কেমন কাটছে খালেদা জিয়ার দিনকাল?

প্রকাশঃ অক্টোবর ১৩, ২০২০ সময়ঃ ১১:৩৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৩৪ অপরাহ্ণ

দুর্নীতি মামলায় কারাভোগ করতে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে মুক্তিলাভের পর এখন দিন পার করছেন রাজধানীর গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য়। কিন্তু কেমন আছেন তিনি? দলের নেতারা বলছেন, তার শারীরিক অবস্থা ভালো নয়, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেয়া দরকার। পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ স্পষ্ট করে কিছু না বললেও সরকারের বিভিন্ন মহলে স্বজনদের দেন-দরবারের খবর মিলছে নানা সূত্রে। এ অবস্থায় রাজনৈতিক মহলে আলোচনা চলছে, খালেদা জিয়া কি চিকিৎসার্থে বিদেশ যেতে পারবেন?

দুর্নীতির মামলায় সাজার রায়ের পর খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি হন। চলতি বছরের ২৫ মার্চ তিনি সরকারের নির্বাহী আদেশে ছয় মাসের জন্য মুক্তি পান। করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে মানবিক দিক বিবেচনায় সরকার সাজা স্থগিত করে তাকে মুক্তি দেয়। ২৪ সেপ্টেম্বর ওই ছয় মাস শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তার আগে ১৫ সেপ্টেম্বর সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়। বাসায় থেকে দেশেই চিকিৎসা করাবেন এবং দেশের বাইরে যেতে পারবেন না— এমন শর্তে মুক্তির পর গুলশানের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজায়’ অবস্থান করছেন তিনি।

৭৫ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে চোখ ও দাঁতের সমস্যা, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে ভুগছেন। মুক্তি পেলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এখনও তার উন্নত চিকিৎসা শুরু হয়নি। তার জন্য দলীয় চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি টিম রয়েছে। ওই টিমের দু-একজন নিয়মিত বিএনপি প্রধানের শারীরিক অবস্থার ফলোআপ করছেন। এছাড়া বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনসহ দলের সিনিয়র চিকিৎসকদের একটি দল খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজখবর রাখছেন। পুত্রবধূ ডা. জোবায়দা রহমানও তার চিকিৎসার নিয়মিত তদারকি করছেন।

পারিবারিক ও দলীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির প্রথম মেয়াদে যেন কোনোভাবে সরকারের বেঁধে দেয়া শর্ত লঙ্ঘিত না হয়, সে বিষয়ে খুবই সচেতন ছিল তার দল ও পরিবার। ফলে সরকারও তার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনায় নেয় এবং শেষ পর্যন্ত আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেয়। প্রথম দফায় খালেদা জিয়াকে যে শর্ত বেঁধে দেয়া হয়েছিল, সেটা দ্বিতীয় দফায়ও বলবৎ রাখা হয়। যদিও তাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেয়ার সুযোগ দিতে পরিবারের পক্ষ থেকে নানাভাবে সরকারকে আশ্বস্ত করার প্রচেষ্টা চলছে।

একটি সূত্র জানায়, সরকারের কৃপায় কারামুক্তির কারণে খালেদা জিয়ার ‘আপসহীন’ ভাবমূর্তি ইতোমধ্যে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। নেতাকর্মীদের একটি অংশ এখনও মানতে পারছেন না যে, আন্দোলন বা আদালতের বদলে দলীয় চেয়ারপারসন মুক্তি পেয়েছেন সরকারেরই কৃপায়। অবশ্য এ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না তার পরিবার। স্বজনরা চাইছেন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা। সেক্ষেত্রে দল বা দলের সমর্থকরা কী চান, সেটি এখন আর বিবেচ্য নয়।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ করলে একটি অংশ দাবি করে, খালেদা জিয়া আপাতত লন্ডন যাচ্ছেন না। শর্তসাপেক্ষে মুক্তি নিয়ে তিনি বিদেশ যেতে চান না। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েই বিএনপিপ্রধান বিদেশ যেতে চান।

কিন্তু স্বজনরা মনে করেন, এটা সম্ভব নয়। কারণ সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া উচ্চ আদালত থেকেও জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। ইতোমধ্যে বারবার এটি প্রমাণিত হয়েছে।

পরিবারের সদস্যরা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মৌলিক চিকিৎসা এদেশে সম্ভব নয়। সেজন্য তার ভাই শামীম ইস্কান্দর ও বোন সেলিনা ইসলাম সরকারের সঙ্গে খালেদাকে বিদেশে নেয়ার বিষয়ে যোগাযোগ রাখছেন। এক্ষেত্রে দলকে একেবারেই পাশ কাটিয়ে চলা স্বজনরা আশাবাদী, সরকার খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেবে।

পরিবারের একটি সূত্র বলছে, উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়া দরকার হলেও এ ব্যাপারে সরকারের কাছে আবেদন করার চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

সর্বশেষ গত ২৬ সেপ্টেম্বর রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ‘ফিরোজা’য় গিয়ে দেখা করেন তার আইনজীবী ও দলের যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, খালেদার শারীরিক অবস্থা খারাপ। হাসপাতালে যে চিকিৎসা হতো, বাসায় সে চিকিৎসা হচ্ছে না।

এক্ষেত্রে তার স্থায়ী মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো সরকারের ব্যাপার।

সম্প্রতি ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন জানান, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া যুক্তরাজ্য যেতে চাইলে সে দেশের সরকারের তরফ থেকে কোনো বাধা নেই। তার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে স্বজনদের দেন-দরবারের মধ্যে বিদেশি পক্ষের সক্রিয়তাও স্পষ্ট হয়।

ডিকসনের ওই বক্তব্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক অনুষ্ঠানে বলেন, ব্রিটেন এখনও একটি গণতান্ত্রিক দেশ। তাদের মধ্যে সভ্যতা-ভদ্রতা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে যথেষ্ট বেশি। তারা একটা গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে, একজন গণতান্ত্রিক নেতার প্রতি যে দায়িত্ব সেই কথাটিই বলেছেন। এজন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই।

খালেদা জিয়ার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ম্যাডাম যেমন ছিলেন, তেমনই আছেন। তার শারীরিক অবস্থা সবাই জানেন। খুব একটা উন্নতি হয়নি। খেতে পারছেন না।

বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়টা খালেদা জিয়ার চাওয়া এবং সরকারের দেয়ার ওপর নির্ভর করছে। খালেদা জিয়া যদি যেতে চান, সেটা যদি পরিবারের পক্ষ থেকে, আমাদের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে বলা হয়, সরকার যদি যেতে দেয়, তাহলে তিনি যেতে পারবেন। না হলে তো যেতে পারবেন না। এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত দেশনেত্রী খালেদা জিয়া কিছু বলেননি। পরিবারের পক্ষ থেকেও কিছু বলা হয়নি।

প্রতিক্ষণ /এডি /রন

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G