জীবিত মাহবুবাকে মৃত ভেবে লাশঘরে পাঠানো হয়েছিল

প্রকাশঃ আগস্ট ২১, ২০১৭ সময়ঃ ১২:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:০০ অপরাহ্ণ

মৃত ভেবে লাশঘরে পাঠানো হয়েছিল মাহবুবাকে। সেখানে লাশ শনাক্ত করতে গিয়ে তাকে জীবিত দেখতে পান স্বেচ্ছাসেবকলীগের এক নেতা। মরতে মরতে প্রাণ ফিরে পান সাভারের মাহবুবা পারভীন। তবে ফিরে পাওয়া এই প্রাণ দুর্বিসহ যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে তাকে। গোটা শরীরে গ্রেনেডের ১৮শ স্প্লিন্টার বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।

মাহবুবা বলেন, সেদিনের সন্ত্রাসবিরোধী জনসভায় ট্রাক দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল মঞ্চ। মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শুনছিলাম আর স্লোগান দিচ্ছিলাম। সবশেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য চলছিল। বক্তব্য শেষে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলার সঙ্গে সঙ্গে বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় গ্রেনেড। তখন দাঁড়ানো অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে যাই। শুধু এটুকুই বলতে পারি। এরপর যখন চোখ খুলি তখন ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরের দিন মাহবুবার ছবি ছাপানো হয় দেশের সংবাদপত্রগুলোতে। তাতে দেখা যায় মঞ্চের একেবারে সামনের অংশে রক্তাত্ত অবস্থায় পড়ে আছে মাহবুবার নিথর দেহ। গুরুতর আহত আইভী রহমানের পাশে যে তিনজন নারীকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেছে তাদের মধ্যেই ছিলেন মাহবুবা।

সেদিনের ঘটনা সম্পর্কে মাহবুবা আরো বলেন, গ্রেনেড বিস্ফোরিত হওয়ার পর মানুষজন ছোটাছুটি শুরু করে দেয়। সবাই পা দিয়ে মাড়িয়ে যায়। এতে আমার ডান হাত আলাদা হয়ে যায় দেহ থেকে। গ্রেনেডের আঘাতে রক্তাক্ত হয়ে পড়ি। ভারতের চিকিৎসকরা সারা দেহে গ্রেনেডের ১৮০০ স্প্লিন্টার শনাক্ত করেন।

গ্রেনেড হামলায় আহতদের চিকিৎসার দায়ভার এড়িয়ে যাননি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার তত্ত্বাবধানে দেশ বিদেশে চিকিৎসা হয়েছে মাহবুবার। তবে এখনও স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি তিনি। অন্যের সাহায্য আর লাঠির উপর ভর করেই ঘরের বাইরে বের হতে হয় তাকে। ওষুধ খাওয়া বাদ দিলেই যন্ত্রণা হয় তীব্র।

সাভারের বাজার রোডে বেড়ে ওঠা মাহবুবা দম্পত্য জীবনে সঙ্গী হিসেবে যাকে পেয়েছিলেন তিনি বিমান বাহিনীর সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদ। গ্রেনেড হামলার পর দুর্বিষহ জীবনে স্বামীই ছিলেন মাহবুবার কাছে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। দিনের পর দিন তিনিই প্রেরণা যুগিয়ে গেছেন মাহবুবার মনে। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর স্বামীর মৃত্যুর পর পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন মাহবুবা।

মাহবুবা বলেন, রাতে যখন স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠতাম, তখন তার (স্বামীর) সেবা যত্নে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। লোকাল বাসে হাসপাতাল যাওয়া আসার সময় ছায়ার মত পাশে থাকতেন তিনি। কিন্তু এখন তার অভাব আমাকে আরও অসহায় করেছে। শরীরে যন্ত্রণার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। জীবন এখন আমার কাছে একটি অভিশাপ।

নৃশংস ঐ হামলার জন্য বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দায়ী করে মাহবুবা পারভীন বলেন, তারেক রহমান জড়িত না থাকলে এত বড় হামলা কিছুতেই সম্ভব ছিল না। কই এখন তো খালেদা জিয়ার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয় না! তারেক রহমানকে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা দরকার। যেন এমন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার আর কেউ না হয়।

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

May 2024
S S M T W T F
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
25262728293031
20G