পড়ন্ত বিকেলে প্রকৃতির মাঝে!

প্রকাশঃ জুন ২৪, ২০১৫ সময়ঃ ৮:৪৩ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:২১ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

11657537_1624822631133339_1505727151_nপড়ন্ত বিকেলে রক্তিম সূর্যের আলোয় লালচে আকাশ। রাখালিয়ারা গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছে। জেলেরা তীরে নৌকা ভিড়াচ্ছে। একদল জেলে নৌকার বৈঠা কাঁধে একপ্রান্তে জাল অন্যপ্রান্তে মাছের ঝুড়ি বেঁধে গাঁয়ের বাজারের দিকে হেঁটে যাচ্ছে। পাখির দল এপ্রান্ত হতে ওপ্রান্তে ছুটে চলছে। দেশী বিদেশী পাখির কিচির মিচিরে মুখরিত চারপাশ। আর কিছুক্ষণ পরই ডুবে যাবে লাল সূর্য। ঘনিয়ে আসবে সন্ধ্যা। এমনই অপরূপ দৃশ্য আর কোথাও নয় ধরা দেয় সিলেটের হাকালুকি হাওরে!

পর্যটক কিংবা ভ্রমণপিপাসুদের কাছে বরাবরই প্রিয় সিলেট। কিন্তু এখানে যে চমৎকার একটি হাওর আছে, এটা খুব কম পর্যটকই জানেন। অবশ্য সেখানে ভ্রমণে যাওয়ার পর জানতে পারেন।

হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম হাওর। এটি মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলায় অবস্থিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় এর বিস্তৃতি। হাওরের আয়তন ১৮,১১৫ হেক্টর।11348906_1624822677800001_1573069469_n বর্ষাকালে বিস্তৃত জলরাশি এ হাওরের রূপ ঠিক যেন ভাসমান সাগর। চারদিকে বিস্তৃত জলরাশি। জলের মাঝে মাঝে দুই-একটি বর্ষীয়ান হিজল, তমাল বৃক্ষ।

অথচ শীতকালে বিস্তৃত এই হাওর ধু-ধু সবুজপ্রান্তর, কোথাও বা ধান ক্ষেত এবং খানাখন্দ নিচু ভূমিতে প্রায় ২৩৬টি বিলের সমষ্টি। হাকালুকি হাওর মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। হাকালুকি হাওর বাংলাদেশের সংরক্ষিত জলাভূমি। শীত মৌসুমে এশিয়ার উত্তরাংশের সাইবেরিয়া থেকে প্রায় ২৫ প্রজাতির হাঁস এবং জলচর নানা পাখি অতিথি হয়ে আসে। এছাড়া স্থানীয় প্রায় ১০০ প্রজাতির পাখি সারাবছর এখানে দেখা মেলে।

হাকালুকি হাওরে পরিযায়ী হাঁসের মধ্যে চখাচখী, রাজসরালী, গরাদমাথা রাজহাঁস, ধলাবেলে হাঁস, গাডওয়াল, ইউরেসীয় সিথীহাঁস, টিকিহাঁস, পাতিহাঁস ম্যার্গেঞ্জার প্রভৃতির দেখা মেলে। দেশি প্রজাতির মধ্যে বেগুনি কালেম, পানমুরসী, পাতিকুট, ডাহুক, ইউরেশীয় মুরগি চ্যাগা, ল্যাঞ্জা চ্যাগা, রাঙ্গাচ্যাগা, জলাপিপি, ময়ূরলেজা পিপি, পাতি জিরিয়া, হাট্টিটি, ভূবনচিল, শঙ্খচিল, বিলুপ্ত প্রায় কুড়াল ঈগল, বড়খোঁপা ডুবুরি, ছোট পানকৌড়ি, খয়রা বক, ধূসর বক, শামুক খোল প্রভৃতি পাখি অন্যতম।

11640592_1624822714466664_1769087529_oতবে হাকালুকি হাওরে অনেক প্রজাতির মাছও পাওয়া যায়। চিতল, আইড়, বাউশ, পাবদা, মাগুর, শিং, কৈ প্রভৃতি মাছ এখানে রয়েছে। জলজ উদ্ভিদের মধ্যে বিলুপ্ত প্রায় মাকনা হাওর অঞ্চলের পুটি, হিঙ্গাজুর, হাওয়া প্রভৃতি বিলে যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান।

এছাড়া শাপলা, শালুক, পদ্ম প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদ ও আশাব্যঞ্জকহারে এখানে রয়েছে। এ হাওর সংরক্ষিত হওয়া সত্ত্বেও প্রতিটি বিল ৩ বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়ে থাকে। ফলে মৎস সম্পদ আহরণের জন্য পানি সেচে ফেলার কারণে জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ দারুণভাবে বিপন্ন হয়ে পড়ে। পালাক্রমে বিলগুলোতে মাছ ধরা হয়। যেসব বিলে মাছ ধরা হয় না সেসব বিল পাখি ও জলজ উদ্ভিদের জন্য মনোরম আবাসস্থলে পরিণত হয়।

যেভাবে যেতে হবে: ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাসে কুলাউড়া শহর। সেখান থেকে রিকশা যোগে পছন্দমতো বিলের নিকটমতো গ্রাম অতঃপর ট্রেকিং। হাকালুকি হাওর ভ্রমণের সেরা সময়: নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় হাওর ভ্রমণের জন্য সেরা। এসময় এখানে প্রচুর সংখ্যায় পরিযায়ী পাখির কলকাকলিতে চারদিক মুখর থাকে। জলজ উদ্ভিদ, মাছপ্রেমীদের জন্য এটা সেরা মৌসুম।

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G