মা ও ছেলের এইচ.এস.সি পাশের গল্প

প্রথম প্রকাশঃ আগস্ট ১৩, ২০১৫ সময়ঃ ৩:২১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:০৬ অপরাহ্ণ

হুমায়ুন আহমেদ সৃজন

ma-cheleইচ্ছা শক্তি আর অদম্য চেষ্টায় বয়স কে হার মানিয়ে নিজ সন্তানের সাথে পরীক্ষা দেন তিনি। আর শুধু পরীক্ষা নয়, এ বছর এইচ.এস.সিতে পাশও করছেন এই অদম্য মা।

বলছিলাম ভালুকা উপজেলার মেদিলা গ্রামের পল্লী চিকিৎসক মাহাবুবুল আলমের স্ত্রী লিমা আক্তার(৪০)এর কথা। লিমা আক্তার স্বামী সংসার বজায় রেখেও সে এবারের এইচ.এস.সি পরীক্ষায় উপজেলার শহীদ স্মৃতি মহিলা কলেজের কারিগরি শাখায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৩.৭৮ পেয়ে পাশ করেছেন।

অপরদিকে তার একমাত্র ছেলে শাহ আলম উপজেলার বাটাজোর ডিগ্রি কলেজ থেকে অংশ নিয়ে পেয়েছেন জিপিএ ৪.২৫। মা ছেলে একসাথে পাশ করায় পরিবার সহ গ্রামের মানুষ আনন্দে আত্মহারা অবস্থা।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উথুরা গ্রামের নুরুল হক মন্ডলের ছয় ছেলে মেয়ের মধ্যে লিমা আক্তার সবার বড়। ১৯৮৮ সালের এপ্রিল মাসে উথুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেনীতে পড়ার সময় তার বিয়ে হয়ে যায়। ফলে থেমে যায় তার লেখাপড়া, কিন্তু ভেতরে থেকে যায় লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছাটুকু।

এদিকে বিয়ের পরের বছর তিনি সন্তানের মা হন, এর কিছু দিন পর একটি এনজিও তে চাকুরী নিয়ে তার স্বামী টাঙ্গাইলে চলে যান। ওই সময় সংসারের কাজ শাশুরী কে দেখাশুনা আর সন্তানের লালন পালনের মধ্যে অবসরে বই পরেন লিমা আক্তার।

এক পর্যায়ে পাশের বাড়ীর সপ্তম, অষ্ঠম, নবম শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের বই এনে নিজে পড়তেন, এরই মধ্যে ২০০৩ সালে বাড়ীর পাশে মেদিলা মুসাফির মঞ্জিল দাখিল মাদ্রাসায় ৯ম শ্রেনীতে ভর্তি হয়ে ২০০৫ সালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করে জিপি এ ২.৫৫ পেয়ে উর্ত্তীন হয়।

মাদ্রাসায় পড়ার সময় লিমা আক্তার কে আশপাশের লোকজন বিদ্রুপ ও হাসি তামাসা করতো, তবুও থামেনী লিমার অধ্যম চেষ্টা, এ দিকে নানা সাংসারিক কাজে তার লেখাপড়া আবারও থেমে যায়, পরবর্তীতে ২০১২ সালে সে আবারও উপজেলা বান্ধিয়া গ্রামে স্মূতি মহিলা কলেজের কারিগরী শাখায় ভর্তি হয়।

লিমা ১২ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করে প্রতিদিনই কলেজে যেত, কলেজের ছাত্রীরা লিমাকে নানী বলে ডাকতো, সব শিক্ষকরা তাকে সবসময় উৎসাহ দিতো, পরে ২০১৪ সালে লিমা এইচ.এস.সি পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজী বিষয় বাদে সব বিষয়ে পাশ করে। পরে এই বছর সে ইংরেজী পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে এইচ.এস.সি তে কৃর্তকার্য হয়। অন্যদিকে তার ছেলে শাহ আলম বাটাজোর ডিগ্রি কলেজের বি.এম শাখা হতে এইচ.এস.সি পাশ করে।

নতুন পাশ করা লিমার কাছে কেমন লাগছে জানতে চাইলে- তিনি বলেন আমি খুবই খুশী ,আমার ইচ্ছা শক্তি আমাকে এরকম একটা অসাধ্য কাজ করতে পেরেছি বলে, আমার পরিবার আমাকে সবসময় সাহস ও শক্তি দিয়ে আসতে ছিলো এজন্য আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি ।

প্রতিক্ষণ/এডি/এনজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G