প্রবাসীরা তিন ফোনের বেশি আনতে পারবেন না
মোবাইল আমদানি নীতিতে বড় পরিবর্তন এনেছে সরকার। নিয়েছেন সাতটি সময়োপযোী সিদ্ধান্ত।বাংলাদেশের মোবাইল ফোন বাজারকে বহুদিন ধরে জর্জরিত করে আসা তিনটি বড় সমস্যা হল-
চোরাচালান,অযৌক্তিক শুল্ক এবং ফোন রেজিস্ট্রেশনের অনিয়ম। অবশেষে সরকার নীতিগতভাবে এ সমস্যগুলোকে একসাথে মোকাবিলা করতে যাচ্ছে।
১লা ডিসেম্বরের বৈঠকে নেওয়া সাতটি সিদ্ধান্ত শুধু টেকসই বাজার গঠনের সংকেতই নয়, বরং দেশে “ডিজিটাল ডিভাইস গভর্ন্যান্স”-এর নতুন অধ্যায়ের সূচনা।
১. প্রবাসীদের জন্য তিনটি ফোন ট্যাক্স-ছাড়া আনার সুযোগ দিয়েছে।
বিএমইটি কার্ডধারী প্রবাসী শ্রমিকদের তিনটি ফোন ফ্রি আনার সুযোগ একটি বড় পরিবর্তন।
এ পদক্ষেপের পেছনে তিনটি কারণ—
ক. প্রবাসীদের অর্থনৈতিক অবদান স্বীকৃতি
রেমিট্যান্স সংকটের সময় সরকারের এই উদ্যোগ প্রবাসী শ্রমিকদের উদ্দেশে “পজিটিভ জেসচার”—রেমিট্যান্স বাড়ানোর মনস্তাত্ত্বিক কৌশলও হতে পারে।
খ. বিমানবন্দরের চোরাই সিন্ডিকেট ভাঙা
ফোন চক্র প্রবাসীদের ব্যবহার করে অবৈধ মোবাইল ঢুকাচ্ছিল।
রসিদ বাধ্যতামূলক করে সরকার সেই রাস্তা বন্ধ করতে চাইছে।
গ. বাজারে বৈধ ফোনের সরবরাহ বৃদ্ধি
বেশি ফোন ট্যাক্স-ফ্রি ঢুকলে বাজারে বৈধ ডিভাইসের পরিমাণ বাড়বে এবং চোরাচালানিরা ধাক্কা খাবে।
২. মোবাইল আমদানির শুল্ক কমানো: দীর্ঘদিনের দাবি, অবশেষে বাস্তবায়নের পথে
৬১% আমদানি শুল্ক ছিল এক প্রকার “মার্কেট কিলার”।
ফলে—
•অধিকাংশ মানুষ বৈধ ফোন কিনতে নিরুৎসাহিত
•চোরাই ফোনের বাজার ফুলেফেঁপে ওঠা
•দেশি কারখানার বিনিয়োগ ঝুঁকির মুখে
•আইএমইআই-রেজিস্ট্রেশন কঠিন হওয়া
সরকারের পক্ষ থেকে জানা গেলো অযৌক্তিক শুল্কই চোরাচালান বাড়িয়েছে।
শুল্ক কমিয়ে আনা মানে—
•বাজারে আসল ফোনের দাম কমবে
•গ্রাহক উপকৃত হবে
•রাজস্ব কমবে বটে, কিন্তু বৈধ আমদানি বাড়লে তা পুষিয়ে যাবে
•চুরিচামারি, ক্লোন ফোন স্বাভাবিকভাবেই কমে যাবে
৩. দেশি মোবাইল ফ্যাক্টরি বাঁচাতে শুল্ক-ভ্যাট পুনর্গঠন – স্ট্র্যাটেজিক পদক্ষেপ
বাংলাদেশে এখন ১৩–১৪টি মোবাইল অ্যাসেম্বলি প্ল্যান্ট।
যদি আমদানির কর কমিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু দেশি উৎপাদনে ভ্যাট কমানো না হয়, তাহলে—
•বিদেশি কোম্পানি কম দামে ফোন ঢুকিয়ে দেশি কারখানাকে ধসিয়ে দিতে পারে
•বিদেশি বিনিয়োগকারী চলে যেতে পারে
•স্থানীয় ডিভাইস ইকোসিস্টেম পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
এ কারণেই সরকার দুই দিকই সমানভাবে সমন্বয় করছে—এটি একটি ইন্ডাস্ট্রি-সেভিং স্টেপ।
৪. চোরাই/ক্লোন/রিফারবিশড ফোন নিষিদ্ধ — ‘ডিজিটাল বর্জ্য’ বন্ধের সিদ্ধান্ত
গত কয়েক বছরে দেশি বাজারে “রিফারবিশড ও ক্লোন ফোন” হয়ে উঠেছে বড় বিপদ।
চীন, ভারত, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে পুরনো, বাতিল, কেসিং পাল্টানো ইলেকট্রনিক বর্জ্য বাংলাদেশে ঢুকছিল।
এর ঝুঁকি—
•স্বাস্থ্যঝুঁকি
•ডেটা সিকিউরিটি সমস্যা
•ইমারজেন্সি কল ব্যর্থতা
•নেটওয়ার্ক ফ্রড
•ভোক্তা প্রতারণা
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে।
এটি সাইবার নিরাপত্তার জন্য একটি মাইলস্টোন সিদ্ধান্ত।
৫. ১৬ ডিসেম্বরের আগে বৈধ আইএমইআই–যুক্ত অনিবন্ধিত ফোনকে সুযোগ দেওয়া — বাস্তবধর্মী উদ্যোগ
এটি একটি প্র্যাগম্যাটিক সিদ্ধান্ত।
বাজারে থাকা প্রচুর ফোনের বৈধ আইএমইআই আছে, কিন্তু রেজিস্ট্রেশন হয়নি।
হঠাৎ বন্ধ করে দিলে—
•ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত
•সাধারণ ক্রেতারা ভুক্তভোগী
•বাজার অস্থির হবে
তাই সীমিত সময়ের জন্য কম কর দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
ক্লোন বা রিফারবিশড—কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।
৬. NEIR চালু হওয়ায় গুজব ছড়াচ্ছে — সরকার স্পষ্ট বলল: কোনো সচল ফোন বন্ধ হবে না
অনেকে ভাবছেন ১৬ ডিসেম্বরের পর ফোন বন্ধ হয়ে যাবে।
এটি পুরোপুরি গুজব।
NEIR চালুর উদ্দেশ্য—
•চোরাই ফোন শনাক্ত করা
•নেটওয়ার্ক নিরাপত্তা বাড়ানো
•সিম–আইএমইআই মেলানো
•মোবাইল ফ্রড কমানো
সচল ডিভাইস বন্ধ করার জন্য এটি নয়।
৭. ই–কেওয়াইসি ও আইএমইআই ডেটা সুরক্ষা আইন— ডিজিটাল নজরদারি নাকি নিরাপত্তা?
২০২৫ সালের টেলিযোগাযোগ সংশোধনী আইন ডেটা সুরক্ষাকে কেন্দ্র করে নতুন ধারা যুক্ত করেছে।
সিম–রেজিস্ট্রেশন তথ্য ফাঁস করলে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে।
এখানে সরকারের দ্বিমুখী লক্ষ্য—
১.সাইবার অপরাধ কমানো
২.নাগরিকের উপর ডিজিটাল মনিটরিং বাড়ানোর উপায় সৃষ্টি
বিশ্লেষকদের মতে, এটি দুই ধারার ব্যবহার ইতিবাচক হলে নিরাপত্তা বাড়বে,
অন্যথায় নজরদারি রাষ্ট্রের অভিযোগও উঠতে পারে।













