULL DEFAULT ''

সোনালি কাবিন : মনচিত্রের মানচিত্র সোনালি কাবিন : মনচিত্রের মানচিত্র

সোনালি কাবিন : মনচিত্রের মানচিত্র

প্রথম প্রকাশঃ জুলাই ১১, ২০১৭ সময়ঃ ১১:৩৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:১৭ পূর্বাহ্ণ

নির্ঝর আহমেদ প্লাবন

সোনালি কাবিন গ্রন্থের কবিতাগুলোর মনোচিত্রে লুকিয়ে আছে চিরন্তন বাঙালি মানসের চিরঞ্জীব মানচিত্র। বাঙালির জীবনধারার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকরিক দানা বেঁধে স্লোগান তুলেছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায়। মানব জীবনের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো চমৎকারভাবে বাঙময় হয়েছে এই গ্রন্থে । মহীরুহের মতো কালের সাক্ষ্য হয়েছে কবিতাগুলো। সমকালীন ভাবধারাকে চিরকালের মহিমায় ভাস্বর হতে দেখি। কবিতাগুলো পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাবের গভীরে বিহার করতে খুব বেশি বেগ পেতে হয় না, আবার যতবার পড়ি ততবারই নতুনত্বের সন্ধান পাই। এই গ্রন্থে আল মাহমুদ এক অনন্য ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। মনে হচ্ছে তিনি যা দেখেছেন তাই লিখেছেন। এমন অপূর্ব চিত্রকল্পের সমাহার গত পঞ্চাশ বছরে বাংলা কবিতায় আর দেখা যায়নি। কবিতাগুলো পাঠের সময় চোখের সামনে ভেসে উঠে মানুষের মন ও মননের শিরা-উপশিরার স্বাপ্নিক মানচিত্র।

সোনালি কাবিন আসলেই কি সোনালি না তামাটে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ গ্রন্থ ভুক্ত কবিতাগুলোর পরতে পরতে জেগে উঠেছে কৃষকদের জীবন সংগ্রামের অহংবোধ। রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কৃষকদের দেহের চামড়ার একটা রূপ স্থির হযে যায় যেটা আর কখনোই পরিবর্তন হয় না। সব কৃষকের রং যেন এক। তাদের এই রং কে সোনালি বলা যায় না। এই রং তামাটে। তামাটে রংকেই বলা হয়েছে সোনালি। তামাটে রংয়ের মানুষগুলোই সোনালি রংয়ের ধান তুলে আনে, আমাদের চিন্তার অবসান ঘটায়। আর এই জন্যেই ধান মাড়াইয়ের সময় ধানের বাতাস গরম হলেও আল মাহমুদ তাকে ঠান্ডা বলেছেন।

সোনার দিনার থাক আর না থাক এই কাবিন সোনালিই। কাবিন মানে বন্ধন। তাহলে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক সোনালি কাবিনের বন্ধন কার সঙ্গে ? এই কাবিন অস্তিত্বের সঙ্গে নিজের বন্ধন, গ্রামের সঙ্গে মানুষের বন্ধন, সমাজের সঙ্গে নিজের বন্ধন, দেশ ও মাটির সঙ্গে মানুষের বন্ধন, ঐতিহ্যের সঙ্গে নিজের বন্ধন, বাংলাদেশি সংস্কৃতির সঙ্গে নিজের বন্ধন, সর্বোপরি নর-নারীর প্রেম ভালোবাসার চূড়ান্ত রূপ বিয়ের বন্ধন। কেন এতো বন্ধন? যেখানে ছন্দের বাঁধ ভাঙার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে সেখানে এতো বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া কতটা প্রয়োজন ? প্রয়োজন যেমন আইন মানে না তেমনি হৃদয়ও প্রয়োজন মানে না। কিন্তু সোনালি কাবিনে আল মাহমুদ যে বন্ধনগুলো দিয়েছেন সেগুলো না মানলে মনুষ্যত্বকে উপভোগ করা যায় না; মানবতার জয়গানে মুখরিত হওয়া যায় না। মানুষের মানবিক সত্তার পরিপূর্ণ বিকাশের সৃজনশীল প্রকাশ আল মাহমুদের “সোনালি কাবিন” ।

আবহমান বাংলার চিরায়ত ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল “সোনালি কাবিন ”। গ্রামীণ এবং শহুরে সভ্যতার যুগপৎ অনুপ্রবেশ ঘটেছে এ গ্রন্থে। মানবতার সর্বোচ্চ সীমার অহংকার যেমন আছে তেমনি বিপর্যস্ত রূপের হাহাকারও পরিস্ফুট হয়েছে। তিনি নৈসর্গের সঙ্গে মিতালি স্থাপন করে নৈসর্গের নিস্তব্ধতাকে বাঙময় করেছেন এ কাব্যে। প্রেম-নারী যেমন আছে তেমনি এসবকে অতিক্রম করে নতুন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্নিল প্রয়াসও লক্ষ্য করা যায় এ গ্রন্থভুক্ত কবিতায়। কবিতায় বিন্দুকে সিন্ধুতে রূপান্তরের যে প্রয়াস চিরকাল ধরে চলে এসেছে এ গ্রন্থে তা খুব বেশি পরিলক্ষিত হয় না বরং বিন্দুকে বিন্দুতে রেখেই গভীরতায় পৌঁছেছেন এবং সিন্ধুকে সমুদ্রের কল্লোলের মতো উদ্দাম গতিতে জীবনমুখী করে প্রকাশ করেছেন আল মাহমুদ।

তিনি লোক লোকান্তরে ঘুরে গ্রামীণ সভ্যতাকে কালের কলসে ঢুকিয়ে সোনালি কবিনের মূর্ছনায় আধুনিকতার মায়াবী পর্দাকে দুলিয়ে দিয়েছেন তাঁর কাব্যে। ধর্মের নারী এবং নারীর ধর্ম দুটোই পাওয়া যায় তাঁর কবিতায়। আর আসবো না বলে তিনি যেভাবে নিজের অস্তিত্বকে ঘোষণা করেছেন সেটা তাঁর সমসাময়িক অন্য কেউ করতে পারেনি। আল মাহমুদ পঞ্চাশের দশকের হলেও তিনি দশক সীমাকে অতিক্রম করেছেন; কালজ বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে তিনি কালোত্তীর্ণ হয়েছেন। জীবনানন্দ যেমন তিরিশের হয়েও তিরিশের নয়; বর্তমানের – আল মাহমুদ ও পঞ্চাশের হয়েও পঞ্চাশের নন ; চিরকালের। মাটির অতল গভীরে প্রোথিত এ কবির কাব্য শিকড়।

ধ্রুপদী এবং রোমান্টিকতার দারুণ মিশ্রণ তাঁর কাব্য সাধনাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি বিষয় নৈপুণ্য, গ্রমীণ শব্দের প্রয়োগ তাঁর কবিতাকে দিয়েছে নতুন ব্যঞ্জনা। যখন গ্রামে গ্রামে বিদ্যুৎ পৌঁছেনি তখন আল মাহমুদ হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে গ্রামীণ চিত্রকে পাঠকের চিত্তে ঝলমল করে উপস্থাপন করেছেন। কখনও আবার যোগ করেছেন সোডিয়াম আলোর মায়াবী ঝলক। যান্ত্রিক কোলাহলকে তিনি যেমন এড়িয়ে যাননি তেমনি গ্রামীণ পরিবেশে হেঁটে বেড়িয়েছেন শহুরে পোশাক পড়ে। বারবার তাঁর চোখ অতীতাশ্রয়ী হয়েছে এবং গ্রামে ফিরে গিয়েছে। তিনি শুধু গ্রমকেই শহরে আনেন নি শহরকেও গ্রামে নিয়েছেন। গ্রাম থেকে নিয়ে আসা তাঁর মায়ের বিশুদ্ধ অনুতাপময় কান্না শহুরে মানুষদেরও আপ্লুত করে। তাই তাঁর ব্যবহার করা গ্রামীণ শব্দ আর গ্রামীণ থাকেনি আধুনিক হয়ে উঠেছে। ‘খড়ের গম্বুজ’ কবিতায় তিনি যখন বলেন…
“তোমার বাপের
মারফতির টান শুনে বাতাস বেহুুঁশ হয়ে যেতো”

তখন বাপ আর বাবার মধ্যে আমরা গ্রামীণ-শহুরে পার্থক্য দেখি না ।

আল মাহমুদ যেখানে গিয়েছেন সেখানেই গ্রামের বীজ ছড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি নিজেকে খুঁজে পেয়েছেন খড়ের বিচালী রাখা দমবন্ধ হওয়া ঘরে মোল্লা বাড়ির সবচেয়ে রূপসী মেয়েটিকে জাপটে ধরে চুমু খাওয়ার মধ্যে। তিনি কালের রাখাল, কালোত্তীর্ণ রাখাল, প্রেমের রাখাল, কবিতার রাখাল। এ রাখাল কোনো কিছুকেই পরোয়া করে না। চলার উদ্দাম গতিতে শহুরে সভ্যতাকে গ্রামীণ ঐতিহ্যের আলোকে সাজিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি; তাঁর মাঝে ঢুকিয়েছেন বিপ্লবের আমেজ। তাই নারীর বিপদের চেয়ে তাঁর কাছে বেশি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে শস্যের বিপদ। শুধু কি তাই ! এশিয়াতে যারা কর্মজীবী এবং সাম্যবাদের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তাদের কপালে তিনি এঁকে দিয়েছেন বীরের তকমা; উৎসাহ দিয়ে বলেছেন…

‘আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন’

চর্যাপদের হরিণীরা বাসা বেঁধেছে তাঁর কবিতায়। বেহুলা লখিন্দর আশ্রয় গেঁড়েছে তাঁর মানসভূমে। তাঁর পূর্বের বাংলা সাহিত্যের সকল ধারাকে তিনি কবুল কবুল বলে গ্রহণ করে নিয়েছেন এ গ্রন্থে। নিজস্ব বিশ্বাসে তিনি অটল,অবিচল। ইতিহাসের অলিতে গলিতে বিচরণ করে বাংলাদেশি জাতিসত্তার অস্তিত্ব অনুসন্ধান করে তাঁর মহিমান্বিত রূপ প্রকাশ করেছেন এই গ্রন্থের পাতায় পাতায়।
বর্তমান সময়ের সঙ্গে যদি মেলানোর চেষ্টা করি তাহলে দেখবো সোনালি কাবিনের কবিতাগুলো তারই প্রতিনিধিত্ব করছে। আমাদের দেশ নিয়ে যে ষড়যন্ত্র চলছে তা মনে হয় আল মাহমুদ ১৯৭৩ সালেই বুঝতে পেরেছিলেন। তাই মাৎসান্যায়ে তাঁর কখনোই সমর্থন ছিল না। আমাদের বাজার এখন অন্য দেশ নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের সংস্কৃতি এখন অন্য সংস্কৃতির হাতে বন্দি। আমাদের পেছনে শত্রুরা ওঁৎ পেতে আছে। যেকোনো মুহুর্তে স্বাধীন হায়দ্রাবাদের মতো আমাদের বিলুপ্তি ঘটতে পারে। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, সিন্ধু বা ব্যবলিনীয় সভ্যতার মতো আমরাও হারিয়ে যাওয়া সভ্যতার উপকরণ হতে যাচ্ছি। আর তা করছেন আমাদেরই ভিতরকার ঘষেটি বেগম, মীর জাফর এবং আবদুল্লাহ ইবনে উবাইরা। অন্যের সংস্কৃতিকে উপভোগ করেই তারা আনন্দ পাচ্ছেন। আমাদের সকল কলাকেন্দ্র এবং সকল কারুকাজে অস্তিবাদী জিরাপেরা ব্যক্তিগত গলা বাড়িয়েছে। আল মাহমুদ আমাদের ইতিহাসের দিকে প্রত্যাবর্তন করিয়েছেন। তিনি দেখিয়েছেন বর্গিরা কিভাবে আমাদের সকল কিছু কেঁড়ে নিয়েছেল। অতীতে আমাদের পরাজয়ের ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানের মিল দেখে কবি আতঙ্কিত হয়েছেন। তিনি “প্রকৃতি” কবিতায় লিখেছেন…

‘জমির কিনার ঘেঁষে পলাতক মাছের পেছনে
জলডোরা সাপের চলন নি:শব্দে দেখছি চেয়ে ।
বাহুতে আমার
আতঙ্কে লাফিয়ে উঠছে সবুজ ফড়িং’ ।

তাই কবিতা তাঁর কাছে ছেচল্লিশের অসুখী কিশোর হয়েছে এবং আর আসবোনা বলে তিনি মিছিলের প্রথম পতাকা হাতে তুলে নিয়েছেন। কথার ভেতরে কথা গেঁথে দিয়েছেন, পালক ভাঙার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছেন। মগজ বিকিয়ে দিয়ে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা পরিতৃপ্ত। আল মাহমুদ বলেছেন, এসব বুদ্ধিজীবীদের বিবেক পোকায় ধরেছে। অপসংস্কৃৃতির এই বেড়াজালের বিরুদ্ধে তাঁর কলম উচ্চকিত। আত্মায় যখন দ্রোহী কবিতা কাজ করে তখন অন্যায়কে আর সহ্য করা যায় না। কবি সোনালি কাবিন কবিতার ৭ নাম্বার সনেটে নিজের প্রিয়তমাকে বলেছেন …
তোমার দুধের বাটি খেয়ে যাবে সোনার মেকুর
না দেখার ভান করে কত কাল দেখবে চঞ্চলা !

দেহজ প্রেমের অসংখ্য অনুপম দৃশ্য দেখা যায় এ গ্রন্থে। রূপকে ধারণ করেই অরূপের সাধনা করতে হয়। সেই রূপের সাধনায় একটু বেশিই মগ্ন হয়েছেন কবি। কখনো নারীর স্তনকে কাঞ্জনজঙ্গার সঙ্গে তুলনা করে আবার কখনো ফলের আবেগে ঝুলে থাকার সঙ্গে তুলনা করে তৃপ্ত হওয়ার চেষ্টা করেছেন । গ্রামীণ আবহে নারীর যে চিরন্তন রূপ সে রূপের কামজ প্রকাশ অবলীলায় বর্ণিত হয়েছে এ গ্রন্থে । কোনো প্রকার ছলনার আশ্রয় নেননি কবি। নিজেকে প্রকাশ করেছেন সরল অথচ উদাত্ত চিত্তের অধিকারী হিসেবে। তাই দমবন্ধ পাটের ঘরে মোল্লা বাড়ির সবচেয়ে রূপসী মেয়েটিকে ঝাপটে ধরে চুমু খাওয়া যে তার মুখ; এ তথ্য স্বীকার করতে তাঁর দ্বিধা নেই। কোনো প্রকার ছলনার আশ্রয় নিতে তিনি নারাজ। প্রিয়তমার উষ্ণ আতাফল তাঁকে আকর্ষণ করে এবং তাঁর জন্য তিনি সব কিছু উজাড় করে দিতে পারেন। কুন্তল এলিয়ে দিয়ে নারীর ক্রন্দন করার দৃশ্যও তাকে আপ্লুত করে। তাই দেহের পরিবর্তে দেহ দিতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। তিনি বারবার ছোটবেলার প্রেমে ফিরে যেতে চেয়েছেন। মক্তবের মেয়ে আয়েশা অক্তারকে যেমন ভুলতে পারেননি তেমনি গরীব অসতী মেয়েকে শেমিজ খুলে দাঁড়ানো অবস্থায় পাওয়ার আকুতিও কমেনি। এমনকি দেহের মধ্যেই তিনি পথের নির্দেশ খুঁজেছেন। দেহের মানচিত্রই তার মনে ঝংকার তুলেছে। দেহকে বাদ দিয়ে শুধু মনের সন্ধান তিনি করেন নি। বাংলার যুবক কৃষকদের প্রাণের দাবিকে তিনি প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতিনিধি হয়ে। অসহায় এসব যুবকদের কাছে দেন মোহর দেয়ার মতো দিনার না থাকলেও ভালোবাসার অভাব নেই এমনকি নারীকে তৃপ্ত করার মতো শক্তিও প্রবল। তাই মানিনীকে হাত বেয়ে উঠে আসতে বলেছেন কবি। প্রিয়তমা যদি আঁচল বিছিয়ে তার শবদেহ ধারণ করার প্রতিশ্রুতি দেয় তাহলে তিনি আমাদের ঐতিহ্য ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে গিয়ে মৃত্যু মুখে ঝাঁপ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করবেন না। তিনি তাঁর প্রিয়তমাকে বলেছেন, পালক উদোম করে উষ্ণ অঙ্গের আরাম দিতে। এক্ষত্রে কক্কার শব্দ, কপিল এবং টোটেমে বিশ্বাসের উল্লেখ করে তিনি প্রচলিত কুসংস্কারের প্রতিও তাঁর সমর্থন জানিয়েছেন। এরপর দুজনে ঘূর্ণমান রক্তের ধাঁধায় ডুবে যেতে চেয়েছেন। আমাদের প্রাচীন শবরী মেয়েরা গুঞ্জা ফুলের মালা পরে যেমন নিজেকে আকর্ষণীয় করতো তেমনি তিনি তার প্রিয়তমাকে প্রাকৃতিক সাজে সেজে আসতে বলেছেন। তিনি অভিসারিকাকে বলেছেন, নিষাদ যেমন শিকারের সময় পক্ষিণীর গোত্র ভুল করে না তিনিও তেমনি তার প্রিয়তমাকে চিনতে ভুল করবেন না। তিনি তাঁর মানিনীকে নিয়ে নব নব কথার কূজনে মেতে থাকেবেন। তিনি তার কাতরাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন কিভাবে আমাদের ঐতিহ্য অন্যরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে এবং তিনি তাঁর চঞ্চলা প্রিয়তমাকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার করতে চেয়েছেন। যে প্রিয়তমার জন্য তিনি সর্বস্ব ত্যাগ করতে পারেন তাকে নিয়ে তিনি বর্গিদের ঠেকাতে চেয়েছেন। বিজয় ছিনিয়ে এনে শস্যের সপক্ষে থেকেই আন্তরিক রতির দরদে আবারো প্রিয়তমাকে সিক্ত করতে চেয়েছেন। তার ভালোবাসা এতই প্রবল যে নদীর ভাঙনের সঙ্গে প্রিয়তমা যেন তাকে ছেড়ে চলে না যায় এজন্য প্রিয়তমার উদ্দেশ্যে তার প্রত্যয়দৃপ্ত প্রশ্ন …

‘ঝড়ের কসম খেয়ে বল নারী, বল তুমি কার ‘?

হিন্দু, মুসলিম ও সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্যের পাশাপাশি প্রয়োগের ক্ষেত্রে সোনালি কাবিন এক অনন্য গ্রন্থ। এখানে কোনো বিশ্বাসের প্রতি কটাক্ষ করা হয়নি বরং সকল বিশ্বাসের মাহাত্ম ঘোষণা করা হয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ধর্মে বর্ণিত কিছু কিছু ঘটনার চমৎকার প্রয়োগ উভয় ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যেমন সখ্যতা বাড়াবে তেমনি উভয়ে উভয়কে জানতে পারবে। হিন্দু দেব-দেবী ও হিন্দু ব্যক্তির নাম যেমন এসেছে তেমনি এসেছে মুসলিম নাম ও মুসলিম সংস্কৃৃতি। পুনজন্মান্তরবাদে বিশ্বাস হিন্দু ধর্মের অপরিহার্য অঙ্গ। আল মাহমুদ মুসলমান হয়েও সেটিকে অস্বীকার করেননি বরং “জাতিস্মর”নামে একটি কবিতা লিখে তার সমর্থন জানিয়েছেন। অবার বৃষ্টির দেবতা বরুণকে যেমন দেখতে পাই তেমনি বেহুলা-লখিন্দর ও মনসামঙ্গল এমনকি মুকন্দরাম ও চন্ডীমন্ডলের উপস্থিতিও আমাদের আলেড়িত করে। আমরা হিন্দু ধর্ম নিয়ে ভাবতে শিখি। আমরা জানতে পারি কিভাবে বেহুলা-লখিন্দরের লোহার বাসরে সাপ ঢুকে লখিন্দরকে দংশন করে, একইভাবে জানতে পারি মুকুন্দরাম কিভাবে তালের পাতায় তার মঙ্গল কাব্য রচনা করেছিলেন। হিন্দু ধর্মের প্রতি তার ভালোবাসা এতই প্রবল যে তিনি হিন্দু ধর্মমতে বায়ুর দেবতা বরুণকে “আঘ্রাণে” কবিতায় প্রশ্ন করেছেন …

‘হে বায়ু বরুণ, হে পর্জন্য দেবতা
তোমাদের অবিরল বর্ষণে ঘর্ষণে
যখন পর্বত নড়ে, পৃথিবীর চামড়া খসে যায়
তবু কেন রমণীর নুন, কাম, কুয়াশায়
প্রাকৃতিক গন্ধ লেগে থাকে ?
হে বরুণ বৃষ্টির দেবতা’ !

কৈবত্যপাড়ার নলিনীদের কাহিনী যেমন আছে তেমনি আছে সমুদ্র পাড়ের জলদাসদের বর্ণনা। শুধু কি তাই, সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিও তিনি এই দুই ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছেন। দুই ধর্মই যখন পরকালের কথা বেশি বলে তখন সমাজতন্ত্র ইহকালের কথাই বলে। দুনিয়ায় যা আছে তাকে পরিপূর্ণ উপভোগে বিশ্বাসী সমাজতান্ত্রিকরা। এজন্য পাপ পূণ্য তাদের বিবেচ্য নয়। নগদ লাভের জন্য তারা উন্মুখ। পরকালের প্রতি তাদের কোনো মোহ নেই, বিশ্বাস নেই। সবার মাঝে সমান অধিকার বণ্টন করাই তাদের উদ্দেশ্য। তাই হিয়েনসাঙের দেশে শান্তি নামার বর্ণনা দিয়েছেন তিনি এবং এশিয়ায় যারা সাম্যবাদের দাওয়াত দেয় তাদেরকে তিনি বীরের উপাধি দিয়েছেন। সমাজতন্ত্র যেহেতু পরকালে বিশ্বাস করে না; তাই তারা মনে করে মৃত্যুর পর কবরের পরে ঘাস ছাড়া আর কিছু নেই। আল মাহমুদের ভাষায় …
‘মরণের পরে শুধু ফিরে আসে কবরের ঘাস
যতক্ষণ ধরো এই তাম্রবর্ণ অঙ্গের গড়ন
তারপর কিছু নেই, তারপর হাসে ইতিহাস’ ।
(সোনালি কাবিন – ৪)

কিন্তু আল মাহমুদের রক্তে সমাজতন্ত্র ছিল না। তখন তিনি তা বুঝতে পারেননি। যদিও তিনি এই গ্রন্থ রচনার সময় সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী ছিলেন তবুও মনের অজান্তেই তিনি ইসলামের কথাই বলে ফেলেছেন। তিনি বলেছেন “আমাদের ধর্ম হোক ফসলের সুষম বণ্টন ”। সম বণ্টন হল সমাজতন্ত্র আর সুষম বণ্টন হল ইসলাম। সমাজতন্ত্রের গুণগান গাইতে গিয়ে তিনি ইসলামেরই গুণগান গেয়েছেন । এমনকি “সোনালি কাবিন” নামক কবিতার ১৪ টি সনেট যেগুলোকে ফ্রয়েডিয় দর্শন ও মার্কসবাদের বাংলা ভার্সন বলা হয় সেখানেও প্রথম সনেটেই তিনি ইসলামিক ঐতিহ্যের রূপায়ণ ঘটিযেছেন। তিনি লিখেছেন…
পৌরুষ আবৃত করে জলপাইয়ের পাতাও থাকবে না ;
তুমি যদি খাও তবে আমাকেও দিও সেই ফল
আদম ও হাওয়া (আ)কে সৃষ্টির পর জলপাইয়ের পাতা দ্বারা আবৃত করা হয়েছিল।

আল মাহমুদ তার প্রিয়তমাকে সেই কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে পৌরুষত্বের অহংকার দেখিয়েছেন। শুধু কি তাই, কোরানের আয়াত সরাসরি প্রয়োগ করেছেন তিনি তার কবিতায় …

‘বৈঠকখানা থেকে আব্বা
একবার আমাকে দেখে নিয়ে মুখ নিচু করে পড়তে থাকবেন ,
ফাবি আইয়ে আলা ই-রাব্বিকুমা তুকাজ্বিবান।
(প্রত্যাবর্তনের লজ্জা )’
প্রত্যেক মুসলমানের ঘরে ঘরে সকাল বেলা কোরআন পড়ার এক চমৎকার চিত্রকল্প এটি। পুরো কাব্য গ্রন্থের বাঁকে বাঁকে মুসলিম ঐতিহ্যের মুর্ছনা। এই গ্রন্থের কিছু কবিতার ভাব ও বিন্যসের নির্মিতিও কোরআন থেকে নেয়া। আল কোরআনের ৩০তম পারার সূরা “আত্ তীন” এবং “সোনালি কাবিন” কবিতার ১৪ নাম্বার সনেট একই রকম ।
সূরা আত্ তীনের প্রথম কিছু আয়াতের বাংলা অনুবাদ …
দোহাই তীন ও যাইতুনের
দোহায় সিনাই পর্বতের
দোহাই ঐ শান্তিপূর্ণ শহর মক্কার
নিশ্চয় আমি মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর কাঠামোতে পয়দা করেছি
আবার তাকে সবচেয়ে নিচুদরের চেয়েও নিচে নামিয়ে দিয়েছি
সোনালি কাবিনের ১৪ নাম্বার সনেট…
বৃষ্টির দোহাই বিবি, তিলবর্ণ ধানের দোহাই
দোহাই মাছ মাংশ দুগ্ধবতী হালাল পশুর,
লাঙল জোয়াল কাস্তে বায়ুভরা পালের দোহাই
হৃদয়ের ধর্ম নিয়ে কোন কবি করে না কসুর।
কথার খেলাপ করে আমি যদি জবান নাপাক

এর আগে যতবার তিনি নারী দেহ সম্ভোগের বর্ণনা দিয়েছেন ততবারই পাঠক মনে করেছিল সেটা ফ্রয়েডিয় দর্শন, ১৪ নাম্বার সনেটে এসে তিনি সকল চিন্তার অবসান ঘটিয়েছেন। তার বৈধতা দিয়েছেন কারণ তিনি ইসলামিক পদ্ধতিতে হালাল করা স্ত্রীর গতরে তার চুম্বন রাশি পৌঁছে দিতে চেয়েছেন। আর ইসলাম বলেছে, স্ত্রী তোমাদের জন্য শস্য ক্ষেত্র, তোমরা ইচ্ছেমত সেখানে প্রবেশ কর। মুসলিম সমাজে বিয়ের সংস্কৃতিতে যেমন কবুল বলতে হয়; আল মাহমুদ সোনালি কাবিনে তাই করেছেন ।

সোনালি কাবিনে গ্রামীণ মানুষের ছলাকলা যেমন আছে তেমনি আছে নদী ভাঙনের জীবন্ত বর্ণনা । নদী যখন ভাঙতে ভাঙতে বাড়ির কাছে চলে আসে তখন বসবাসকারীদের মানসিক আবস্থার চমৎকার বর্ণনা দিয়েছেন কবি। ভাঙনশীল এলাকার মানুষ সারাক্ষণ চর পড়ার খবর রাখতে উদগ্রীব হয়। কিন্তু তাদের কাঙ্খিত সংবাদ কখনো আসে না বরং নতুন এলাকা ধ্বসে পড়ার সংবাদ তারা পায়। আবার ঘর বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হলে স্বামীহারা নারীর স্বামীর কবরে গিয়ে অভিযোগহীন কান্নার যে বর্ণনা কবি দিয়েছেন তাতে পাঠক মাত্রই শোকাকুল হতে বাধ্য …
‘যেদিন নদী এসে আমাদের বাড়িটাকে ধরলো
সেদিনের কথা আমার চোখের উপর স্থির হয়ে আছে ।
বাক্সপেটরা থালা ঘটিবাটি নিয়ে আমরা
গাঁয়ের পেছনে বাপের কবরে গিয়ে দাঁড়ালাম ।
জায়গাটা ছিল উঁচু আর নিরাপদ। দেখতে
অনেকটা চরের মতোই। মা সেখানে বসে
হাঁপাতে লাগলেন। কাঁদলেন এমনভাবে যে
অভিযোগহীণ এমন রোদন ধ্বনি বহুকাল শুনিনি আমি।
( চোখ যখন অতীতাশ্রয়ী হয় )

এ রকম ভাঙনশীল এলাকায় মধ্যরাতে যখন সবকিছু নদী ভেঙে নিয়ে যায় তখন প্রিয়তম তার সঙ্গিনীকে যেমন তালাস করে তেমনি ভবিষ্যতের চিন্তায় অধীর হয়। তাদের জীবনে নেমে আসে অকুল অন্ধকার। আল মাহমুদ এসব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন এবং ভাঙনশীল এলাকার মানুষদের দু:খে আপ্লুত হয়েছেন। ফসলের পর ফসলের মাঠ যখন নদী গর্বে বিলীন হয়ে যায় তখন কৃষকের চিন্তার অন্ত থাকে না আর বাতাসের ফেনাও যেন তখন মুছে যায়। কবি লিখেছেন …
মেঘনার জলের কামড়ে
কাঁপতে থাকে ফসলের আদিগন্ত সবুজ চিৎকার ।
ভাসে ঘর, ঘড়া-কলসী, গরুর গোয়াল
বুবুর দেগের মতো ডুবে যায় ফুল তোলা পুরনো বালিশ।
বাসস্থান অত:পর অবশিষ্ট কিছুই থাকে না
জলপ্রিয় পাখিগুলো উড়ে উড়ে ঠোঁট থেকে মুছে ফেলে বাতাসের ফেনা।
( বাতাসের ফেনা )

এমন অপূর্ব চিত্রকল্প তৈরি করা আল মাহমুদকেই মানায় কারণ তিনি এসবের প্রত্যক্ষদর্শী ; সময়ের সাক্ষী ।
আজ বিশ্বব্যাপী চলছে যুদ্ধের তান্ডবলীলা। আল মাহমুদ অনেক যুদ্ধ দেখেছেন এবং অনেক যুদ্ধ সম্পর্কে জানতেন। তিনি বুঝেছেন যুদ্ধ কখনোই শান্তি বয়ে আনতে পারে না। যুদ্ধে ক্ষতিই বেশি হয়। বিজিতদের যেমন ক্ষতি হয় তেমনি বিজয়ীদেরও ক্ষতি হয়। জয় পরাজয় ভিন্নকথা যুদ্ধের তান্ডবতা তিনি পছন্দ করতে পারেন নি। তাই যুদ্ধে জয়ী হলেও তার পক্ষে পুরষ্কার নেয়া সম্ভব হয়নি। শিশুর নি:স্পৃহ দেহ, ধর্ষিতার ছিন্ন-ভিন্ন শাড়ি দেখে স্তব্ধতার মধ্যে তার ঠোঁট নড়েছে কিন্তু কোনো শব্দ বের হয় নি। তাঁর মুখর মুখ মূক হয়ে গিয়েছিল। তাই ভিয়েতনামে যখন বোমা পড়ছে আমরা তাকে প্রতিবাদ করতে দেখি। বর্তমান বিশ্বে ইহুদি এবং মার্কিনীরা সব জায়গাতে যুদ্ধ লাগিয়ে রেখেছে। আল মাহমুদ বলেছেন পৃথিবীর শান্তির প্রতিক সকল সাদা কবুতরকে ইহুদি মেয়েরা রেঁধে মার্কিন জাহাজে পাঠিযেছে। কারণ পৃথিবীর শান্তি নষ্ট করার জন্য এরাই যথেষ্ট।
আল মাহমুদের সোনালি কাবিনের অন্তর্গত প্রত্যেকটা কবিতা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ভিতরে এক একটা জীবন্ত চিত্রকল্প তৈরি হয়। মনে হয় ঘটনাটি এখনি আমার চোখের সামনে ঘটছে। আমাদের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা চোখটি তখন সজাগ হয়ে উঠে এবং আমাদের অন্তরভেদি অবলোকনকে দৃশ্যায়িত ও জাগরুক করে। আমাদের দিব্য দৃষ্টি খুলে যায়। আমরা দেখতে পারি আমাদের অতীত , বর্তমান ভবিষ্যৎ। নর-নারীর প্রেমের দৃশ্য যেমন অবলোকন করি তেমনি অবলোকন করি বর্গিদের আক্রমণ আর নদী ভাঙনে পালিয়ে যাওয়া মানুষের মিছিল। বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘরে সুতনড়ি সাপের অনুপ্রবেশ যেমন দেখি তেমনি দেখি আমাদের সংস্কৃতি ধ্বংসের জন্য জলডোরা সাপের মতন কারা আমাদের পিছু নিয়েছে। ইহুদি-মার্কিনীদের কুচক্র যেমন মনের আঙিনায় দেখতে পাই তেমনি দেখতে পাই ভিয়েতনামে বোমা পড়ার দৃশ্য। গ্রামীণ ঐতিহ্য আর শহুরে ঐতিহ্য যেমন বাঙময় হয় তেমনি ফুটে উঠে ভালোবাসা-ভালোলাগার স্মৃতিময় চিত্র। সাহসের পতন যেমন দেখি তেমনি দেখি পৌরুষত্বের অহংকার। সর্বোপরি মনের যে চিত্র তা চমৎকারভাবে চিত্রায়িত হয়েছে এ গ্রন্থে। গ্রামীণ মানুষের মনের গহীণে লুকিয়ে থাকা আবেগ, উৎসাহ, উদ্দীপনাও মুখরিত হতে দেখি এ গ্রন্থের বাঁকে বাঁকে। আবহমান বাংলার গ্রামীণ মানুষের চিরায়ত জীবন-যাত্রার প্রামাণ্য দলিল যেমন এ গ্রন্থ তেমনি এসব মানুষের মন ও মননের গতি- প্রকৃতির চলমান মানচিত্র এটি। অর্থাৎ “সোনালি কাবিন” গ্রন্থে আল মাহমুদ মানুষের মনচিত্রের এক পুংখানুপুংখ মানচিত্র অংকন করেছেন যা মানুষের চিরায়ত বৈশিষ্ট্যকে প্রতিফলিত করে বারবার।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G