রোহিঙ্গাদের কথা

প্রকাশঃ জুন ৩, ২০১৫ সময়ঃ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৫০ পূর্বাহ্ণ

মুনওয়ার আলম নির্ঝর

rohingyaঘুম থেকে ওঠার পর আর ঘুমোতে যাওয়ার আগে এখন সবচেয়ে বেশি যে শব্দটা শুনি তা হল ‘রোহিঙ্গা’। অনেকেই তাদের পক্ষে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি করছে কিন্তু বেশিরভাগ মানুষই জানে না ‘রোহিঙ্গা’ কারা। আমরা যদি সহজভাবে চিন্তা করি ‘রোহিঙ্গা’ কারা, তাহলে আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু মানুষ বিশাল জলরাশির মাঝে খাবার পানি ও খাদ্য ছাড়া মৃত্যুর প্রহর গুনছে। পাঠকদের জন্য রোহিঙ্গাদের ইতিহাস এবং বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হলো।

রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন মানুষ। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বসবাস। রাখাইন রাজ্যের আদি নাম আরাকান। যদিও রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষরা শত শত বছর ধরে সেখানে আছে কিন্তু মায়ানমার / বার্মা সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে কখনো নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি। রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্যসহ প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে বাস করে। জাতিসংঘের তথ্যমতে, রোহিঙ্গারা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠী।

খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আরাকান অঞ্চল শাসন করতো চন্দ্র বংশ। আরব বণিকদের একটা জাহাজ রামব্রী দ্বীপের তীরে ভেঙে পড়ে। কিছু আরব তীরে এসে স্থানীয়দের কাছে সাহায্য চায়। রাজা মহত ইং চন্দ্র তাদের সাহায্য করেন। কিছু আরব স্থানীয় নারীদের বিয়ে করে। এসব আরব বণিক বসতি স্থাপনের আর্জি করলে মহত ইং চন্দ্র তা মঞ্জুর করেন।

চতুর্দশ শতকে আরাকানে মুসলিমরা বসতি স্থাপণ করে। ততকালীন বৌদ্ধ রাজা নারেমেইখলি ( যিনি তার রাজ্য পুনরুদ্ধার করেছিলেন গৌড়ের সুলতান জালালুদ্দিন শাহের সহযোগিতায় ) তার রাজ দরবারে মুসলিম উপদেষ্টা এবং সভাসদদের স্বাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরে দক্ষিণের বৌদ্ধ বর্মীরা আরাকান দখল করে নেয়, নারেমেইখলি পরাজিত হন। আরাকান দখলের পর বৌদ্ধ বর্মীরা সব রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাড়িয়ে দিয়েছিলো। তখন প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা ততকালীন ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্গত বাংলায় ( বর্তমান চট্রগ্রাম এলাকায় ) পালিয়ে গিয়েছিলো।

তবে আরো একটি গল্প প্রচলিত আছে, আরব বণিকদের জাহাজ ভেঙ্গে যাবার পর বেঁচে যাওয়া লোকজন উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেন, আল্লাহর রহমতে বেঁচে গেছি। এই রহম থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা।

তবে ইতিহাস এটা জানায় যে, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ সাল পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল আয়তনের রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওফায়া এ রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়।

যখন ব্রিটিশদের দখলে মিয়ানমার আসে তখন ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করা হয়। কিন্তু তার মধ্যে রোহিঙ্গাদের নাম অন্তর্ভুক্তই ছিল না।

১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে এবং বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথে যাত্রা শুরু করে। সেসময়ে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এ জনগোষ্ঠীর কয়েকজন পদস্থ সরকারি দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করলে মিয়ানমারের যাত্রাপথ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হতে শুরু করে। রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগের নতুন অধ্যায়। সামরিক জান্তা তাদের বিদেশি হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হয় এবং ধর্মীয়ভাবেও অত্যাচার করা হতে থাকে।

রোহিঙ্গাদের মূল সমস্যা শুরু হয় ২০১২ সালে। জাতিগত দাঙ্গা লাগে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মাঝে। মুসলিমরা প্রাণ হারায় হাজারে হাজারে। পালিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। তারা পাড়ি দেয় থাইল্যান্ডের দিকে। বেশির ভাগ রোহিঙ্গাই থাই মাফিয়াদের হাতে পরে। নির্যাতিত হতে থাকে আরও বেশী। আর এখন পাওয়া যাচ্ছে থাই-মালোয়শিয়া সীমান্তে রোহিঙ্গাদের প্রচুর গণকবর।

প্রতিক্ষণ/এডি/নির্ঝর

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G