প্রতিক্ষণ ডেস্ক
বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক সালমান শাহের মৃত্যুর প্রায় ২৯ বছর পর মামলাটি নতুন করে হত্যা মামলা হিসেবে রেকর্ড করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দীর্ঘ সময় আত্মহত্যা হিসেবে বিবেচিত এই ঘটনাটি এখন হত্যাকাণ্ড হিসেবে তদন্তের মুখে যাচ্ছে। ২০২৫ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত এ আদেশ দেন। নির্দেশে বলা হয়, মামলাটি হত্যা হিসেবে রেকর্ড করে রামনা মডেল থানা নতুন করে তদন্ত শুরু করবে এবং আগামী ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে।
১১ আসামির নাম
আদালতে দায়ের করা অভিযোগপত্রে যাদের নাম এসেছে তারা হলেন— ১. সামিরা হক (সালমান শাহের স্ত্রী) ২. লতিফা হক লুসী (শাশুড়ি) ৩. আজিজ মোহাম্মদ ভাই (চলচ্চিত্র প্রযোজক ও ব্যবসায়ী) ৪. রিজভি আহমেদ ওরফে ফারহাদ (অভিযুক্ত, যিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন) ৫. অভিনেতা ডন (চলচ্চিত্র শিল্পী) ৬. ডেভিড (চলচ্চিত্রকর্মী) ৭. ফারুক (চলচ্চিত্রকর্মী) ৮. পলাশ (সহযোগী) ৯. মান্নান (সহযোগী) ১০. শাহীন (সহযোগী) ১১. রুবেল (সহযোগী)। তাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। আদালত অভিযুক্তদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছেন।
হত্যার স্বীকারোক্তি ও তদন্তের অগ্রগতি
রিজভি আহমেদ নামের এক অভিযুক্ত ১৯৯৭ সালে স্বীকারোক্তি দেন যে, পরিকল্পিতভাবে সালমান শাহকে হত্যা করা হয়েছিল এবং এই হত্যার বিনিময়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা দেয়া হয়েছিল। তার সেই স্বীকারোক্তি নতুন তদন্তে মূল প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশে রিজভির বর্ণনাকে পুনঃমূল্যায়ন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পিবিআই’র পূর্ববর্তী প্রতিবেদন ও আদালতের অবস্থান
এর আগে ২০২০ সালে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) জানায়, সালমান শাহ আত্মহত্যা করেছেন। তবে তার মা নীলা চৌধুরী সেই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে আপত্তি জানান এবং বলেন—“আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, প্রমাণ আমার কাছে আছে।” আদালত সেই আপত্তি গ্রহণ করে আত্মহত্যার মামলা বাতিল করে হত্যা মামলা হিসেবে নতুন তদন্তের নির্দেশ দেন।
তদন্তের নতুন ধারা
রামনা মডেল থানা পুরনো তদন্ত নথি, সাক্ষ্য এবং ফরেনসিক প্রমাণগুলো পুনরায় পর্যালোচনা করছে। প্রয়োজনে নতুন সাক্ষ্যগ্রহণ ও ঘটনার সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আদালত এ মামলার অগ্রগতি জানতে পরবর্তী শুনানির তারিখও নির্ধারণ করেছেন।
সালমান শাহের মৃত্যু বাংলাদেশে এক যুগান্তকারী রহস্যের জন্ম দেয়। নতুন করে হত্যা মামলা রেকর্ড ও ১১ জন আসামির নাম প্রকাশের পর, দীর্ঘদিনের গোপন অধ্যায় উন্মোচিত হওয়ার আশা দেখছেন সালমান ভক্ত ও পরিবার। এখন আদালতের নির্দেশে নতুন তদন্তই হয়তো বলে দেবে—বাংলা চলচ্চিত্রের সেই উজ্জ্বল নক্ষত্রের মৃত্যুর পেছনে প্রকৃত সত্য কী ছিল।