মনোলোভা ধাঁধার চর

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৫ সময়ঃ ৭:৩৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

 

ccccc

দুপুরের চকচক সোনা রোদ। পাশেই নদীতে থৈ থৈ জলরাশি। উপরে দিগন্ত বিস্তৃত খোলা আকাশ। মাছরাঙা পাখির হুটহাট জলচুম্বন। জলের সাদা ফেনা থেকে আছাড় খাচ্ছে ২৩৯ একর জমি নিয়ে গভীর জলের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ধাঁধার চরের বুক। দূর থেকে দেখলে এ চরটিকে অনেকটা সেন্ট মার্টিনসের মত মনে হয়।

ধাঁধার চরের অবস্থানটা বেশ ধাঁধা লাগানো। চরের একপাশে শীতলক্ষ্যা নদী, অপর পাশে ব্রহ্মপুত্র নদ। বর্ষার মৌসুমে দুইটি নদীই থাকে গর্ভবর্তী। জলে টইটুম্বর। আর শীতকালে এটি হয়ে উঠে আরও মনোরম, আরও মনোলোভা। তখন দুই নদীর জল শুকিয়ে হাটুজলের নিচে চলে যায়। লোকজন পায়ে হেঁটেই চরে আসতে পারে।

chor1

স্থানীয় তারাগঞ্জ, লাখপুর, রাণীগঞ্জ ও চরসিন্দুর-এর মাঝখানে এ চরকে দেখলে মনে হয় ভাসমান টাইটানিক গ্রাম। ধাঁধার চর লম্বায় ৪ কি. মি., চওড়ায় বর্ষায় আধা কি. মি.। আর শীতকালে আনুমানিক এক কি. মি. ব্যাপী বিস্তৃত। এই আলো আঁধারের জীবন নিয়ে চরবাসী আছেন হাসি-আনন্দ, দুঃখ-বেদনা নিয়ে।

চরকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের জীবন নির্বাহ হয়। আনুমানিক ২০০ বছর আগে জেগে উঠা এই চরকে স্থানীয়রা কেউ কেউ বলেন মাঝের চর। কারণ এটি ব্রহ্মপুত্র নদ ও শীতলক্ষ্যা নদীর সঙ্গম স্থলে অবস্থিত। এক সময় এই চরের নাম-নিশানা ছিল না। ছিল বহমান নদী। তারপর আস্তে আস্তে বিন্দু বিন্দু বালুকণা জমতে জমতে বেলে মাটিতে পূর্ণ হয়ে এক সময় যখন চর জেগে উঠে। তখন স্থানীয় লোকজন এটি দেখে ধাঁধায় পড়ে যান। সেই থেকে এর নাম ধাঁধার চর।

chor

চরের মাটি খুবই উর্বর। এখানে রোপণ করলে হয় না এমন কোন ফল বাংলাদেশে নেই। এক সময় চরে প্রচুর আখ হত। এখন সবচেয়ে বেশি আলুর চাষাবাদ হয়। চরের মাটির তলে বা মাটির উপরে যা রোপণ করা হোক না কেন তা অতিফলনীশল এবং তা সারবিহীন ও সুস্বাদু।

চরে আছে একটি বটবৃক্ষ। ভাওয়ালের রাজার সময় থেকে এখানে পূজা-অর্চনা শুরু হয়। এখনও কার্তিক মাসে স্থানীয় পূজারীরা এখানে আসেন। পূণ্যের আশায় করেন পুজো-তর্পন।

শীতকালে শত শত পর্যটক ঢাকা থেকে অথবা অন্যান্য উপজেলা থেকে পিকনিক করতে ধাঁধার চরে গিয়ে থাকেন। সেখানকার স্থানীয় ছেলেমেয়েরা সেই পিকনিক পার্টিকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে থাকেন। তাদের সহযোগিতার মধ্যে কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই।

chor5

যারা ধাঁধার চর বা এই গ্রামে বেড়াতে যাবেন তারা নিরাশ হবেন না এইটুকু আশ্বাস দিতে পারি। এই গ্রামে গিয়ে নারী-পুরুষের সংগ্রামী জীবন দেখে আসবেন। দেখে আসবেন বিত্ত না থাকলেও কিভাবে সুখে থাকা যায়। অল্পতে যারা তুষ্ট হয়ে যান সেই গ্রামবাংলার সংগ্রামী মানুষের লড়াকু জীবন ধাঁধার চরে গিয়ে দেখতে পাবেন।

যেভাবে যাবেন:

ঢাকার গুলিস্তান বা ফার্মগেট থেকে কাপাসিয়া আসবেন। এখান থেকে সোজা তারাগঞ্জ এলেই দেখা যাবে দুই নদীর বুকে ভাসছে অদ্ভুত ধাঁধা লাগানো একটি চর। এরই নাম ধাঁধার চর।

 

সূত্রঃ ফেস বাংলাদেশ

প্রতিক্ষণ/এডি/এফজে

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G