পুলিশের লাঠিচার্জে পণ্ড শিক্ষকদের ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচি

প্রকাশঃ নভেম্বর ৮, ২০২৫ সময়ঃ ৬:৪৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:৪৩ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

চাকরিতে দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা ও তিন দফা দাবিতে শাহবাগ অভিমুখে পদযাত্রা করা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ, জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে। শনিবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে শিক্ষকরা ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচি পালন করতে শাহবাগের দিকে অগ্রসর হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ারশেল ছোড়ে। এতে বহু শিক্ষক আহত হন, কয়েকজনকে আটক করা হয়।

লাঠিচার্জ ও জলকামানের আঘাতে আহতদের অনেকেই রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। পুলিশের বাধার মুখে প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে ছত্রভঙ্গ হয়ে শিক্ষকরা পুনরায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফিরে যান।

প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন,

“পুলিশের হামলায় অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। কারও পা ভেঙেছে, কারও চোখে আঘাত লেগেছে। গুরুতর আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”

তিনি আরও জানান, আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হওয়ার পর আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক জানান, বিকেল থেকে অন্তত ১১০ জন আহতকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের মধ্যে শিক্ষক, পুলিশ সদস্য ও রিকশাচালকও রয়েছেন। বেশিরভাগ আহত প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন, বাকিরা চিকিৎসাধীন।

অন্যদিকে, রমনা জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মাসুদ আলম বলেন,

“শিক্ষক নেতাদের বুঝিয়ে শহীদ মিনারে ফেরত পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ একদল ব্যারিকেড ভেঙে ফেলে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

দুপুরে খুলনায় এক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার বলেন,

“প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়া হয়েছে, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এখন দশম গ্রেডের দাবি করে আন্দোলন করা যৌক্তিক নয়।”

এর আগে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শুরু হয় শিক্ষকদের লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি। শুক্রবার রাত থেকেই দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শিক্ষকরা সেখানে জড়ো হন। সকালে সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ ‘কলম বিসর্জন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেন।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া চারটি সংগঠন হলো—

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন),

প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি,

প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)

ও সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ।

প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন,

“মন্ত্রণালয় ১১তম গ্রেডের ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা এখনো ১৩তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছি, যা দিয়ে জীবনযাপন কঠিন।”

অন্যদিকে, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, প্রধান শিক্ষকদের পদ ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার সুপারিশ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে, যা বর্তমানে পে কমিশনে আলোচনাধীন।

আন্দোলনরত শিক্ষকরা বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে যদি দ্রুত ১১তম গ্রেডের গেজেট প্রকাশ করা হয়, তবে তারা শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাবেন। তবে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G