চাকরি ছাড়ছেন বাবুল আক্তার?

প্রকাশঃ জুন ২৮, ২০১৬ সময়ঃ ১:৩০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:০০ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্কঃ

KYfaTgVCe8Tmস্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) হত্যা মামলায় বাবুল আক্তারের ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে কয়েক দিন ধরে দেশের সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এবার প্রশ্ন উঠেছে এসপি বাবুল আক্তার চাকরিতে ফিরছেন কিনা।  অসমর্থিত একটি সূত্র জানিয়েছে, তিনি আর চাকরিতে ফিরছেন না। সর্বত্র আলোচনা, বাবুল আক্তার কি পুলিশ বাহিনী থেকে চলে যাচ্ছেন?

পুলিশের একজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বলেছেন, কর্মকর্তাদের একটি অংশ চায় না, তিনি আর বাহিনীতে ফিরে আসুন। পুলিশ বাহিনীর ভেতরেও এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। তবে এনিয়ে জানতে চাইলে পুলিশের মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক কোনো মন্তব্য করেননি।

শুক্রবার গভীর রাতে শ্বশুরবাড়ি থেকে এসপি বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়। ১৫ ঘণ্টা পর শনিবার বিকেলে তাকে শ্বশুরের বাসায়ই পৌঁছে দেয়া হয়। বাসায় ফিরেই তিনি গোসল করে দরজা বন্ধে করে দেন। পরদিন বিকেলের আগে আর দরজা খোলেননি। তিনি মানসিকভাবে ‘আপসেট’ আছেন বলেও জানিয়েছিল পরিবারের লোকেরা। এরপর বাবুলের শ্বশুর বাড়িতে পুলিশ পাহারা বসানো হয়। তবে সোমবার তা তুলে নেয়া হয়েছে।

এদিকে ডিবি কার্যালয়ে থেকে ফেরার পর বাবু আক্তারের অফিসে যাওয়া বন্ধ করে দেয়ায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এমনও শোনা যাচ্ছে, তিনি চাকরি থেকে ইস্তফা নিয়েছেন। তবে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করা হচ্ছে।

সোমবার দিবাগত রাতে বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশারফ হোসেন বলেন, ‘বাবুল বাড়িতেই আছে। বাচ্চাদের সময় দিচ্ছে। তাদের খাওয়ানো থেকে শুরু করে সব কাজই করছে সে।’

অফিস করছেন কি না জানতে চাইলে মোশারফ হোসেন বলেন, ‘না, রবিবার ও সোমবার অফিস যায়নি।’

৫ জুন চট্টগ্রামে খুন হন স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এর আগের দিনই পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায় পুলিশ সদরদপ্তরে যোগ দেন তিনি।

গত রবিবার একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের খবরে বলা হয়, ডিবিতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার ইকবাল বাহার সহ শীর্ষ ৪ কর্মকর্তা এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করতে বাবুল আক্তারকে চাপ দেয়। তাকে চাকরি ছাড়া নয়তো জেলে যাওয়ার শর্ত দেয়া হয়। তিনি চাকরি ছাড়ার শর্তই মেনে নেন।

তবে এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘চাপ প্রয়োগ করার প্রশ্নই আসে না। এ হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওইসব পত্রিকা মনগড়া গল্প লিখছে। এরকম স্পর্শকাতর একটি বিষয় নিয়ে এধরনের গল্প লেখা একদমই ঠিক না।’বাবুল আক্তারের শ্বশুর বলছেন, ‘হত্যাকারী যেই হোক, তাকে যেনো বিচারের আগেই হেয় করা না হয়। আমি মে হত্যার বিচার চাই, কিন্তু এ জন্য যেনো কারো সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্ণ না হয়, সেটা তদন্তকারীদের মাথায় রাখতে হবে।’

এদিকে রবিবার চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম হারুন অর রশীদের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে দুই আসামি ওয়াসিম ও আনোয়ার।মোতালেব ওরফে ওয়াসিম (২৮) বলেছেন, ‘পুলিশের বড় সোর্স’ আবু মুছার নির্দেশেই এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে খুন করা হয়। এই মুছাই খুনি ভাড়া করে। এবং তার গুলিতেই মিতুর মৃত্যু নিশ্চিত হয়।

তবে অপর আসামি আনোয়ার জবানবন্দিতে দাবি করেছেন, ওয়াসিমের গুলিতেই মিতুর মৃত্যু হয়েছে। রোববার এক প্রেস ব্রিফিংয়েও সিএমপি কমিশনার ইকবাল বাহার জানিয়েছিলেন, ওয়াসিমের গুলিতেই মিতুর মৃত্যু হয়।ওয়াসিম অবশ্য স্বীকার করেছেন, মুছার গুলিতে এসপিপত্নীর মৃত্যু হলেও তিনি একটি মিস ফায়ার করেছিলেন।

এ হত্যাকাণ্ডে যে ৭ জন জড়িত তারা হলেন- আবু মুছা, ওয়াসিম, রাশেদ, নবী, কাুল, শাহজাহান ও আনোয়ার। এছাড়া অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে ভোলা নামে একজনের নামও উঠে এসেছে জবানবন্দিতে।

তদন্ত সূত্রে জানা যায়, মিতু হত্যায় সরাসরি জড়িত সন্দেহে আবু মুছা (৪৫) ও এহতেশামুল হক ভোলা (৩৮) নামে দুই ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশের একটি ইউনিট। এরা দু’জনই এসপি বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে কাজ করতেন। ধারণা করা হচ্ছে, তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভাড়াটে খুনি হিসেবে তারা মিতুকে হত্যা করেছে অথবা সাহায্য করেছে। তবে এদের আটকের কথা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি’র মোড় এলাকায় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে দুর্বৃত্তদের ছুরিকাঘাত ও গুলিতে খুন হন এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনার পরদিন পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার রহস্য উদঘাটনে কাজ করছে গোয়েন্দা পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট (সিটিআই)। তবে মামলার মূল তদন্তে আছে চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। যদিও সবগুলো সংস্থা মিলে এখন পর্যন্ত এ ঘটনার তেমন কোনো ক্লু খুঁজে বের করতে পারেনি।

প্রতিক্ষণ/এডি/সাদিয়া

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G