সবুজ পাহাড়ের বুনো ঝর্ণা “খৈয়াছড়া”

প্রকাশঃ এপ্রিল ৬, ২০১৫ সময়ঃ ৯:১২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:১৩ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডট কম.

bec5d5f69b2965fe5778c813bb5d72b5জলপ্রপাতের মতোই স্বচ্ছ পানির ধারা গড়িয়ে পড়ছে পাথরের পর পাথর গড়িয়ে। নির্জন-শান্ত পাহাড়ের প্রায় আটটি ধাপ পেরুনোর পর আরো অনেকগুলো ঝর্ণাধারা সৃষ্টি করে আছড়ে পড়া স্রোত ধারার কল কল শব্দে নেমে এসেছে সমতলে। নাম না জানা লতাপাতা-গুল্ম, বাঁশবন, বুনোফুল ও ফলের গাছ আগলে রেখেছে পরম মমতায় সৃষ্টির বিস্ময় এই ঝর্ণাটিকে।

যে বুনো ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য থেকে চোখ ফেরানো যায় না সহজে। প্রকৃতির অপূর্ব এক সৃষ্টি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের এই খৈয়াছড়ার বুনো ঝর্ণাধারা। ইতোমধ্যে অনেক দেশী-বিদেশী পর্যটক বিমুগ্ধ হয়ে বলেছেন, মাধবকুন্ডকে ছাড়িয়ে দৈর্ঘ্য-প্রস্থসহ পানির লেবেল এবং প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে এটিই দেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণা। দুর্গম পাহাড়ের গহীনে বলেই খ্যাতি পায়নি ঝর্ণাটি।

উঁচু-নিচু অসংখ্য পাহাড় আর পাহাড়ের গায়ে নাম না জানা নানা রকম গাছের সবুজ পাহাড়কে মনে হয় যেন এক সবুজের অভয়ারণ্য। আর এই সবুজ পাহাড়ের বুক চিড়ে কল কল ধ্বনিতে নেমে আসছে বুনো ঝর্ণা খৈয়াছড়া। মিরসরাইয়ের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে বড়তাকিয়া এলাকার খৈয়াছড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের উল্টো দিকের মূল রাস্তা থেকে পিচঢালা পথ চলে গেছে রেললাইন পর্যন্ত। সেখান থেকে মেঠোপথ আর খেতের আইলের শুরু। তারপর চলতে চলতে হঠাৎ করেই যেন মাটি সরে গিয়ে উদয় হবে একটা ঝিরিপথের। টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে।29_giant

স্থানীয় লোকদের বাড়ি ও খেতের আইলের পাশে বেড়ে উঠেছে আম, নারিকেল আর পেঁপের বাগান। এরপর শুধু ঝিরিপথ ধরে এগিয়ে যাওয়া। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িংয়ের মিছিল! যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে তত দূর পর্যন্ত তাদের মনমাতানো ঝিঁঝি পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। হাঁটতে হাঁটতেই শুনতে পাওয়া যায় পানি পড়ার শব্দ। চারপাশে মন ভালো করে দেওয়া সবুজ দোল খাচ্ছে ফড়িংয়ের পাখায়। মাঝে মাঝে এখানে শোনা যায় হরিণের ডাক।

যেতে যেতে পরিচয় হবে বুনো অর্কিড, পাথরে লেগে থাকা প্রায় অদৃশ্য সবুজ শেওলা, অচেনা পাখিদের ডাক, ঘাসের কার্পেট বিছানো উপত্যকার সাথে। কিছুদূর হেঁটে একটা মোড় ঘুরলেই চোখের সামনে নিজের বিশালতা নিয়ে হাজির হবে খৈয়াছড়া ঝর্ণা।

অনেক ওপর থেকে একটানা পানি পড়ছে। সৌন্দর্যের শুরু এখান থেকেই, পর্যটকরা এখান পর্যন্ত এসেই চলে যায়, ওপরের দিকে আর যায় না। এই ঝর্ণার ওপরে আছে আরও আটটা ধাপ। এখানকার নয়টা ধাপের প্রতিটিতেই রয়েছে প্রশস্ত জায়গা, যেখানে তাঁবু টানিয়ে আরাম করে পূর্ণিমা রাত পার করে দেয়া যায়।

একটু চুপচাপ থাকলেই বানর আর হরিণের দেখা পাওয়া যায়। অদ্ভুত সুন্দর এই সবুজের বনে একজনই সারাক্ষণ কথা বলে বেড়ায়, বয়ে যাওয়া পানির রিমঝিম ঝর্ণার সেই কথা শুনতে শুনতে আর বুনো ফুলের মিষ্টি সুবাস নিতে ঘুমিয়ে পড়া যায় নিশ্চিন্তে। তৃষ্ণা পেলে বুনো ঝর্ণা থেকে সুপেয় পানি খেয়ে নিতে পারেন দর্শনার্থীরা।

এসব দৃশ্য দেখে ক্ষণিকের জন্য ভুলে যাবেন শহরের ব্যস্ততা, কোলাহল…। মনের মাঝে বইবে মাতাল হাওয়া… সে হাওয়ায় ভেসে যাবে জীবনের ক্লান্তি! এমন সুন্দর দর্শনীয় স্থান আমাদের কাছে অপরিচিত ছিল এতদিন, ভাবতেই অবাক লাগে। দুর্গম বুনো এই ঝর্ণা পিপাসু পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকছে প্রতিদিন।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G