‘দেশে উৎপাদিত খাদ্যের ৩৪ শতাংশ নষ্ট হচ্ছে’
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
বাংলাদেশে উৎপাদিত খাদ্যের প্রায় ৩৪ শতাংশ নষ্ট বা অপচয় হচ্ছে বলে এক গবেষণায় উঠে এসেছে। এর ফলে শুধু কৃষিজমিই নয়, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছে দেশ।
সোমবার রাজধানীতে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), ঢাকার রয়েল ডেনিশ দূতাবাস, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘শূন্য খাদ্য অপচয়ের পথে: বাংলাদেশে একটি টেকসই খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলা’ শীর্ষক সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।
গবেষণায় বলা হয়, দেশে প্রতি বছর প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ টন খাবার নষ্ট হয়। এতে ২৭ শতাংশ কৃষিজমি থেকে উৎপাদিত খাদ্য ভোক্তার টেবিলে পৌঁছায় না। এর ফলে প্রায় ১৩ শতাংশ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা দেশের জিডিপির প্রায় ৪ শতাংশের সমান ক্ষতি করছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আক্তার বলেন, “কৃষকরা সীমিত সহায়তার কারণে খাদ্য উৎপাদনে হিমশিম খান। সংরক্ষণ সুবিধা, দাম নির্ধারণ বা অবকাঠামো না থাকায় বিপুল পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়। অথচ অপুষ্টির কারণে এখনো দেশে নারীসহ বহু মানুষ ভুগছে।”
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ইয়াসিন বলেন, “খাদ্য অপচয়ের কারণে আমরা মাটি, অর্থ, পানি ও শ্রম হারাচ্ছি। ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য ঝুঁকি বাড়ছে।”
বাংলাদেশে ডেনমার্ক দূতাবাসের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ডার্স কার্লসেন জানান, বিশ্বে উৎপাদিত মোট খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়, যা চীনের চেয়েও বড় আকারের জমি ব্যবহার করে উৎপাদিত।
এফএওর ডেপুটি প্রতিনিধি দিয়া সানো বলেন, “বিশ্বে উৎপাদিত খাদ্য দিয়ে বৈশ্বিক জনসংখ্যার ১ দশমিক ৫ গুণ বেশি মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব। কিন্তু অপচয় ও দুর্বল অবকাঠামো খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করছে।”
ডব্লিউএফপির ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর জেসি উড বলেন, বাংলাদেশে ফসল তোলার পর ৮-১৫ শতাংশ চাল এবং ২০-৪০ শতাংশ ফল ও সবজি নষ্ট হয়, যার অর্থনৈতিক ক্ষতি প্রায় ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, “খাদ্য অপচয় মানে পরিবেশগত সম্পদের অপচয়। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশে খাদ্য অপচয় কমানো অপরিহার্য।”
সম্মেলনে সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন অংশীদার, বিশেষজ্ঞ ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন এবং খাদ্য অপচয় রোধে করণীয় নিয়ে মতবিনিময় করেন।












