রাজীব মীরের মনের ডাক্তার

প্রকাশঃ অক্টোবর ১২, ২০১৫ সময়ঃ ৪:৪৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:৫২ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

razibজগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাজীব মীর তার বিশেষ মনের ডাক্তার খুঁজে পেয়েছেন আর তিনি তার মনের ডাক্তারকে নিয়ে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। পাঠকের জন্য রাজীব মীরের লেখাটা হুবুহু তুলে দেয়া হল।

সকাল সকাল ক্লাশ । বেশ জমজমাট একটা ক্লাশ নিলাম । বের হতেই যাদের সাথে আমার কোনও ক্লাশ নেই ,তাদের আবদারে আড্ডা দিতে হলো।আবার ক্লাশ ,হুলস্থুল আনন্দ ও জ্ঞান সচেতনতা শেষে বাইরে এসে রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম।অনেক জ্যাম দেখে রিক্সা থেকে নেমে শাঁখারি বাজারের পুজামন্ডপ দেখতে আর হাঁটতে কখন যে টিএসসি এসে পড়লাম, আশ্চর্য। ক্লাশ যেদিন মনোগ্রাহী হয়, আমার মন উড়তে থাকে,রাজা বাদশাহ হয়ে যাই।সেই সময কেউ ভিক্ষা চাইলে পকেটে ৫ হাজার থাকলেও দিয়ে দেই, রেকর্ড আছে । একবার আমার এক শিক্ষার্থী নওশীন আমাকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের আলোর স্কুলে ক্লাশ নিতে নিয়ে যায়।কিন্তু ক্লাশ নিতে যাওয়ার পর যে কথা শুনায়,শুনে মাথায় চড়ক গাছ। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যার তাদের কাছে গল্প করেন যে আগে এরকম শিক্ষক ছিলেন যাদের ক্লাশ শিক্ষার্থীরা মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন ।এখন আর সেরকম শিক্ষক নেই।আমার প্রিয় ছাত্রী চ্যালেঞ্জ দিযে আমার নাম বলে স্যারের কাছ থেকে আমার জন্য ক্লাশ বরাদ্দ করেছেন। শুনে আমি দুইবার বাথরুমে যাই কিন্তু ক্লাশ নেয়ার পর থেকে শুধু রেসপন্স শুনতে শুনতে তিনদিন আর আনন্দে ঘুমাই নাই ,এগুলো আমার ব্যক্তিগত চাওয়া এবং পাওয়া্ ।বাইরে তাই বলতে হয না ,বলি না ।অন্য কিছু চাইও না। সে যা হোক ।

টি এসসিতে এসে পুদিনা পাতা লেবু আর মাল্টা দিয়ে শান্তিতে বসে আয়েশ করে চা খাচ্ছি আর মাইকে শুনছি যে কেউ ডাকছেন। মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষ্যে ঢা. বি. এডুকেশনাল এন্ড কাউন্সেলিং সাইকলজি বিভাগের উদ্যোগে মনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে, আসুন।ভীড় দেখে আরও উৎসাহ হয়ে জানলাম যে নানা টেস্ট আছে । নামমাত্র টাকায় দুটো টেস্টে করার জন্য প্রস্তুতি নিলাম। সামিয়ানার নিচে বসে প্রথমে দুশ্চিন্তার টেস্ট করলাম । একটি কাগজে কিছু প্রশ্নের জবার টিক দিলাম,যোগ করে বলা হলো আপনার নম্বর ৫৬। এটা মডারেট ,কোনও সমস্যা নেই্ । কয়েকদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে আছি। কেউ বলে এ্যারেস্ট হয়ে যাবো,কেউ বলে যে কোনও উসিলায় এমনকি চাকরিও চলে যেতে পারে খুব দুশ্চিন্তায় ছিলাম,কেটে গেলো্ । এরপর যা ঘটলো অভাবনীয়।

একটি ছেলে এসে বললো একটু অপেক্ষা করুন ,করলাম। মনের মধ্যে বাসনা পুষে রাখলাম একজন এমন কোনও কেউ আসলে হতো না যে আমার ব্যক্তিত্ত্ব পরীক্ষাটা করবে।মেঘ না চাইতে রোদ ,ঝকঝকে আলো। সংগঠকদের একজন একটি মিষ্টি কাউন্সিলরকে বললেন যে ওনাকে দেখো্। সে খুব একটা পাত্তা দিলো না,আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে এগিয়ে আসলো ,বললো চলেন।একটু দূরেই চোখের সামনে চোখের আড়াল হয়ে সে তার নির্দেশনানুযায়ী কার্যক্রম শুরু করলো্ । সে কোনও টেস্ট না দিযে আমার একটা ২০ মিনিটের ক্লাশ নিলো । চোখে মুখে তার অনাস্থা যে আমি কিছু বুঝি নাই । আমি বিষয়টা তাকে আমার মত উদিাহরণ দিয়ে পাল্টা বুঝাতে গিয়ে কিছুটা মুগ্ধ করতে সক্ষম হলাম,কিন্তু সে কোনও ভাবান্তর করলো না্ ।জিজ্ঞেস করলো আপনি কেন এসেছেন । ইশারা ভাষায় বুঝালাম,বুঝলো ।

কিন্তু ব্যক্ত্বিত্ব পরিমাপের পদ্ধতি কীভাবে করলেন বলছি…এটার নাম হলো ট্রানজেকশনাল এনালাইসিস ।এরিক বার্ন হলো এর উদ্ভাবক। ইগো গ্রাম এর মাধ্যমে এ পরীক্ষা করা হযে থাকে।

মানুষের ব্যক্তিত্বের তিনটা স্তর থাকে।প্যারেন্ট ,এডাল্ট,চাইল্ড।
প্যারেন্ট হলো দুই পর্য়াযে বিভক্ত।
এক. ক্রিটিকাল প্যারেন্ট–ধরেন আপনার সন্তান পরীক্ষায় ৭০ নম্বর পেলো । কেন ১০০ পেলো না আপনি কঠোর অনুশাসন করলেন্।
দুই- নারচারিং প্যারেন্ট–ধরেন বাচ্চাকে বললেন সমস্যা নাই,সামনে তুমি অনেক ভালো করার চেষ্টা করো্।
এবার চাইল্ড স্তর । চাইল্ড স্তর আবার দুইভাগে বিভক্ত।এডাপ্টেড চাইল্ড আর ফ্রি চাইল্ড।
এডাপ্টেড চাইল্ড দুই ধরনের ।
কমপ্ল্যায়েন্ট চাইল্ড– কাল আমার পরীক্ষা । বন্ধু আমার কাছ থেকে শিট চাইলো,নিয়ে যাবে। কষ্ট পাবো,বন্ধুকে কিছু বলতেও পারবো না ।দিয়ে দেব।
রিবেলিয়াস চাইল্ড– কাল আমার পরীক্ষা । বন্ধু আমার কাছ থেকে শিট চাইলো,নিয়ে যাবে। আমার কাছে থাকলে আমি আরও ভালো করে লিখতে পারতোম। বন্ধুর কথা ভেবে দিলাম না,রেগে গিয়ে বলা তুই কেন আগে পড়িস নাই।দিব না ।
ফ্রি চাইল্ড হলো আপনার মন মুক্ত শিশুর মতো, যা মন চায় তাই করা্ । আপনি টিচার,আপনার ছাত্ররা বললো স্যার বাইরে কি সুন্দর বৃষ্টি।আপনি ওদের সাথে ভিজতে নেমে গেলেন,আপনার অবস্থান ভাবলেন না।
এবার আসি এডাল্ট স্তর বিষয়ে। এটা একটা প্রসেসর হিসেবে কাজ করে।এটা হলো যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আপনার মধ্যে বিপরীতভাবনা ও মনের ভাবনার সমন্বয করার স্তর । কাল সকালে পরীক্ষা আছে । বন্ধু বাসায় এসছে বেড়াতে।এখন ভাববো বন্ধুর সাথে আড্ডা দিলে ভালো হবে নাকি খারাপ হব্। এখানে র‌্যাশনালি রিয়েল সিচুয়েশন টা বোঝা যায়।

এসব বুঝানোর পর দুইটা ডায়াগ্রাম আঁকা হবে। একটা কারেন্ট ইগো গ্রাম আর একটা এক্সপেকটেড ইগো গ্রাম।
আমি আমার বর্তমান অবস্থান বললাম,সে গ্রাফ আঁকলো ।
আমি পরে রদবদল করে কোনটা কোন জায়গায় থাকলে আমার শান্তি হয় দেখালাম্ । দুটোই ১০০ নম্বরে গণণা করা হলো। আমার বর্তমান অবস্থান আর প্রত্যাশিত অবস্থানের খুব একটা ফাঁরাক নেই।আমার ব্যক্ত্বিত্ব খুব ভালো।
মুশকিলে পড়লাম । বললাম আমার তো চাইল্ডিশ অংশে বেশি নম্বর ,সে বললো এটা খুব ভালো। আপনি ভালো আছেন ।
বললাম ছবি তুলতে চাই আপনার সাথে,ব্যক্ত্বিত্ব কমে যাবে না তো !
সুন্দর করে হাসলো্, বুঝলাম সে নারচারিং প্যারেন্ট অবস্থায় আছে।কথামত কাজও হলো ।
মনোবিজ্ঞানী ফ্রয়েড তখন আমাকে দেখে হাসতে হাসতে খুন।ভাগ্যিস ইড ইগো সুপার ইগো জানতিস !
রাত ১২ টায় ইন বক্সে ছবি পাইলাম। আমি পাইলাম, মনের ডাক্তার পাইলাম।
আমি এখন আরও ভালো আছি । হা হা হা…
!

বি:দ্র: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগ কি এ ধরনের কাজে অগ্রণী হতে পারে না !

প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G