ইউজিসি’র চেয়ারম্যানের সাথে কুবি শিক্ষক সমিতির বাকবিতন্ডা

প্রকাশঃ মার্চ ১১, ২০১৭ সময়ঃ ১২:২১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:২৩ অপরাহ্ণ

তানভীর সাবিক, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি:

উপাচার্যের বাসভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতাদের অবস্থান

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের(কুবি) ৬৫তম সিন্ডিকেট সভায় যোগ দিতে এসে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নানের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতাদের বাকবিতন্ডা হয়। নানা অনিয়মের অভিযোগে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার পর তৃতীয় দিনের মতো এবার নিজ বাসভবনে তাকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে শিক্ষক সমিতি।

শুক্রবার দুপুর থেকে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। এদিকে শিক্ষক সমিতির বাধার মুখে কৌশলে উপাচার্যের নিজ বাসভবনে ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা প্রতিহত করার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৯টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনে আসেন শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ। এ সময় তারা বাসভবনের ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন। তার কিছুক্ষণ পরই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান উপাচার্যের বাসভবনের ফটকে উপস্থিত হন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নিয়ে অনেকটা ফিল্মী কায়দায় ফটক দিয়ে উপাচার্যের বাসবভনে প্রবেশ করেন। এদিকে সজোরে ধাক্কা দিয়ে ফটক খোলায় একজন শিক্ষক পড়ে গিয়ে আহত হন।

এরপর অন্যান্য সিন্ডিকেট সদস্যরা বাসভবনে প্রবেশ করেন। বাসভবনের প্রবেশের সময় শিক্ষকদের দাবি সম্পর্কে কথা বলতে গেলে শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে বাকবিতান্ডায় জড়িয়ে পরেন ইউজিসি চেয়ারম্যান। তখন তিনি রেগে গিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে ২০১৮ ও ২০১৯ এ কোনো প্রকল্প দেবেন না বলে শিক্ষক নেতাদের হুমকি দেন এবং বঙ্গবভন ঘেরাও করতে শিক্ষক নেতাদের বলেন। এছাড়া ইউজিসি চেয়ারম্যান শিক্ষকদের লক্ষ্য করে বলেন ‘পড়াচ্ছেন তো মনে হচ্ছে না’। এতে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। বঙ্গভবন ঘেরাও করার কথায় শিক্ষকরা বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানান। শিক্ষকরা বিষয়টিকে রাষ্ট্রদ্রোহীর সামিল বলে মন্তব্য করেন। তার প্রায় এক ঘন্টা পর বিশ্বদ্যিালয়ের সাংবাদিকদের সাথে উপাচার্যের বাসভবনে বৈঠক করেন ইউজিসি চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান বলেন ‘বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে আন্দোলন করাকে আমি সমর্থন করি না’। এছাড়াও বঙ্গবভন ঘেরাও করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন ‘আমি কী বলতে পারি আর না পারি তা আমিই জানি’। সিন্ডিকেট সভা শেষে দুপুরে উপাচার্যের বাসভবন থেকে বেরিয়ে যান ইউজিসি চেয়ারম্যান। পরে উপাচার্যের বাসভবনের কলাপসিবল গেটে তালা লাগিয়ে অবস্থান কর্মসূচী পালন করেন শিক্ষক নেতারা। 

উপাচার্যের বাসভবনে কুবির শিক্ষক নেতাদের সাথে ইউজিসি চেয়ারম্যানের বাকবিতন্ডা

এদিকে নানা কৌশলে তিন মাস পর ৬৫তম সিন্ডিকেট সভা উপাচার্য করেছেন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক সমিতি। নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ এনেই বৃহস্পতিবার এই সিন্ডিকেটকে প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। তবে প্রশাসনিক ভবনে সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হবার কথা থাকলেও গোপনে তা উপাচার্যের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শিক্ষক সমিতি। এছাড়াও সিন্ডিকেট সভা প্রতিহত করতে শিক্ষক সমিতি উপাচার্যের বাসভবনে অবস্থান নিলে উপাচার্য তার পেটুয়া বাহিনী দিয়ে শিক্ষকদের উপর হামলা করেন বলে উল্লেখ করেন শিক্ষক সমিতি। এই হামলায় তাদের তিন শিক্ষক আহত হয়েছেন বলেও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেন শিক্ষক সমিতি।                                                        

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসন প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘উপাচার্য এই সিন্ডিকেটে অনিয়মতান্ত্রিক নিয়োগগুলোকে চূড়ান্ত করেছেন। শিক্ষকদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। উপাচার্য এ ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত।’শিক্ষক সমিতির নাম ব্যবহার করে কতিপয় শিক্ষক এ অযৌক্তিক দাবি করেছে বলে দাবি করেন প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বিশ্ববিদালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আলী আশরাফ প্রতিক্ষণকে বলেন, ‘আমার বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিব। শিক্ষক সমিতির দাবিকে তো সকল শিক্ষক সমর্থন করে না।’

উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ে অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য সিন্ডিকেট ও আত্মীয়করণের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ বেশ কয়েকটি দাবিতে ৭ মার্চ উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গত ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডরমেটরিতে পরিকল্পিত হামলা ও ডাকাতি এবং ১৮ জানুয়ারি শিক্ষকদ্বয়ের বাসায় পরিকল্পিত হামলাকারীদের গ্রেফতার ও বিচারের আওতায় আনা, বিভিন্ন বিভাগের প্ল্যানিং কমিটিসমূহের সুপারিশ ছাড়াই অবৈধ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও অনিয়মতান্ত্রিক সকল নিয়োগ বাতিল করাসহ শিক্ষক ডরমেটরিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ও ডেপুটিভাতা ভোগকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করাসহ মোট চার দফা দাবিতে গত বুধবার থেকে উপাচার্যের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছে শিক্ষক সমিতি।

 

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G