পবিত্র কুরআনের শিক্ষা

প্রকাশঃ মার্চ ১১, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৫১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৫১ অপরাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

8588052269016676389380778478পরম করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। “আমি তাদের পশ্চাতে সঙ্গী লাগিয়ে দিয়েছিলাম; এরপর সঙ্গীরা ওদের আগের ও পেছনের আমল তাদের দৃষ্টিতে সুশোভন করে দিয়েছিল।

তাদের ব্যাপারেও শাস্তির নির্দেশ হলো কার্যকর, যার বাস্তবায়ন হয়েছিল এদের পূর্ববর্তী জিন ও মানুষের বেলায়। নিশ্চিতভাবেই তারা ক্ষতিগ্রস্ত’। আর কাফেররা বলে থাকে, ‘তোমরা এই কুরআন শ্রবণ করো না এবং তখন (এর বাণী উচ্চারণের সময়ে) গোলযোগ সৃষ্টি করো, যেন তোমরা জয়লাভ করতে পারো।’

আমি অবশ্যই কাফেরদের স্বাদ দেবো কঠিন আজাবের এবং অবশ্যই ওদের মন্দ ও হীন কাজের প্রতিদান প্রদান করব।” এটা হলো আল্লাহর দুশমনদের শাস্তি জাহান্নাম। এতে তাদের জন্য স্থায়ী আবাস রয়েছে আমার আয়াতগুলো অস্বীকার করার প্রতিফলস্বরূপ। কাফেররা বলবে, ‘আমাদের পালনকর্তা! আমাদেরকে বিপথগামী করেছিল যেসব জিন ও মানুষ, তাদের দেখিয়ে দাও, আমরা ওদের পদদলিত করব, যাতে তারা যথেষ্ট অপদস্থ হয়।’

নিশ্চয়ই যারা বলে, ‘আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ’; অতঃপর এর ওপর থাকে অবিচল, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, ‘তোমরা ভয় করো না, চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোনো। ইহকালে ও পরকালে আমরা তোমাদের বন্ধু। সেখানে তোমাদের জন্য আছে, যা তোমাদের মন চায় এবং সেথায় তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা দাবি করো। এটা ক্ষমাশীল করুণাময়ের পক্ষ থেকে তাদের আপ্যায়ন। (সূরা হা-মীম সিজদাহ, আয়াত ২৫-৩২)

এই সূরাতে দেখানো হচ্ছে, কিভাবে আল্লাহ তায়ালার ক্ষমতা অবিশ্বাসীদের হৃদয়-মনের ওপর বিস্তৃত। তারা তাঁর ওপর ঈমান আনতে অস্বীকার করার সময়েও এর ব্যতিক্রম হয় না। তিনি এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন যে, ওদের অন্তঃকরণ কলুষিত হয়ে গেছে। তাই তিনি মানুষ ও জিন উভয়ের মধ্য থেকে কিছু মন্দ সত্তাকে ওদের বন্ধু করে দেন এবং এরা যা কিছু খারাপ, সেটাকেই সুন্দর ও ভালো হিসেবে অবিশ্বাসীদের সামনে তুলে ধরে। এভাবেই তাদের ধ্বংসের পথে পরিচালনা করা হয়, যে পর্যন্ত না তারা ওদের সাথে যোগ দেয়, যারা নিজেদের ধ্বংস করে এবং এ কারণে শাস্তি যাদের প্রাপ্য।

অবিশ্বাসী ও কাফেরদের অহঙ্কার এত বেশি যে, তারা আল্লাহর ইবাদত করতে চায় না। অথচ তারা সবাই তার শক্তি, ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের আওতাধীন সর্বতোভাবেই। নিজেদের অন্তরই তাদের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নেয়, যার চূড়ান্ত পর্যায়ে তারা আল্লাহর শাস্তির সম্মুখীন হয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্য মন্দ সঙ্গী বরাদ্দ রেখেছেন; যারা ওদের কানে কুমন্ত্রণা জোগায়। তারা নিশ্চয়তা দিয়ে বলে যে, চার পাশে মন্দ যা কিছু দেখা যায়, এর সবই ভালো এবং তারা নিজেদের মন্দ কাজকে মনোরম ও আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরে, যাতে এগুলোর কুৎসিত-কদর্য রূপ ধরা পড়ে না যায়।

মানুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে মন্দ যা ঘটতে পারে, তা সম্ভবত এটাই যে, ভারসাম্যপূর্ণ বিচার-বিবেচনার সামর্থ্য সে হারিয়ে ফেলে। এবং তার কাজকর্ম কত বেশি মন্দ ও বিপথগামী, তা আর দেখতে পায় না। ফলে সে মনে করে, নিজে যা কিছু করছে, সেটাই ভালো ও সুন্দর। অথচ অনিবার্যভাবেই এর মাধ্যমে সে ধ্বংসের দিকে ধাবিত হয়। যখন অবিশ্বাসীরা ওই পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তারা নিজেদের দেখতে পায় অতীতে হারিয়ে যাওয়া সম্প্রদায়গুলোর মাঝে, যারা আল্লাহ তায়ালার প্রদত্ত শাস্তি ভোগ করেছে। ‘তারা আসলেই হারিয়ে যাবে।’

উল্লিখিত মন্দ সঙ্গীরা যা করতে অবিশ্বাসীদের উসকিয়েছিল, তা হলো কুরআন শরীফের বক্তব্যের যুক্তিও যথার্থতা উপলব্ধি করায় তা না মেনে উল্টো এই কিতাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া। ‘অবিশ্বাসীরা বলে, কুরআনের বাণী শ্রবণ করবে না। বরং সে সময়ে গোলযোগ সৃষ্টি করো যাতে তোমরা জয়ী হতে পারো।’

মক্কার কুরাইশ গোত্রের মুরুব্বিরা একে অপরকে এই অপকর্ম করারই পরামর্শ দিত। তারা জনগণকেও এটা করার জন্য উসকানি প্রদান করত। তারা উপলব্ধি করেছিল, আল কুরআন এবং এর সৌন্দর্য, শক্তিমত্তা ও বাকশৈলীর সাথে তুলনীয় কোনো কিছুই তাদের কাছে নেই। তারা কুরআনের বাণী শুনে ‘না’ বলার কারণ, তাদের বক্তব্য ছিল, এই বাণী মনের ওপর জাদুকরী প্রভাব ফেলে, তাদের জীবন ধ্বংস করে দেয় এবং পিতা ও সন্তান কিংবা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে।’

বাস্তবে কুরআন বিভাজন তৈরি করে থাকে আল্লাহর নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় যাতে ঈমান পৃথক হয় কুফর থেকে এবং হেদায়াত বা সুপথনির্দেশনা আর বিপথে গিয়ে ধ্বংস হওয়ার মধ্যে থাকে পার্থক্য। আল কুরআন মানুষের হৃদয়কে জয় করে নেয়, যাতে মানুষ ঈমানের মহান বন্ধনের মতো বেশি গুরুত্ব আর কোনো বন্ধনকেই না দেয়। তাই আল কুরআন অভিহিত হয় ‘আল ফুরকান’ হিসেবে। এর অর্থ, যথার্থ বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে যা পার্থক্য সৃষ্টি করে।

কুরআনের বাণী উল্লেখ করার সময়ে বাধা দিতে, গোলযোগ করতে বলা হয়েছে। কারণ অবিশ্বাসীরা ভালো করেই জানত, কুরআনের মোকাবেলায় পেশ করার মতো কোনো যুক্তি বা বক্তব্য তাদের পক্ষে পেশ করা সম্ভব নয়। তাই কুরআনের প্রচারে বিঘ্ন সৃষ্টি অর্থহীন ও নিষ্ফল প্রয়াস মাত্র। ওই সব কাফির বা অবিশ্বাসী নানাভাবে প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করত। বসে বসে রুস্তমসহ প্রাচীন ইরানের রাজাদের কিস্সা-কাহিনী শোনাত। এর উদ্দেশ্য ছিল, লোকজন যেন কুরআনের কথা না শুনে এ ধরনের গল্প শুনতে থাকে। আবার কেউ কেউ কুরআনকে বাধা দিতে চাইত চিৎকার দিয়ে, কবিতা আবৃত্তি করে কিংবা ছড়া শুনিয়ে। কিন্তু এসব কিছুর ফলাফল হয়েছিল ‘শূন্য’। কেননা আল কুরআনের শক্তি ও প্রভাব এতটুকুও কমাতে পারেনি ওরা। কুরআন হচ্ছে সত্যের বাণী; আর সত্যই মানুষকে বশীভূত করার সামর্থ্য রাখে।

আল্লাহ যে আমাদের প্রতিপালক, এ বিষয়ে অবিচল থাকার তাৎপর্য হলো, এই উপলব্ধিকে বিবেকে সদা জাগ্রত রাখা, বাস্তবে এর প্রমাণ দেয়া এবং এই ঈমানমাফিক অর্পিত দায়িত্বগুলো পালন করা। এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ ও কষ্টকর। তাই প্রয়োজন আল্লাহর দয়া ও করুণার। জান্নাত বা বেহেশত হলো আল্লাহ তায়ালার তরফ থেকে উপহার। তাঁর অপার ক্ষমা ও অসীম করুণার ফলেই এটা অর্জন করা যায়।

প্রতিক্ষণ/এডি/ ইসলাম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G