কেমন হবে সেহরি ও ইফতার?

প্রথম প্রকাশঃ জুন ১৮, ২০১৫ সময়ঃ ৯:৫৮ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

lüks-iftar-রোজা শুধু আত্মশুদ্ধির মাসই নয়, এ মাস আত্মনিয়ন্ত্রণেরও। নিজেকে একটি নির্দিষ্ট নিয়মে পরিচালিত করার মাধ্যমে শরীরে প্রতিষ্ঠিত হয় শৃঙ্খলা। বছরের ১১ মাস স্বাভাবিক নিয়মে খাওয়া-দাওয়া ও ঘুম হয়। তারপর হঠাৎ করেই সেহরি খাওয়ার নিয়মটি শুরু হয়। তাই এদিকে বিশেষ যত্ন না নিলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

রোজার সময় সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকার বিষয়টি শরীরের ওপর যে প্রভাব ফেলে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য এ সময়ে শরীরকে চালাতে হবে ভিন্ন নিয়মে। বিশেষ করে এ সময়ে খাবার গ্রহণে আনতে হবে বিশেষ পরিবর্তন। ঐতিহ্যগতভাবে আমরা সেহরি ও ইফতারে যেসব খাবার গ্রহণ করি সেগুলোর সবই যে যথাযথ তা কিন্তু নয়। এসব খাবারের মধ্যে কিছু খাবার রয়েছে যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো স্বাস্থ্যসম্মত কিংবা পুষ্টিকর খাবার হলেও সময়োচিত নয়।
স্বাভাবিকভাবে যেকোনো ধরনের খাবারই সেহরিতে খাওয়া যায়, তবে খেয়াল রাখতে হবে- খাবারটা যেন সহজপাচ্য ও স্বাস্থ্যসম্মত হয়।

ইফতারি

১. শরবত বা ডাবের পানি, কাঁচা ছোলা, কম তেলে ভাজা ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি অথবা আলুর চপ বা যেকোনো একটি তেলে ভাজা মুড়ি অথবা চিড়া এবং ফল।

২. যেদিন হালিম অথবা খিচুড়ি খাওয়া হবে সেদিন বেসনের বা ডালের তৈরি ভাজা খাবার এবং মুড়ি বা চিড়া বাদ দিতে পারেন। আবার নুডলস অথবা ফ্রায়েড রাইস খেলেও মুড়ি অথবা চিড়া বাদ দিতে হবে।

৩. ইফতারির কাঁচা ছোলার সঙ্গে আদা কুচি, লবণ ও পুদিনা পাতা কুচি দিয়ে খাওয়া যায়। এটা হজমে যেমন সহায়ক, তেমনি ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি এতে দূর হবে।

৪. রমজানের সময় ইফতারিতে খেজুর একটি বিশেষ উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রতিদিন অন্যান্য খাবারের সঙ্গে একটি বা দুটির বেশি খেজুর খাওয়ার তেমন প্রয়োজন নেই। কারণ, এতে ক্যালরি ও শর্করার পরিমাণ বেশি থাকে। যদিও পর্যাপ্ত লৌহ খেজুর থেকে পাওয়া সম্ভব।

সন্ধ্যারাতের খাবার

১. রোজার সময় সন্ধ্যারাতের খাবারের গুরুত্ব তেমন থাকে না। মনে হয়, খেতে হবে তাই খাওয়া। তার পরও কেউ যদি খেতে চান তাহলে যেন খাবার গুরুপাক ও বেশি হয়ে না যায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
২. যেহেতু ইফতারিতে ডালের তৈরি খাবার বেশি হয়, সেহেতু এ সময় ডাল বাদ দেওয়া যেতে পারে। এ সময় হালকা মসলায় রান্না করা মাছ ও সবজি থাকলে ভালো হয়।
৩. ইফতার ও সেহিরতে অনেক সময় সবজি খাওয়াটা বাদ পড়ে যায়। অনেকেই রমজানে সবজি একেবারেই পছন্দ করেন না। তাঁদের জন্য সন্ধ্যারাতেই সবজি খাওয়ার উপযুক্ত সময়। এ রাতে খাবারে ছোট মাছও রাখা যেতে পারে। সেহিরর সময় কাঁটা বেছে মাছ খেতে অনেকেই বিরক্ত বোধ করেন।

Sahoorসেহিরর খাবার

১. সেহিরর খাবার গ্রহণ করার অবশ্যই একটি স্বাস্থ্যগত দিক রয়েছে। কারণ, যদি সেহিরতে খাবার না খান তাহলে অবশ্যই দুর্বল হয়ে পড়বেন। এতে ক্যালরির ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে এক মাস রোজা রাখা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সেহেরির সময় না খেলে আমাদের দেহের বিপাকক্রিয়ায় বেশ পরিবর্তন আসতে পারে। এতে গ্লুকোজ ক্ষয় বেশি হয় বলে ক্লান্তি আসে।

২. সেহিরতে ভাতই খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই। রুচি অনুযায়ী রুটি, পরাটা, দুধ, সেমাই ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে। এ সময় মাংস ও ডিম খাওয়া সুবিধাজনক। এই সময়টাতে ঘন ডাল খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া ছোট-বড় সবার জন্যই এক কাপ দুধ খাওয়া উচিত। কারণ, খাবারে চাহিদামতো প্রোটিন বা আমিষ না থাকলে উপবাসের সময় শক্তির ঘাটতি দেখা দেবে। মোট কথা অন্যান্য দিনে যার যতটুকু ক্যালরির চাহিদা থাকে, ততটুকু ক্যালরি রমজানের তিন বেলা আহারে গ্রহণ করতে হবে। এর বেশিও নয়, আবার কমও নয়।

৩. রোজার সময় প্রত্যেকের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করেই মেন্যু ঠিক করা উচিত। তবে আমার কথা এই যে কিছুদিন আগে পর্যন্তও দেখা যেত যে যেকোনো অসুস্থতায় অনেকেই রোজা রাখাকে আতঙ্কজনক বলে ভাবতেন। বর্তমানে চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদদের উপদেশ, আশ্বাস ও সহযোগিতার ফলে অসুস্থতা নিয়েও অনেকে নির্বিঘ্নে রোজা রাখতে পারছেন।

৪. ডায়াবেটিস থাকলে চিনি-মিষ্টি-গুড়-মধু শরবত কিংবা অন্যান্য খাবার থেকে মিষ্টি বাদ দিতে হবে। পেপটিক আলসারের রোগী হলে ডুবো তেলে ভাজা এবং ঝাল খাবার বাদ দিতে হবে। তাঁরা খেতে পারেন চিড়া, কলা, চিড়া-দই, মুগের ডালের নরম খিচুড়ি, নুডুলস ইত্যাদি।

৫. রক্তে কোলেস্টেরল বা ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ বেশি থাকলে ইফতারিতে তেঁতুল ও রসুনের চাটনি খাওয়া যেতে পারে। যদি কোনো কারণে ডাল খাওয়া নিয়েও সমস্যা থাকে, তাহলে ইফতারিতে চালের গুঁড়া বা ময়দার বড়া এবং চিড়া, দই, নুডুলস, ফ্রায়েড রাইস খাওয়া যেতে পারে।

৬. ওজন বেশি থাকলে তেলের পরিমাণ কমাতে হবে এবং সম্পূর্ণ খাবার থেকে ক্যালরি কমাতে হবে। এদিকে যাদের ওজন কম তাদের জন্য ইফতারিই আদর্শ খাবার।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G