আকাশের কোলঘেঁষে সৌন্দর্যের স্বপ্নরাজ্য

প্রকাশঃ এপ্রিল ২৩, ২০১৫ সময়ঃ ২:০০ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:১১ অপরাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট, প্রতিক্ষণ ডটকম:

boga-lakeসমুদ্র সমতল ভূমি থেকে ৩০০০ ফুট ওপরে আকাশের কোলঘেষে একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্বপ্নরাজ্য। এখানে আকাশ পাহাড়ের সঙ্গে মিতালী করে। মেঘবালিকা চুমু দিয়ে যায় পাহাড়ের চূড়ায়। হাত বাড়ালেই ছুঁয়ে দেয়া যায় মেঘের পালক। মেঘের দল এখানে খেলা করে আপনমনে। মেঘের আলিঙ্গন যেন ছেলের হাতের মোয়া। চাইলেই ছুঁয়ে দেখা যায়। সে এক রোমাঞ্চকর অনুভূতি। মনে হয় যেন আমি আকাশের বুকে মেঘের সঙ্গে উড়ে বেড়াচ্ছি। আকাশ বাতাস সবুজ আর মেঘের দল লুটোপুটি খায় পদতলে।

কি যে এক শিহরণ জাগানো অনুভূতি না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। মনে হবে যেন স্বর্গ এসে ধরা দিয়েছে এ ধরায়। অচেতন মনে আপনি হারিয়ে যাবেন ক্ষণিকের জন্য, তবে রেশ রয়ে যাবে সারা জীবন। এ এমনই এক সুখ স্মৃতি যা আপনাকে বার বার হাজার বার টেনে নিয়ে আসবে এখানে।এ যেন অন্য একটি জগত। ভিন্ন কোন দেশ। মর্তের মাঝে স্বর্গের হাতছানি। হয়তো ভুলেই যাবেন যে আপনি বাংলাদেশে আছেন। পাহাড়ের গা বেয়ে উপরে উঠা যেমন রোমাঞ্চকর, পাহাড়ের চূড়া যেন আরো বেশি।

কেওকারাডাং এর কোল ঘেঁষে বান্দারবান শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে এবং রুমা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ের উপরে প্রায় ১৫ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে উঁচু প্রাকৃতিক লেক বগালেক।  এ পানি দেখতে প্রায় নীল রঙের। এ লেকের পাশে বাস করে পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র উপজাতীয় বম ও খুমী সম্প্রদায়। অদ্ভুদ সুন্দর এই নীল রঙ্গের লেকের সঠিক গভীরতা বের করা যায়নি। স্থানীয়ভাবে দুইশ’ থেকে আড়াইশ’ ফুট বলা হলেও সোনার মেশিনে ১৫১ ফুট পর্যন্ত গভীরতা পাওয়া গেছে। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ একটি লেক। এর আশেপাশে পানির কোন উৎসও নেই। তবে বগালেক যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগাছড়া (জ্বালা-মুখ) নামে পরিচিত। সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে লেকের পানি প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মে মাসে ঘোলাটে হয়ে যায়।

boga-lake.jpg-1বগা লেকের জন্ম নিয়ে স্থানীয়ভাবে একটি মজার তথ্য প্রচলিত আছে, যা অনেকটা এই রকম যে“কয়েক হাজার বছর আগে এখানে একটি সরু আকৃতির পাহাড় ছিল। দুর্গম পাহাড়ে ঘন বন। পাহাড়ের বাস করত আদিবাসীরা যাদের মধ্যে ছিল,বম,ত্রিপুরা, ম্রো, তঞ্চঙ্গ্যা ইত্যাদি । পাহাড়ি গ্রাম থেকে প্রায়ই আদিবাসী বা ছোট বাচ্চারা এবং গবাদিপশু ওই সরু পাহাড়টিতে হারিয়ে যেত। গ্রামের সাহসী আদিবাসীদল কারণ খুজতে গিয়ে সন্ধান পায়, সেই পাহাড়ের চূড়ার গর্তে বাস করে এক ভয়ঙ্কর বগা (আদিবাসী ভাষায় বগা অর্থ-ড্রাগন)। তারা সম্মলিতভাবে ড্রাগনটিকে হত্যা করে ফেলে। ফলে ড্রাগনের গুহা থেকে ভয়ঙ্কর গর্জনের সাথে আগুন বেরিয়ে আসে। মূহুর্তেই পাহাড়ের চূড়ায় অলৌকিক এক লেকের জন্ম হয়।

বগালেকের সবচেয়ে সুন্দর হল রাত। রাত যত গভীর হবে বগা লেকে আকর্ষন তত বাড়বে। রাত্রি যাপনের জন্য বগালেকে জেলা পরিষদের অর্থায়নে একটি রেষ্টহাউস নির্মান করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় বম উপজাতী সম্প্রসাদায় কিছু ঘর ভাড়ায় দিয়ে থাকে। বগালেকের পাড়েই বসবাসরত বম সম্প্রদায় পর্যটকদের জন্য রান্না-বান্নার ব্যবস্থা করে থাকে । রুমা বাজার থেকে প্রয়োজনীয় শুকনো খাবার ক্রয় করে নেওয়াই শ্রেয়। উল্লেখ্য যে, নিরাপত্তার জন্য রুমা ও বগালেক সেনা ক্যাম্পে পর্যটকদের রিপোর্টে করতে হয়। স্থানীয় গাইড ছাড়া পায়ে হেটে রুমা থেকে অন্য কোন পর্যটন কেন্দ্রে যাওয়া উচিত নয়।

যাতায়ত:

শুষ্ক মৌসুমে বান্দরবান জেলা সদরের রুমা জীপ ষ্টেশন থেকে রুমাগামী জীপে করে রুমা সেনা গ্যারিসন (রুমা ব্রীজ) পর্যন্ত যাওয়া যায়। সেখান থেকে নৌকায় করে ২০ মিনিট পথ পাড়ি দিয়ে রুমা উপজেলা সদরে যেতে হয়। বর্ষাকালে রুমাগামী জীপ কইক্ষ্যংঝিড়ি পর্যন্ত যায় । তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকায় করে প্রায় ১ ঘন্টার অধিক পথ পাড়ি দিয়ে রুমা সদরে যেতে হয় । রুমা থেকে পায়ে হেটে অথবা জীপে করে বগালেক যেতে হয় । বর্ষা মৌসুমে বগা লেক যাওয়া নিতান্তই কষ্টসাধ্য তাই বগালেক ভ্রমনে শীতকালকে বেছে নেওয়া শ্রেয়ে। বান্দরাবন থেকে রুমা উপজেলা সদরে যেতে খরচ হবে জন প্রতি ৮০/- অথবা পুরো জীপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০/- আর রুমা থেকে বগালেক যেতে জনপ্রতি ৮০-১০০/- অথবা পুরো জীপ ভাড়া করলে ২২০০-২৫০০/- পর্যন্ত ।

প্রতিক্ষণ/এডি/পাভেল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G