পাসপোর্ট প্রক্রিয়ায় বড় পরিবর্তন: পুলিশ ভেরিফিকেশন ছাড়াই হবে বায়োমেট্রিক যাচাই

প্রকাশঃ নভেম্বর ২৬, ২০২৫ সময়ঃ ৭:১৬ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:১৬ অপরাহ্ণ

ই-পাসপোর্ট সেবায় নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা বাড়াতে পাসপোর্ট যাচাই–ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকার। এখন থেকে পাসপোর্ট ইস্যু বা নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন আর প্রয়োজন হবে না। এর পরিবর্তে আবেদনকারীর এনআইডিতে সংরক্ষিত আঙুলের ছাপ ও ছবির সঙ্গে তাৎক্ষণিক বায়োমেট্রিক মিলিয়ে পরিচয় যাচাই করা হবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক এক বৈঠকে দ্রুত এই ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট নেওয়া এবং একাধিক নামে পাসপোর্ট তৈরির সুযোগ বন্ধ করতেই সরকার এ আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ করছে।

নতুন ব্যবস্থায় ই-পাসপোর্ট এনরোলমেন্ট সেন্টারে আঙুলের ছাপ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা এনআইডিতে সংরক্ষিত ছাপের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে। একই সঙ্গে মুখাবয়ব শনাক্তকরণ প্রযুক্তি ব্যবহার করে এনআইডিতে থাকা ছবির সঙ্গে ফেস ভেরিফিকেশন করা হবে। কোনো তথ্য না মিললে সেই আবেদন ‘রেড ফ্ল্যাগ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে ম্যানুয়াল যাচাইয়ে যাবে। এতে পরিচয় গোপন করে পাসপোর্ট নেওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্যে নেমে আসবে।

সরকারের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, অনলাইনে যাচাইকৃত এনআইডি বা জন্মসনদের তথ্যের ভিত্তিতেই পাসপোর্ট ইস্যু করা হবে। তাই আগে যে পর্যায়ে পুলিশি অনুসন্ধান করা হতো, তা আর প্রয়োজন নেই। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা মনে করেন, এনআইডি তৈরির সময়ই পূর্ণাঙ্গ বায়োমেট্রিক যাচাই সম্পন্ন হয়, তাই পাসপোর্টে একই যাচাই পুনরায় করার দরকার নেই। বরং এনআইডি ও পাসপোর্টের ডেটা একত্রিত হলে অপরাধ শনাক্ত ও নজরদারিতে এটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

বায়োমেট্রিক ডাটা অত্যন্ত সংবেদনশীল হওয়ায় নাগরিক সংগঠনগুলো ডাটাবেইসের নিরাপত্তা, অপব্যবহার রোধ এবং সীমিত ব্যবহারের বিষয়ে শক্ত আইন প্রয়োজন বলে মত দিচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, তথ্য বিনিময় সম্পূর্ণ এনক্রিপশন প্রযুক্তিতে হবে এবং প্রয়োজন ছাড়া কোনো ডাটা সংরক্ষণ করা হবে না।

শিশুদের ক্ষেত্রে পরিচয় যাচাই করা হবে তাদের ডিজিটাল জন্মসনদের ইউনিক নম্বরের মাধ্যমে, কারণ তাদের আঙুলের ছাপ সংরক্ষণ করা হয় না। মন্ত্রণালয়ের মতে, এই অনলাইন যাচাই পদ্ধতিও যথেষ্ট নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য।

প্রযুক্তিগত সংযোগ স্থাপনের কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। কয়েকটি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাইলট প্রকল্প চালুর প্রস্তুতিও চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ধাপে ধাপে এই নতুন বায়োমেট্রিক যাচাই ব্যবস্থা চালু হবে। সরকার আশা করছে, দ্রুত, স্বচ্ছ এবং নিরাপদ পাসপোর্ট প্রক্রিয়া আন্তর্জাতিক ভ্রমণে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা আরও বাড়াবে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G