বারবার খুলে পড়ছে মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড: কেন ঘটছে এমন দুর্ঘটনা?

প্রকাশঃ অক্টোবর ২৮, ২০২৫ সময়ঃ ৯:১১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৯:১৬ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ বিশেষ

ঢাকা মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড এক বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয়বার খুলে পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এবার ফার্মগেট স্টেশনের কাছে পিলার থেকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন পথচারী আবুল কালাম আজাদ (৩৫)। এই মৃত্যুতে নগরবাসীর মনে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে, একইসঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে—নির্মাণে ত্রুটি নাকি মানহীন উপকরণ দায়ী?

রোববার (২৬ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনের পাশের ৪৩৩ নম্বর পিলার থেকে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে আজাদের মাথায় লাগে। তেজগাঁও থানার ওসি মোবারক হোসেন জানান, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনের ফুটপাত দিয়ে হাঁটার সময় তার মাথায় প্যাডটি পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়।

এর আগেও ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর খামারবাড়ি এলাকায় একইভাবে একটি বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়েছিল। সেদিন কেউ হতাহত না হলেও মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ১১ ঘণ্টা।

একই ধরনের দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তি হওয়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে নির্মাণ ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিকে দায়ী করছেন। কেউ কেউ আবার বুয়েটের আগের পরীক্ষার কথা তুলে ধরে মানহীন উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ করছেন।

বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, “বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়া মানহীনতার নয়, নির্মাণজনিত ত্রুটির ফল। প্যাড মানসম্মত না হলে নষ্ট হবে, কিন্তু খুলে পড়বে না। নির্মাণে গাফিলতি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবেই বারবার এমন হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেন, “মেট্রোরেল নির্মাণে গুণগত কাজ হয়নি। এখন একজন মানুষ মারা গেছেন, দায় এড়িয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। দায় নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে আরও শঙ্কা বাড়বে।”

ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (লাইন-৬) প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আব্দুল ওহাব বলেন, “ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মেরামতের কাজ চলছে। তদন্তে ত্রুটি ধরা পড়লে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এ ঘটনায় নিহতের পরিবারকে তাৎক্ষণিকভাবে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং একজন কর্মক্ষম সদস্যকে মেট্রোরেলে চাকরির সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেতু ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান।

নিহত আবুল কালাম আজাদ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার বাসিন্দা। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে ঢাকায় ট্রাভেল এজেন্সি পরিচালনা করতেন। মৃত্যুর আগের রাতে তিনি ফেসবুকে লিখেছিলেন, “ইচ্ছে তো অনেক, আপাতত যদি জীবন থেকে পালিয়ে যেতে পারতাম।” দুর্ঘটনার পর তার স্ত্রীর আহাজারিতে ভেসে ওঠে ফার্মগেট এলাকা।

বিয়ারিং প্যাড কী?

রাবার ও ইস্পাতের সংমিশ্রণে তৈরি এই প্যাড মেট্রোরেলের উড়ালপথ ও পিলারের মাঝখানে স্থাপন করা হয়। এটি ঘর্ষণ ও কম্পন শোষণ করে কাঠামোর ভারসাম্য রক্ষা করে। তবে এই অংশটি সঠিকভাবে সংযোজন বা রক্ষণাবেক্ষণ না হলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকে যায়।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G