মায়ের তুলনা শুধুই মা

প্রকাশঃ মে ১০, ২০১৫ সময়ঃ ৯:০১ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৩৬ অপরাহ্ণ

মোস্তাফিজুর রহমান, হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

ma2মানব শিশু জন্ম নেয়, থাকে মায়ের কোলে। আর অনান্য সৃষ্টির চেয়ে মানব শিশূ খুব দুর্বল ভাবে জন্মায়। তার নিজের তেমন কোন ক্ষমতা থাকে না। পারেনা সাথে সাথে কথা বলতে, নিজের প্রয়োজন বোঝাতে। এই বোঝাতে না পারা শিশুর সমস্ত প্রয়োজন কেউ বুঝতে না পারলেও পারে কেবল মা। মাকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে।

মা অনেক কষ্ট করে প্রায় দশ মাস পেটে আগলে রাখে প্রিয় শিশূকে,নতুন মেহমানকে। তাকেই জীবন এর চেয়ে বেশী ভালোবাসে। এই ভালোবাসার কারনে অনেক মা সন্তান প্রসব কালে নিজের জীবন দিয়েও  তা প্রকাশ করে থাকে।

একজন জীবন্ত মানুষের পেটে আর একজন মানুষকে বয়ে নিয়ে সব কাজ সম্পাদন করা যে কতটা কষ্টকর, তা ভুক্তভোগী মা ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না । যদি কাউকে হাজার হাজার টাকার বিনিময়ে, একটা ইট পেটের ওপর বেঁধে নিয়ে মাত্র এক সপ্তাহ চলাফেরাসহ সমস্ত কাজ সম্পাদন করতে বলা হয়, তবে এমন কাউকেও খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু হাজার কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে আগলে রাখে পরম যন্তে মাসের পর  মাস ধরে শুধুই মা।

মা, দুনিয়ার সবচেয়ে মধুর একটি নাম । হাজারও ব্যাথা ভুলে থাকা যায় শুধু মা ডেকে । সেজন্যই কবি বলেছেন মায়ের আঁচলের যতক্ষন থাকবি ততক্ষনই শান্তি। মা ডাকের উচ্চারণগত বৈশিষ্ট  লক্ষ্য করলে দেখা যায়, দুই ঠোট এমন  ভাবে মিশে যায়, যা অন্য কোন ডাকে হয়না। আরবিতে মা হয় মীম অক্ষর এ, সেখানেও ঊচ্চারনে দুটি ঠোট খুব নিখুঁতভাবে মিশে যায়। তাইতো মা ডাকটি এত মধুর।

একটা শিশু জন্মগ্রহন করে ক্ষুধা লেগেছে বলতে পারে  না, পিপাসা লেগেছে পারে না বোঝাতে। পারে শুধু কাঁদতে। কিন্তু মা তার এই কান্না শুনে বুঝতে পারেন ভালো ডাক্তারের মত, কোন কান্না পিপাসার, আর কোন কান্না ঘুমের। তিনি ছাড়া আর কেউ বলতে পারেনা।

মহান আল্লাহ তা’আলা মায়েদের এমন জ্ঞান দিয়েছেন, সে মা যদি বয়সে কমও হয় তবুও সন্তানের সব কিছূ বুঝতে পারেন। বাচ্চা প্রসবকালে একজন মায়ের যে কি পরিমান কষ্ট হয় , তা লিখে আলোচনা করে কখনও বোঝানো যাবে না। কেবল মাত্র মায়ই পারে তার অনুভব করতে। এত শত কষ্ট , রক্তের বন্যায় বয়ে জম্ন হয় একটা শিশূর। মায়ের এই হাজার কষ্ট নিমিষেই আনন্দে পরিনত হয় প্রিয় সন্তানের মুখ দেখে। শিশু যখন সুস্থ্য থাকে, মায়ের মন তখন খুশি থাকে।

সম্পাদন করতে পারে সমস্ত কাজ আনন্দ নিয়ে। কিন্তু যখন সন্তানের অসুস্থ্তা দেখা দেয় , তখন মায়ের দুঃখের সীমা থাকে না। মা পারেনা তখন ঠিক মত খেতে , না পারে ঘুমাতে। সব সময় সন্তানকেনিয়ে চিন্তা করে। আর  যদি বাচ্চার কঠিন রোগ দেখা যায় , তবে রাতের  আঁধারে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে নিজের জীবন এর বিনিময়ে সন্তানের সুস্থ্যতা কামনা করেন।

পিয় পাঠক আপনার ছোট অবস্থায় আপনার মা যে কি পরিমান কষ্ট করেছেন তা হয়ত মনে নেই। কিন্তু আপনার জ্ঞান হওয়ায় পর যদি কখনো অসুস্থ্য হওয়ার ঘটনা মনে থাকে, তবে একটু ভেবে মনে করার চেষ্টা করুন। আপনার অসুস্থ অবস্থায় মা কি পরিমান পেরেশান হয়েছিলেন। আমার একটা ঘটনা মনে পড়ে তখন আমি এইচ এস সি পরীক্ষা দিচ্ছিলাম, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হঠাৎ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে যাই। সে দিন এমন একটা রাত এসেছিলে আমার জীবনে।

সেই রাত যেন দশ রাতের চেয়েও বড় হয়েছিলো। সেই রাতে আমি ঘুমুতে পারিনি বলে সারা রাত ধরে জেগে ছিলো আমার প্রিয় মা। জ্বরে গা যেন পুড়ে যাচ্ছিল, তখন মা গায়ে হাত দিয়ে, মাথায় জলপট্রি বেঁধে  জর কমানোর চেষ্টা করছিল। সারা রাত জেগে ছিলেন তিনি। বাবা বারবার রুমে আসে আর যায়। আমি সেইদিন রাতে শুনেছি , দেখেছি , আমার সুস্থ্যতার জন্য মা চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে। এমন ঘটনা সবার জীবনেই আছে। তা খেয়াল করুন বুঝবেন  মা কি।  তাইতো সন্তানের সুখে মা সবচেয়ে বেশি খুশী হয় , আর কাঁদে সবার চেয়ে বেশি সন্তানের বিপদে ।

তাই তো কবি বলেছেন ,
মাগো তুমি এই ধরণীর শ্রেষ্ঠ  নিয়ামত , তোমারি পদতলে রয়েছে জান্নাত।

ইসলামে মায়ের মর্যাদা দেয়া হয়েছে তিন গুন বেশি বাবার চেয়ে। সন্তানের বেহেশত মায়ের পায়ের নিচে বলে ঘোষনা দিয়েছেন প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)। আল্লাহ তাআলা মায়ের সাথে সর্বোত্তম ব্যবহার করতে আদেশ দিয়েছেন।

নিষেধ করেছেন কড়া কথা, ঝিড়কি দিয়ে কথা, কষ্ট  দিয়ে কথা বলতে। পিতা মাতার খেদমত করে জান্নাতবাসি হওয়ার এক উত্তম উপায়। যে বৃদ্ধ বয়সে তার পিতামাতা অথবা তাদের দুই জনের একজনকে পেল অথচ জান্নাত কামাই করে নিতে পারলনা সে ধ্বংস হোক বলে রাসুল(সাঃ) দোয়া করেছেন।

পৃথিবিতে মাকে যত সহজে খুশী করা যায় , তা অন্য কোন মানুষকে খুশী করা যায় না। মায়েরা অল্পতেই তুষ্ট থাকে। সন্তানের সাফল্য দেখে মা জান্নাতী সুখ অনুভব করেন। মায়ের ঋণ গায়ের চামড়া দিয়ে পাপস বানিয়ে দিলেও তা শোধ করা যাবে না।

অথচ আমরা এমন হয়েগেছি আজকাল, নিজের পরিচয়, কর্তব্য ভুলে গেছি। হারিয়েছি আমার জন্ম গ্রহন থেকে বড় হওয়ার পেছনে কার অবদান বেশি তাকে। আমাদের প্রিয় মাকে আজ অনেকে শত্রু বানিয়ে ফেলেছি নৈতিকতা, ও জ্ঞানের বিপর্যয়ের কারনে।

যে মা সারা জীবন নিজের জীবন পানি করে আমাদের মানুষ করলেন, অথচ কয়েক দিনের পরিচিত হওয়া স্ত্রীকে পেয়ে তার কারনে  মা কে শত্রু বানিয়ে নিয়েছি। নিজে বউকে নিয়ে ভালো খাই অথচ মায়ের কোন খবর নেই না।

কোন সন্তানের প্রতি যদি মা অসন্তষ্ট হয়ে আকাশের দিকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন তাহলে আল্লাহ’তায়ালা তা তার জন্য অভিশাপ হিসেবে ধরে নেন। মায়ের দোয়া সবার আগে কবুল হয়। মায়ের ভালো দোয়া ইহকাল ও পরকাল এ সাফল্যের পাথেয়।  আর মা এমন এক নেয়ামত যা হারিয়ে গেলে আর পাওয়া  যায় না। যারা মাকে ছেড়ে বাইরে থাকেন , তারা আসলে  বুঝতে পারেন মা কে ছাড়া থাকতে কি পরিমান কষ্ট হয়।

তাই মা দিবসে পাঠকদের প্রতি আমার আবেদন। যারা আমরা মায়ের সাথে ভুল ব্যবহার করেছি, মাকে কষ্ট দিয়ে ফেলিছি। আর দেরি না করে মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেই। মা এত দয়ালু হাজার ভুল করলেও তিনি সাথে সাথে ক্ষমা করে বুকে টেনে নেন। আমরা যেন মায়ের ঠিকমত খেদমত করতে আমি, আল্লাহ আমাদের সেই তৌফিক দান করুন। আমিন।

প্রতিক্ষণ/এডি/মোস্তাফিজুর/আরেফিন/বাদল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G