বাচ্চাদের জন্য বেবিটিউব

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৬, ২০২১ সময়ঃ ১১:৪০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ

বাচ্চার হাতে মোবাইল, এটা এখন খুব স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেতে হয় মোবাইল দেখে দেখে, ঘুমাতে যায় মোবাইল দেখতে দেখতে। কান্না থামে মোবাইল দেখলে; এটাই এখন চরম বাস্তবতা। তাই যদি এই মোবাইলে দেখার অপশনগুলোকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে বাচ্চাদেরকে একটা সুস্থ বিনোদন দেওয়া সম্ভব। 

এই ভাবনা থেকেই বাংলাদেশের কয়েকজন শিক্ষার্থী তৈরি করেছে ইউটিউবের মতো একটি অ্যাপ। যার নাম বেবিটিউব। যেকোনো বয়সের যে কেউ এই সাইটে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। তবে বেবিটিউবে শিশুদের বিকাশের পথে বাধাগ্রস্ত, এমন কোনো ভিডিও দেয়া যাবে না। এর কারণ হচ্ছে, প্রতিটি শিশু নিরাপদে ইন্টারনেটের আওতায় থাকতে পারে এবং অভিভাবকরাও যেন হতে পারেন নিশ্চিন্ত।

সে কারণেই বেবিটিউবে শিশু-কিশোরদের জন্য ক্ষতিকারক ভিডিও থাকবে না। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমের অনুমোদনের পরই স্বল্প সময়ের মধ্যে অ্যাকাউন্ট হোল্ডারদের ভিডিওটি আপলোড করা হবে। সব ক্যাটাগরির ভিডিও আপলোড করা যাবে। যেমন,- খেলাধুলা, কার্টুন, পড়াশোনা, মুভি, নাটক, গেম, গান, গজল, ট্রাভেল, ব্লগ, টেকনোলজিসহ শিশু-কিশোর নির্ভর সব ধরনের ক্যাটাগরিতে ভিডিও আপ করা যাবে।

তবে সেগুলো হতে হবে শিশুদের জন্য পজিটিভ ও মজাদার। বেবিটিউবের চেয়ারম্যান সাইদুল করিম মিন্টু বলেন, আজকের শিশু-কিশোররা মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার বান্ধব। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ার কারণে প্রায় সব শিশু-কিশোররা মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে বেশ আগ্রহী। আর তাই অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা তাদের সন্তান যেনো কোনোভাবেই খারাপ কিছুতে জড়িয়ে না যায়? তাদের দুশ্চিন্তার অবসান ঘটাতেই বেবিটিউবের উদ্যোগ।

কখন বেবিটিউব এর ধারণা এলো জানতে চাইলে বেবিটিউবের প্রতিষ্ঠাতা শামীম আশরাফ বলেন, আমি যখন ‘মেন্টর মশাই’ নিয়ে কাজ করি তখন দেখলাম শিশু-কিশোররা ইন্টারনেট প্রচুর ব্যবহার করছে। ব্যবহারের মাত্রা দিনদিন বাড়ছে। আমার পরিবারেও একই অবস্থা। মেন্টর মশাই সংগঠনের মাধ্যমে আমরা সচেতনতামূলক কাজ করে থাকি।

কাজ করতে গিয়ে লক্ষ্য করলাম শিশু-কিশোররা ভিডিও দেখে বেশি। সেখান থেকে ভাবনা আসে তাহলে বাচ্চাদের জন্য আলাদা একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট তৈরি করা যায় কিনা। যা হবে ইউটিউব এর বিকল্প। আর তখন আমি এবং আমার টিম কাজ শুরু করি। আমাদের টিমের সাজ্জাদ পুরো সাইট এবং অ্যাপ সম্পূর্ণ করেন।

কে কে যুক্ত আছেন বেবিটিউবে, এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বেবিটিউবের হেড অব পিআর মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘বেবিটিউব একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট। এটি একটি অ্যাপ যেখানে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে আপলোড করা যাবে। শর্ত শুধু একটাই কনটেন্টগুলো হতে হবে শিশু-কিশোর ভিত্তিক।

বেবিটিউবে সহজ শর্তে মনিটাইজেশান সিস্টেম আছে কন্টেন্ট ক্রিয়েটরদের জন্য। যারা শিশুতোষ কন্টেন্ট আপলোড করবে তারা বেবিটিউব থেকে মনিটাইজেশানের মাধ্যমে আয় করার সুযোগ পাবে। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্ট্রাগ্রাম, লিংকড-ইন, বেবিটিউব ফেসবুক পেইজ, ওয়েবসাইট এবং অ্যাপস এ প্রায় দুই লাখ মানুষ যুক্ত রয়েছে।
গুগল প্লে-স্টোর থেকে ডাউনলোডে করে বেবিটিউব (BabyTube) অ্যাপ অনেক মানুষ ব্যবহার করছেন। সহজে জানার জন্য আমরা তৈরি করেছি ওয়েবসাইট। baby-tube.com এ আমাদের সম্পর্কে খুব সহজে জানতে পারবেন।

বেবিটিউবে ইতিমধ্যে ছয়শোর অধিক ভিডিও কন্টেন্ট রয়েছে। বেবিটিউবের পিছনে কাজ করছে একদল উদ্যোমী তরুণ দল। সেখানে রয়েছে রাফিন, আবির, আদিবা, সময়, রবিউল, বাবুল, জামিল, হাসিবা, পান্ত, তনুশ্রী, আয়শা, আনিকা, সুনয়না, সামিনা, জুবায়েরসহ অনেকে।

বেবিটিউবের সুবিধা সম্পর্কে বেবিটিউবের কো-ফাউন্ডার সাজ্জাদুল ইসলাম বলেন, বেবিটিউবে একসঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে খেলাধুলা, কার্টুন, পড়াশোনা, মুভি, নাটক, গেম, গান, গজল, ট্রাভেল, ব্লগ, টেকনোলজিসহ শিশু-কিশোরনির্ভর সব ধরনের কনটেন্ট। দিন দিন বাড়ছে শিশু-কিশোরদের মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার। তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে বেশির ভাগ শিশু-কিশোরই এখন ইন্টারনেটে সময় কাটাতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে।

বিনোদনের মাধ্যম হিসেবেও ইউটিউবে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারা। তবে অনেক সময় দেখা যায়, আপত্তিকর অনেক ভিডিও তাদের সামনে চলে আসে। অভিভাবকরাও এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন। বেবিটিউবে শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ, মজাদার এবং শিক্ষণীয় ভিডিও শেয়ার করার সুযোগ তৈরি করেছে উদ্যোক্তারা। অ্যাপের পাশাপাশি সেবা পাওয়া যাবে বেবিটিউবের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইটেও।

বয়সভেদে যে কেউ এই সাইটে ভিডিও আপলোড করতে পারবেন। তবে বেবিটিউবে শিশুদের মানসিক বিকাশের পথে বাধা হয়, এমন কোনো কন্টেন্ট আপলোড করা যাবে না। এ বিষয়ে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বেবিটিউবের টেকনিক্যাল টিম’।

বেবিটিউবের উপদেষ্টা সুশান্ত কুমার সাহা জানান, ‘আমরা যখন দেখেছি শিশু-কিশোররা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাবা মায়ের কথা অমান্য করা। সামাজিক অবক্ষয়, কিশোর গ্যাংসহ নানান অপরাধে শিশু-কিশোরদের নাম। আমরা বিভিন্ন শিশু-কিশোর এবং অভিভাবকদের উপর জরিপ করি।

জরিপ করে পেলাম শিশু-কিশোরদের অপরাধের অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ইন্টারনেট ব্যবহার। ইন্টারনেটে অনেক খারাপ কন্টেন্ট থাকে। যা শিশু-কিশোরদের জন্য নিরাপদ নয়। এসব কন্টেন্ট দেখে শিশু-কিশোররা অনুকরণ করে। উৎসাহীত হয় এবং বাজে কাজে জড়িয়ে পরে। বেবিটিউবে শিশুড়া শিক্ষা ও অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও পাবে। যা তাদের বিভিন্ন ভালো কাজে উৎসাহ দিবে।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G