ফর্সা হচ্ছেন নাকি ফ্যাকাসে ?

প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ৬, ২০১৫ সময়ঃ ৯:২৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৫১ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

forshaসৌন্দর্য আপন আলয়ে মনের মননে গহীন অরেণ্যের মতো নিশ্চুপ হয়ে লুকিয়ে থাকে। সময় তাকে খুঁজে নেয় তার নিজের মতো করে। যেভাবে রবি ঠাকুর তাঁর কবিতার মাঝে খুঁজে পেয়েছেন কালো মেয়ের সৌন্দর্য:
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি, কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক।
মেঘলাদিনে দেখেছিলেম মাঠে কালো মেয়ের কালো হরিণ‐চোখ।
ঘোমটা মাথায় ছিলনা তার মোটে, মুক্তবেণী পিঠের’পরে লোটে।
কালো? তা সে যতই কালো হোক, দেখেছি তার কালো হরিণ‐
চোখ……।
তবুও কিছু কিছু ব্যক্তির ব্যক্তিগত ধ্যান-ধারণা সমাজের অলিখিত আইনে পরিণত হয়ে গেছে সবার অজান্তে। আজ স্রষ্টার সৃষ্ট নারীর সৌন্দর্যকে কখনও প্রবল প্রশংসার বাণী শোনানো হচ্ছে । আবার আরেকদিকে কালো বলে প্রতিনিয়ত শুনতে হচ্ছে সামাজিক গঞ্জনা। তাই সবার দৃষ্টি এখন একদিকেই হেলে আছে। কীভাবে ফর্সা হওয়া যায় ? আচ্ছা সত্যিই কি স্রষ্টার নিয়মের বেড়াজাল ভেদ করে মানুষ ফর্সা হওয়ার কোনো উপায় বের করতে পেরেছে। নাকি তা এক নিছক মায়ার ধুম্রজাল?shajghor_Skin-Black-spot

গায়ের রং কালো বলে সব সময় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন আর মনে মনে ভাবছেন সৃষ্টিকর্তা আপনার সাথে কেন এমন করলো। মাঝে মাঝে এই নিয়ে আপনার হতাশার শেষ থাকে না । নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে এক সময় সিদ্ধান্ত নিলেন এবার আপনাকে ফর্সা হতেই হবে। কিন্তু কি করে? এমন সময় আপনার কোন এক শুভাকাঙ্ক্ষী পরামর্শ দিলো রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারের। এসব ক্রিম বাজারে পাওয়া যাচ্ছে বেশ সুলভ মূল্যে। বিলবোর্ড,টেলিভিশন,পত্রিকা,ম্যাগাজিন বিভিন্ন মাধ্যমে এসব ক্রিমের বিজ্ঞাপন দেখছেন আর ভাবছেন এবার তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে আর কালো বলে কারো কাছে ছোট হয়ে থাকতে হবে না। কিন্তু গায়ের রং ফর্সা করার চিন্তায় আপনার ভাবনায় একেবারেই এলো না এসব ক্রিমের কোনও পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে কিনা!

হঠাৎ এইসব ফেয়ারনেস ক্রিম ব্যবহারের ফলে সাময়িকভাবে ত্বকের রং কিছুটা ফর্সা হলেও দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার করলে ত্বকের ক্ষতি হয় । ত্বকের জন্য ক্ষতিকর এই সকল রং ফর্সাকারী ক্রিম ব্যবহারকারীরা ভাবতে পারেন এই ক্রিম ব্যবহারের ফলে তাদের ত্বকের রং এ পরিবর্তন এসেছে। আগের চেয়ে একটু ফর্সা দেখাচ্ছে। আসলে তাদের ফর্সা নয় ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। এর ফলে অনেক সময় ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। নিজস্ব মন্তব্য নয় বিভিন্ন গবেষণায় এই সব তথ্য পাওয়া যায়।forsha 2

গবেষণায় দেখা গেছে, অধিকাংশ রং ফর্সাকারী পণ্যে মারকিউরাস কোরাইডের (পারদযৌগ) মতো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্রায় সব ফর্সা হওয়ার ক্রিমেই মেশানো থাকে পারদ। যার থেকে ত্বকের অ্যালার্জি, এমনকি প্রাণঘাতী ক্যান্সারও হতে পারে। অধিকাংশ রং ফর্সাকারী পণ্যে মারকিউরাস ক্লোরাইডের মতো অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্টস ব্যবহার করা হয়, যা ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। মারকিউরাস ক্লোরাইড মূলত ব্লিচের কাজ করে, আর এটাই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এ ধরনের ক্রিম নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বক পাতলা হয়ে যায় ও টানটান ভাব হারায়। এতে ব্রণও সৃষ্টি হয়।

সম্প্রতি ভারতের সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) পলিউশন মনিটরিং ল্যাবে পরীক্ষা করা সবকটি ফেয়ারনেস ক্রিমেই পারদ পাওয়া গেছে ৪৪ শতাংশেরও বেশি।

এছাড়াও ফেয়ারনেস ক্রিম ত্বককে ফটোসেনসেটিভ বা আলোক সংবেদনশীল করে তোলে। তাই এ ধরনের ত্বকে সূর্যের রশ্মি তুলনামূলক বেশি প্রভাব ফেলে এবং গুটি ও চুলকানি তৈরি হয়। এছাড়া অনেক সংবেদনশীল ত্বকে অয়েল প্যাক, ফেশিয়াল কিংবা ম্যাসাজ করলেও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। ফর্সা হওয়ার ক্রিম কিংবা লোশনে অতিরিক্ত পর্যায়ে মেশানো হচ্ছে স্টেরয়েড। আর তা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার ফলে ত্বক উজ্জল করতে চর্মরোগের শিকার হচ্ছেন বহু নারীই।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/জেডএমলি

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G