শিশুর নাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ৫, ২০১৫ সময়ঃ ২:১১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:১১ অপরাহ্ণ

ধর্ম চিন্তা ডেস্ক, প্রতিক্ষণ ডটকম:

Preaching Authentic Islam in Banglaশিশুর জন্মের পর তার জন্য একটি সুন্দর ইসলামী নাম রাখা প্রত্যেক মুসলিম পিতা-মাতার কর্তব্য।

মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মুসলমানদের ন্যায় বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঝেও ইসলামী সংস্কৃতি ও মুসলিম ঐতিহ্যের সাথে মিল রেখে শিশুর নাম নির্বাচন করার আগ্রহ দেখা যায়।

এজন্য তাঁরা নবজাতকের নাম নির্বাচনে পরিচিত আলেম-ওলামাদের শরণাপন্ন হন। তবে সত্যি কথা বলতে কী এ বিষয়ে আমাদের পড়াশুনা অতি অপ্রতুল।

তাই ইসলামী নাম রাখার আগ্রহ থাকার পরও অজ্ঞতাবশত আমরা এমনসব নাম নির্বাচন করে ফেলি যেগুলো আদৌ ইসলামী নামের আওতাভুক্ত নয়।

শব্দটি আরবী অথবা কুরআনের শব্দ হলেই নামটি ইসলামী হবে তাতো নয়। কুরআনে তো পৃথিবীর নিকৃষ্টতম কাফেরদের নাম উল্লেখ আছে। ইবলিস, ফেরাউন, হামান, কারুন, আবু লাহাব ইত্যাদি নাম তো কুরআনে উল্লেখ আছে; তাই বলে কী এসব নামে নাম রাখা সমীচীন হবে!? তাই এ বিষয়ে সঠিক নীতিমালা আমাদের জানা প্রয়োজন।

“আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে- আব্দুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা) ও আব্দুর রহমান (রহমানের বান্দা)।” [সহীহ মুসলিম]

এ নামদ্বয় আল্লাহর প্রিয় হওয়ার কারণ হল- এ নামদ্বয়ে আল্লাহর উপাসনার স্বীকৃতি রয়েছে। তাছাড়া আল্লাহর সবচেয়ে সুন্দর দুটি নাম এ নামদ্বয়ের সাথে সমন্ধিত আছে। একই কারণে আল্লাহর অন্যান্য নামের সাথে আরবী ‘আব্দ’ (বান্দা) শব্দটিকে সমন্ধিত করে নাম রাখাও উত্তম।

আব্দ’ (বান্দা) শব্দ সমন্ধিত করে কয়েকটি নাম:

আব্দুল আযীয ( পরাক্রমশালীর বান্দা),
আব্দুল মালিক ,
আব্দুল কারীম (সম্মানিতের বান্দা),
আব্দুর রহীম (করুণাময়ের বান্দা),
আব্দুল আহাদ (এক সত্তার বান্দা),
আব্দুস সামাদ ( পূর্ণাঙ্গ কর্তৃত্বের অধিকারীর বান্দা),
আব্দুল ওয়াহেদ (একক সত্তার বান্দা),

পক্ষান্তরে এই ‘আব্দ’ শব্দটিকে আল্লাহর নাম ছাড়া অন্য কোন শব্দের সাথে সমন্ধিত করে নাম রাখা হারাম। যেমন:

আব্দুল ওজ্জা (ওজ্জার উপাসক), আব্দুশ শামস (সূর্যের উপাসক),আব্দুল কামার (চন্দ্রের উপাসক), আব্দুল কালাম (কথার উপাসক) আব্দুন নবী (নবীর উপাসক), আব্দুল আলী (আলী এর উপাসক),আব্দুল হোসাইন (হোসাইন এর উপাসক) আব্দুল মোত্তালিব (মোত্তালিবের দাস),আব্দুল কালাম (কথার দাস),আব্দুল কাবা (কাবাগৃহের দাস),আব্দুন নবী (নবীর দাস),গোলাম রসূল (রসূলের দাস), গোলাম নবী (নবীর দাস),আব্দুস শামছ (সূর্যের দাস),আব্দুল কামার (চন্দ্রের দাস),আব্দুল আলী (আলীর দাস), আব্দুল হুসাইন (হোসাইনের দাস),আব্দুল আমীর (গর্ভনরের দাস), গোলাম মুহাম্মদ (মুহাম্মদের দাস), গোলাম কাদের (কাদেরের দাস) ইত্যাদি।

তবে আমাদের দেশে প্রেক্ষাপটে দেখা যায় নামের মধ্যে ‘আব্দ’ শব্দটা থাকলেও ডাকার সময় ‘আব্দ’ শব্দটা ছাড়া ব্যক্তিকে ডাকা হয়। যেমন আব্দুর রহমানকে ডাকা হয় রহমান বলে। আব্দুর রহীমকে ডাকা হয় রহীম বলে। এটি অনুচিত। যদি দ্বৈত শব্দে গঠিত নাম ডাকা ভাষাভাষীদের কাছে কষ্টকর ঠেকে সেক্ষেত্রে অন্য নাম নির্বাচন করাটাই শ্রেয়।

তাছাড়া যে কোন নবীর নামে নাম রাখা ভাল। যেহেতু তাঁরা আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা। নবী করিম (সাঃ) তাঁর নিজের সন্তানের নাম রেখেছিলেন ইব্রাহিম। কুরআনে কারীমে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। এর থেকে পছন্দমত যে কোন নাম নবজাতকের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।

যেসব নাম রাখা মাকরুহ :

ক) যেসব নামের মধ্যে আত্মস্তুতি আছে সেসব নাম রাখা মাকরুহ। যেমন, মুবারক (বরকতময়) যেন সে ব্যক্তি নিজে দাবী করছেন যে তিনি বরকতময়, হতে পারে প্রকৃত অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টো। অনুরূপভাবে বাররা (পূন্যবতী)।·

খ) শয়তানের নামে নাম রাখা। যেমন- ইবলিস, ওয়ালহান, আজদা, খিনজিব, হাব্বাব ইত্যাদি।

গ) ফেরাউনদের নামে নাম রাখা। যেমন- ফেরাউন, হামান, কারুন, ওয়ালিদ।[তুহফাতুল মাওদুদ ১/১১৮]

ঘ) বিশুদ্ধ মতে ফেরেশতাদের নামে নাম রাখা মাকরুহ। যেমন- জিব্রাইল, মিকাইল, ইস্রাফিল।

ঙ) যে সকল নামের অর্থ মন্দ। মানুষ যে অর্থকে ঘৃণা করে এমন অর্থবোধক কোন নাম রাখা। যেমন, কালব (কুকুর) মুররা (তিক্ত) হারব (যুদ্ধ)।

চ) একদল আলেম কুরআন শরীফের নামে নাম রাখাকে অপছন্দ করেছেন। যেমন- ত্বহা, ইয়াসীন, হামীম ইত্যাদি।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৭]

ছ) ইসলাম বা উদ্দীন শব্দের সাথে সম্বন্ধিত করে নাম রাখা মাকরূহ। ইসলাম ও দ্বীন শব্দদ্বয়ের সুমহান মর্যাদার কারণে।[ তাসমিয়াতুল মাওলুদ-বকর আবু যায়দ ১/২৫, তুহফাতুল মাওদুদ ১/১৩৬]·

জ) দ্বৈতশব্দে নাম রাখাকে শায়খ বকর আবু যায়দ মাকরুহ বলে উল্লেখ করেছেন। যেমন- মোহাম্মদ আহমাদ, মোহাম্মদ সাঈদ।

ঝ) অনুরূপভাবে আল্লাহর সাথে আব্দ (দাস) শব্দ বাদে অন্য কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করা। যেমন- রহমত উল্লাহ (আল্লাহর রহমত)।

ঞ) শায়খ বকর আবু যায়দের মতে রাসূল শব্দের সাথে কোন শব্দকে সম্বন্ধিত করে নাম রাখাও মাকরূহ। যেমন- গোলাম রাসূল (গোলাম শব্দটিকে যদি আরবী শব্দ হিসেবে ধরা হয় এর অর্থ হবে রাসূলের চাকর বা বাছা তখন এটি মাকরূহ। আর যেসব ভাষায় গোলাম শব্দটি দাস অর্থে ব্যবহৃত হয় সেসব ভাষার শব্দ হিসেবে নাম রাখা হয় তখন এ ধরনের নাম রাখা হারাম যা পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/ইসলাম

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G