ব্যাঙের সমুদ্র দেখা

প্রথম প্রকাশঃ জুন ১২, ২০১৫ সময়ঃ ১২:৪৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৫:৪৫ অপরাহ্ণ

সুকুমার রায়

গ্রামের ধারে কবেকার পুরান এক পাতকুয়োর ফাটলের মধ্যে কোলাব্যাং তার পরিবার নিয়ে থাকত। গ্রামের মেয়েরা সেখানে জল তুলতে এসে যেসব কথাবার্তা বলত কোলাব্যাং তার ছেলেদের সেইসব কথা বুঝিয়ে দিত—আর ছেলেরা ভাবত, ‘ইস্! বাবা কত জানে!’

একদিন সেই মেয়েরা সমুদ্রের কথা বলতে লাগল। ব্যাঙের ছানারা জিজ্ঞাসা করল— “হ্যাঁ বাবা! সমুদ্র কাকে বলে?” ব্যাং খানিক ভেবে বলল, “সমুদ্র? সে একরকম জন্তুর নাম।” তখন একটা ছানা বলল— “ওরা যে বলছিল সমুদ্র খুব ভয়ানক বড়bang হয়, আর তার মধ্যে অনেক জল থাকে— আর লোকেরা সাঁতার কেটে তা পার হতে পারে না।” তখন কোলাব্যাং মুশকিলে পড়ল। সে গাছপালা দেখেছে, বাড়িঘর দেখেছে— মানুষ কুকুর ঘটি বাটি নানারকম জিনিসপত্র দেখেছে, আর ছেলেবেলায় অনেক রকম জিনিসের গল্প শুনেছে। কিন্তু সমুদ্রের কথা ত কখন শোনেনি! তখন সে ভাবল সমুদ্রের কথা একটু খোঁজ করে দেখতে হবে।

পরদিন সকালে উঠেই কোলাব্যাং তার ছাতা পোঁটলা নিয়ে বলল, “আমি সমুদ্রের সন্ধান করতে যাচ্ছি।” তার গিন্নী কত কাঁদল, ছেলেরা নানারকম সুর করে তাকে বারণ করল কিন্তু কোলাব্যাং বলল, “না, এতে আমার জ্ঞানলাভ হবে— তোমরা বাঁধা দিও না।” এই বলে সে পাতকুয়ো থেকে উঠে একটা মাঠের দিকে চলল। ব্যাং বাইরে এসেই দেখে মানুষ কুকুর গরু তারা কেউ তার মতো লাফিয়ে লাফিয়ে চলে না— তাই দেখে সে ভাবল ‘লাফিয়ে চললে সবাই আমায় বেকুব ভাববে।’ এই ভেবে সে হেঁটে হেঁটে চলতে লাগল। কিন্তু অমন করে চলে তার অভ্যাস নেই— খানিক গিয়েই তার অনেক ক্লান্ত বোধ হল।

মাঠের ওপারে আর এক গ্রামের কাছে এক গর্তের মধ্যে মেটে ব্যাংদের বাসা ছিল। মেটে ব্যাঙেরাও সমুদ্রের কথা শুনেছে, তাই তাদের মধ্যে একজন বেরিয়েছে সমুদ্রটা দেখতে। মাঝখানে দুই ব্যাঙের দেখা হল। কোলাব্যাং বলল, “আমি ফাটল-কুয়োর কোলাব্যাং, যাচ্ছি সমুদ্রে।” মেটে ব্যাং বলল, “আমি মেঠো-ব্যাং, আমিও যাচ্ছি সমুদ্রে।” তখন তাদের ভারি ফূর্তি হল।

কিন্তু সমুদ্রে যাবার পথ ত তারা জানে না। মাঠের মধ্যে একটা মস্ত ঢিপি ছিল; মেটে ব্যাং বলল, “ওর উপরে উঠে দেখি ত কিছু দেখা যায় কিনা।”

এই বলে তারা অনেক কষ্টে সেই ঢিপির উপর চড়ে সেখান থেকে একটা গ্রাম দেখতে পেল। মেটে ব্যাং বলল, “আরে দূর ছাই! এ রকম তো ঢের দেখেছি! আমার বাড়ির কাছেই এমন আছে।” কোলাব্যাং বলল, “তাই তো! আমিও ছেলেবেলা থেকে ও রকম কত দেখেছি। সব জায়গাই দেখছি একরকম। মিছামিছি আমরা হেঁটে মরলাম।”

তখন তারা ভারী বিরক্ত হয়ে বাড়ি ফিরে গেল। কোলাব্যাং তার ছানাদের বলল, “সমুদ্র-টমুদ্র কিছু নেই— ওসব মিছে কথা!”
প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G