বিলুপ্তির পথে টাঙ্গাইলের মাকু শিল্প
নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম:
তাঁতে কাপড় বোনার অতি প্রয়োজনীয় একটি যন্ত্রাংশ হচ্ছে মাকু। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা ও সহয়তার অভাবে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের মাকুশিল্প এখন বিলুপ্তির পথে।
অর্থের অভাব, বাজারজাত করণের সমস্যা, প্রয়জনীয় যন্ত্রাংশ ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে মাকুশিল্পীরা তৈরি করতে পারছেন না মাকু।
বিভিন্ন কারণে তাঁত শিল্পে ধস নামায় মাকু বিক্রি একেবারেই কমে গেছে বলে জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ মাকু শিল্পীরা। পাথরাইলের মাকু শিল্পী চিওরঞ্জন ও গোবিন্দ জানান, আধুনিক প্রযুক্তিতে এ এলাকায় মাকু তৈরির কারখানা গড়ে তোলার উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু সরকারী বা বেসরকারী পর্যায়ে কোন উদ্যোগ না থাকায় চরম বিপাকে পরতে হয়েছে তাদের। নলশোঁধা, পাথরাইল ও পাশ্ববর্তী অঞ্চল মিলে প্রায় ৮টি কুটির শিল্প পর্যায়ের মাকু তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব এলাকার তৈরি মাকু টাঙ্গাইলের তাঁত শিল্পের চাহিদা মিটিয়ে সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে। সারা বছর খুড়িয়ে খুড়িয়ে চললেও ঈদের সময় কাপড় উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় মাকুর চাহিদা বৃদ্ধি পায়। চীন থেকে আমদানি করা মাকুও এদেশে ব্যবহার করা হয়।
জানা যায়, মাকু তৈরিতে গর্জন কাঠ ব্যবহার করা হয়। এর সঙ্গে মাতি, ম্যাছকা, পুতি, লোহা ও স্পিংসহ বিভিন্ন উপকরণের সমন্বয়ে তৈরি হয় একটি পরিপূর্ণ মাকু। দেশে তৈরি প্রতি পিস মাকুর খুচরা মূল্যে ৮০-৯০ টাকা। পার্থক্যভেদে আবার কোনটি ১শ’২০ টাকার উপরে। এ মাকু দুই থেকে তিন মাস ব্যবহার করা যায়। অপরদিকে চীন থেকে আমদানিকৃত প্রতি পিস মাকু বিক্রি হয় ১৩০-১৫০ টাকায়।
তবে এ মাকু দ্বিগুন টেকসই হয়। চীনে মাকু তৈরিতে ওক কাঠ ব্যবহার করা হয় এবং তাদের রয়েছে উন্নত মানের মেশিন। চীনে তৈরির মাকুর সমপর্যায়ে যেতে কাঠ প্রসেসিং মেশিন, প্রেসার মেশিন,ও ফিনীশিং মেশিন দরকার। কিন্তু এসব এলাকার মাকু তৈরিকারী শিল্পীদের উন্নত মানের মেশিন কিনে কারখানা স্থাপনের সামর্থ নেই।
এ জন্য সরকারী সহায়তা বা সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হলে এ শিল্পের প্রসার ঘটবে বলে মাকুশিল্পীরা জানান। এক সময় টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল গ্রামের শতাধিক শ্রমিক মাকু তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু মাকু শিল্পে প্রকিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় হাত গুটিয়ে নিয়েছেন মাকু শিল্পীরা। একজন শ্রমিক দিনে বিশটি মাকু তৈরি করতে পারেন। কাজের উপর নির্ভর করে শ্রমিকের বেতন নির্ধারন করা হয়।
মাকু তৈরির কারখানার সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, আধুনিক প্রযুক্তিতে মাকু তৈরির কারখানা স্থাপন করা হলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে। দেশের মাকুর চাহিদা পূরণ করে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি করা যাবে। সরকার তাঁত শিল্পের উন্নয়নে ব্যবস্থা নিয়ে মাকু শিল্পের দিকে সু-দৃষ্টি দিলে মাকু শিল্পীরা আবার তাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে পারবেন বলে মনে করছেন এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
প্রতিক্ষণ/এডি/রানা














