একদা হুতোম প্যাঁচার খোঁজে

প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট ২, ২০১৬ সময়ঃ ৬:১৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:১৬ অপরাহ্ণ

রাকিব হাসান:

6256875889_2fe36ae78b

সুনসান নিরবতা। ঝিরি ঝিরি শ্রাবণীয় বাতাস। থেমে থেমে দমকা হাওয়া। কেমন যেন বুকের ভেতর হিম শীতল অনুভূতি। হঠাৎ এক গ্লাস বরফ পানি গিলে ফেললে ভেতরটা যেমন ঠান্ডা হয়ে যায় ঠিক তেমনি না হলেও কাছাকাছি। বিকট শব্দে আকাশটা অবিরত কেঁদে চললেও তার অশ্রুধারায় এখনও প্লাবিত হয়নি প্রকৃতি। মাঝে-সাঝে হতচ্ছাড়া আকাশের দু-এক ফোঁটা অশ্রুর ঝাপটা অস্পষ্ট করে দেয় আমার শহুরে জানালার অনুভূতিহীন স্বচ্ছ কাঁচ। তখন সে অস্বচ্ছ কাঁচের ভেতর স্বপ্নের মতো ধরা দেয় ফেলে আসা শৈশব। অস্পষ্ট জানালা যেন মুহূর্তেই আমার জন্য হয়ে উঠে জীবন্ত স্ক্রিন। এর ভেতর দিয়ে আমি স্পষ্ট দেখতে পাই স্বপ্নীল অতীত। যা আমাকে মোহাছন্ন করে নিয়ে যায় শত মাইল দূরের এক নিভৃত পল্লীতে। যেখানে নিশ্চিন্তে শাপলা ফোটে। শালুক ফোটে। কতকাল শালুক তোলা হয়না। আহ !!

কত আনন্দঘন ছিলো সে দিনগুলো। দলবেঁধে খেজুর রস চুরি করে সে রসে ধোঁয়া ওঠা শিরনি খাবারে যে স্বাদ, ইটপাথরের নাগরিক অলিন্দে বসে এক কাপ কফি হাতেও সে তৃপ্তি আসে না।

জাম গাছের নিচে, বাঁশ বাগানের পেছনের ঝোঁপে এখনও পাখি বাসা বুনে। পাতার আড়ালে সুনিপূণ বাসায় চুপটি করে এখনও বসে ডিমে তা দেয় দুটি টুনটুনি পাখি। ডিমগুলো কি ফুটেছে ? কতদিন দেখা হয় না সে দৃশ্য! এখনও মনকাঁটার ঝোপে কাঁটা সরিয়ে পূরোনো গাছের ক্ষয়ে যাওয়া কুঠরী থেকে সর্ন্তপনে অনায়াসে বের করে আনা যায় দু/চারটি হুতুম প্যাঁচার ছানা। মায়ের বকুনী উপেক্ষা করে হুতুম প্যাঁচার খোঁজে কত দুপুর কেটেছে গাছে গাছে…একটি প্যাঁচার ছানা পোষার শখে আহ্লাদিত হবার সে নরম তুলতুলে মন কেড়ে নিয়েছে এ নিষ্ঠুর কাঠ-খোট্টা শহর।

আহ শৈশব !!! মধুময় জীবনের মায়া ছেড়ে কেন আমাকে ঠেলে দিলে শহুরে নিষ্ঠুর বাস্তবতায়? এ শহর ভুলিয়ে দেয় একদা ডাকাতিয়া নদীর মোহনীয় হাতছানি। কেড়ে নেয় পড়ন্ত বিকেলে নৌকায় বসে বকের ছানার নীড়ে ফেরার দৃশ্য। এসব দেখতে দেখতেই চোখের সামনে যেন হঠাৎ দাঁড়িয়ে যায় ভাবলেশহীন এক দুরন্ত কিশোর। পরনে হাফপ্যান্ট। হাতে ফুটবল। চারদিকে ঝুম বৃষ্টি। তারপরও তাকে মাঠে নামতে হবে।

DSC_4238B

নাহ...আজকের মতো আর নামা গেল না। কারণ… অঝোরে কেঁদে চলার পর অবশেষে আকাশের অশ্রুধারা ধুয়েমুছে যেন এবার স্বচ্ছ করে দেয় আমার শহুরে জানালাকে। অস্পষ্টতা দূর হতেই মুহুর্তেই বন্ধ হয়ে যায় জীবন্ত স্ক্রিন। আর আমি হঠাৎ যেন টাইম মেশিনে চড়েই ফিরে আসি আবার এই অতি-বাস্তব শহরে।

তবে নিভৃত পল্লীকে বিদায় জানানো হয়নি। কারণ আবারো যাবো…. যেতে হবে..গ্রামের গোল পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে রক্তবর্ণের শাপলা তুলে আনব। তারপর ডুব সাঁতারে দূর করব নগরজীবনের দুর্বিসহ ক্লান্তি। সুতরাং আমি আবারো যাবো..আমাকে যেতেই হবে। নরম দূর্বাঘাস মাড়িয়ে আমি আসবো, অপেক্ষা করো………..

রাকিব হাসান

সাংবাদিক

=======

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G