ধনীদের রেখে যাওয়া কাপড়ে খুশি গরিব শিক্ষার্থীরা

প্রথম প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৯ সময়ঃ ৪:০৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৪:০৭ অপরাহ্ণ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার হাট-বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একটাই আশা শিক্ষার্থীদের কেউ যেন জামা-কাপড়ের কষ্ট না পায়। আর এটা ভেবে তারা বিদ্যালয়ের একটি রুমে শুরু করেছে ‘মহতি ঠিকানা’ কার্যক্রম। সেখানে রাখা আছে কাঠের আলনা আর স্টিলের আলমারি। আলনায় ছেলেদের জন্য রাখা আছে পুরাতন জামা-প্যান্ট, আর আলমারিতে মেয়েদের জন্য নানা ধরনের পোশাক। গরিব শিক্ষার্থীরা সেখান থেকে নিজের পছন্দের মতো কাপড় নিচ্ছেন, আর বিত্তশালীরা তার অব্যবহৃত কাপড়টি দিচ্ছেন। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, অভিভাবক সবাই এই কাজে যুক্ত হয়েছেন।।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে বারোবাজার এলাকায় ১৯৩৭ সালে হাট-বারোবাজার মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এ স্কুলে ৭৮৩ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ২০১৮ সালে তারা চিন্তা করেন এলাকায় এখনও অনেক অসহায়, গরিব মানুষ রয়েছেন। যাদের ছেলে-মেয়েরা ঠিকমতো কাপড় পায় না। অনেক অভিভাবক আছেন যারা একটা পোশাকের জন্য বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আসতে লজ্জা পায়। আবার অনেকে আছেন ঠিকমতো খাতা-কলম-কাগজ কিনতে পারে না। তাদের কথা চিন্তা করে প্রতিষ্ঠানের একটি রুমে স্থাপন করা হয় ‘মহতি ঠিকানা’। সেখানে একটি আলনা আর একটি আলমিরা দেয়া হয়েছে। দেখাভাল করার জন্য একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এখানে অপেক্ষাকৃত ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান ও তাদের অভিভাবকরা পুরাতন কিন্তু এখনও ব্যবহারযোগ্য জামা-কাপড় রেখে দেন। আর যারা অসহায় হতদরিদ্র তারা এখান থেকে পছন্দ করে সেই জামা-কাপড় নিয়ে যান। ছেলে-মেয়ে উভয়ের পোশাক এখানে রাখা হয়। শিক্ষকরাও তাদের পুরাতন কাপড় এখানে রেখে দেন। যা অসহায় অভিভাবকরা নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, তার একটাই পোশাক ছিল। অনেক সময় ময়লা হয়ে যেত, আবার অনেক সময় ভেজা থাকায় পড়ার উপযোগী ছিল না। এ কারণে বিদ্যালয়ের মহতি ঠিকানা থেকে সে একটি পোশাক নিয়েছে, তার মতো এরকম অনেকে পোশাক নিচ্ছে।

সেখানকার দায়িত্বে থাকা একজন শিক্ষক জানান, মহতি ঠিকানায় এক বছর ধরে এই কার্যক্রম চলছে। প্রায়ই শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা কাপড় জমা দিচ্ছেন, নিচ্ছেন। প্রথম দিকে লজ্জা পেলেও এখন অনেকেই এখান থেকে কাপড় নিয়ে ব্যবহার করছেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক সোহেল রানা বলেন, তারা এই মহতি ঠিকানার জন্য উপজেলার ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, বারোবাজার শাখায় পৃথক অ্যাকাউন্ট করেছেন (সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর- ০২১১১২২০০০০৬৯০৪) এই অ্যাকাউন্টটি প্রধান শিক্ষক ও তার (সোহেল রানা) যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। শুধু পুরাতন কাপড় নয়, এই অ্যাকাউন্টে এলাকার দানশীল ব্যক্তিদের দেয়া অনুদান দিয়ে হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের নতুন কাপড়ও দেয়া হয়।

তিনি জানান, ২০১৮ সালে এই মহতি ঠিকানার উদ্যোগ নিয়ে ২০১৯ সালের শুরুতেই ৭০ জন অসহায় শিক্ষার্থীকে নতুন পোশাক দিয়েছেন। বিদ্যালয়ের ছোট ছোট আয়, শিক্ষকদের আর এলাকার মানুষের দেওয়া অনুদানে তারা এই পোশাক দেন। এছাড়া বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে খাতা, কলম ও কাগজ দেন।

এ বিষয়ে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান রঞ্জু জানান, বর্তমান প্রধান শিক্ষক যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটি ডিজিটাল হয়েছে। মহতি ঠিকানা যেটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এতে হতদরিদ্ররা উপকৃত হচ্ছেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G