কুবির কর্মচারী ও শিক্ষার্থীর যোগসাজশে প্রশ্নপত্র চুরি!

প্রথম প্রকাশঃ মার্চ ২৪, ২০১৭ সময়ঃ ২:২৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ২:২৯ অপরাহ্ণ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও পরীক্ষার খাতা চুরি হয়েছে। এ ঘটনায় লিখিতভাবে দোষ স্বীকার করেছেন বিভাগের একজন অফিস সহকারী ও দুই শিক্ষার্থী।

গত সোমবার ওই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অসদুপায় অবলম্বনের ঘটনায় পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছ।

সিইসি বিভাগের একাডেমিক কমিটি পরীক্ষা বাতিলের পাশাপাশি ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শৃঙ্খলা কমিটির কাছে সুপারিশ করেছে।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত সোমবার সিএসই বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টারের ‘ফিজিক্স-২’ কোর্সের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছিল। সেই দিন মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে আসেন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. সিরাজুল ইসলাম। পরীক্ষা শুরুর আগে খাতা বিতরণের সময় সিরাজুলের কাছে লিখিত উত্তরপত্র পান কেন্দ্রের এক পরিদর্শক। পরে লিখিত উত্তরপত্রটি জব্দসহ ওই শিক্ষার্থীকে বিভাগের সভাপতির কক্ষে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে এ ঘটনায় আরো দুজনের নাম বলেন। সেই দুজন হলেন অফিস সহকারী নির্মল চন্দ্র দাস ও সিরাজুলের সহপাঠী শাখাওয়াত হোসেন।

পরে প্রায় তিন ঘণ্টা তিনজনকে জেরা করা হয়। জেরা শেষে তিনজনই চুরির সঙ্গে জড়িত বলে লিখিত স্বীকারোক্তি দেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম বিভাগের স্টাফ নির্মল চন্দ্র দাসের মাধ্যমে কাজটি করেছেন। এতে সহযোগিতা করেছেন সিরাজুলের বন্ধু মো. শাখাওয়াত হোসেন। প্রশ্ন মডারেশনের পর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে নেওয়ার আগে অথবা পরে প্রশ্নপত্র চুরি করেন বিভাগের কর্মচারী নির্মল চন্দ্র দাস।

মাহফুজুর রহমান জানান, নির্মল আগের দিন শিক্ষার্থী সিরাজুলকে পরীক্ষার উত্তরপত্র সরবরাহ করেন। পরে সিরাজুল বাসা থেকে উত্তরপত্র লিখে নিয়ে এসে নির্মলকে দেন। পরের দিন তা পরীক্ষার কেন্দ্রে নিয়ে আসতে বলেন। পরীক্ষা কেন্দ্রে সিরাজুলকে উত্তরপত্র সরবরাহ করার সময় বিষয়টি কেন্দ্র পরিদর্শকের নজরে পড়ে। এর পর বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভার মাধ্যমে পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়। তা ছাড়া ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শৃঙ্খলা কমিটিকে সুপারিশ করেছে বিভাগ।

দায় স্বীকার করে লিখিত দেওয়ার বিষয়ে বিভাগের কর্মচারী নির্মল বলেন, ‘শাখাওয়াত হোসেনের মা বিভিন্ন সময় আমাকে ফোন করেন এবং ছেলের দিকে খেয়াল রাখতে বলতেন। তিনি বিভিন্ন সময় প্রশ্নপত্র দেওয়ার কথাও বলতেন। তবে আমি রাজি হইনি। তা ছাড়া প্রশ্ন ও উত্তরপত্র চুরির বিষয়টি বিভাগের কাউকে না বলার জন্য ওই শিক্ষার্থীরা আমাকে চাপ দিতে থাকেন। তাই ভয়ে সভাপতির কাছে মিথ্যা লিখিত দিয়েছি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষার্থী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনার সঙ্গে আমি একা নই, আরো অনেকেই জড়িত।’

সিরাজুল শুরুতে সাংবাদিকদের বলেন, অফিস সহকারী নির্মল চন্দ্র দাস পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দপ্তর থেকে তাঁকে প্রশ্ন ও উত্তরপত্র সরবরাহ করেছেন। পরে অবশ্য কথা পাল্টে উত্তরপত্র অফিস সহকারীর কক্ষ থেকে তিনি নিজেই চুরি করেছেন বলে স্বীকার করেন। তিনি দুটি উত্তরপত্র চুরি করেছিলেন। তার একটিতে লিখে পরীক্ষা কেন্দ্রে এনেছিলেন। আর ধরা পড়ার পর আরেকটি পুড়িয়ে ফেলেছেন।

সিরাজুলের বন্ধু শাখাওয়াতও প্রশ্নপত্র চুরির বিষয় স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে পরীক্ষা কমিটির সভাপতি ড. আবদুল মালেক বলেন, ‘পরীক্ষা কমিটির সদস্যরা আমাকে এক কপি প্রশ্নপত্র প্রিন্ট করে দিয়েছেন। আমি সেটা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর থেকে ছাপিয়ে খামে পুরে সিলগালা করি। কীভাবে প্রশ্ন চুরি হল, তা জানি না।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব ও উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নুরুল করিম চৌধুরী বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের কাছে ওই বিভাগ থেকে লিখিত অভিযোগ এসেছে। বিষয়টি নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

প্রতিক্ষণ/এডি/ কাউসার

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G