অনিয়মে জর্জরিত কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল/পর্ব-১

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৫ সময়ঃ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১১:৫৭ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ বিশেষ

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালকে ঘিরে একের পর এক অভিযোগ উঠছে রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে। চিকিৎসা সেবা থেকে শুরু করে খাবার, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ওষুধ ও টেস্টের সুযোগ—সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম যেন নিত্যদিনের সঙ্গী।

রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে ডাক্তারদের অনুপস্থিতি নিয়মিত ঘটনা। ভর্তিকৃত রোগীদের জন্য নির্ধারিত খাবারও যথাযথভাবে দেওয়া হয় না। সকালের নাস্তায় ১০০ গ্রাম রুটি, একটি ডিম ও কলা দেওয়ার কথা থাকলেও রোগীরা বলছেন—এসব খাবার প্রায় দেখাই যায় না। দুপুরের মেন্যুতেও নিম্নমানের চাল, কম পরিমাণে মাছ-মুরগি পরিবেশন করা হয়।

হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন, সর্বত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। রান্নাঘরের অবস্থা আরও নাজুক—মেঝে ও চুলার চারপাশ গোয়ালঘরের মতো নোংরা। টয়লেটগুলোতে দুর্গন্ধ, মশা-মাছির উপদ্রব এমন পর্যায়ে যে রোগী-স্বজনরা দিনের বেলাতেই কষ্ট পান।

সরেজমিনে দেখা গেছে, অনেক টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যেই মশা-মাছি ডিম পেড়ে বংশবিস্তার করছে। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো—২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই হাসপাতালের গ্যাস সংযোগ বৈধ কিনা তার কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তত্ত্বাবধায়ক।

আউটডোর সেবায় রোগীদের ভোগান্তি আরও বেশি। সময়মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না, অনেক সময় কক্ষে থেকেও ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন চিকিৎসকরা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কেটে ডাক্তার দেখানোর পরও রোগীদের বেশিরভাগ সময় বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হয়। সরকারি সরবরাহে কেবল নাপা বা প্যারাসিটামলের মতো সস্তা ওষুধই মেলে, কিন্তু প্রয়োজনীয় দামী ওষুধ প্রায়ই থাকে না।

টেস্টের ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেক জরুরি পরীক্ষা হাসপাতালে না করে বাইরে করতে বাধ্য হন রোগীরা। এসব অভিযোগ নিয়ে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মিজানুর রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিককে এড়িয়ে যান, এমনকি ছবি তোলার কারণে বিরূপ আচরণ করেন।

উল্লেখ্য, ২০০১ সালের জুন মাসে কুয়েতি রিলিফ ফান্ডের সহায়তায় ৬ নম্বর সেক্টরের ইশাখা এভিনিউতে হাসপাতালটি চালু হয়। তবে ২০০২ সালেই কুয়েতি ত্রাণ তহবিল সাহায্য বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হলেও টেকসই হয়নি। শেষ পর্যন্ত ২০০৯ সালে বাংলাদেশ সরকার হাসপাতালের দায়িত্ব নেয়। ২০১৬ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর একজন পরিচালক নিয়োগ দেয়।

২০২০ সালে ২০০ শয্যাবিশিষ্ট এ হাসপাতালে ২৬টি আইসিইউ, ৯৫ জন ডাক্তার ও ১১৩ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হয়। করোনা মহামারির সময় হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বর্তমানে নানামুখী অনিয়মে সেবার মান প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G