ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা!

প্রকাশঃ জুন ২৭, ২০১৫ সময়ঃ ২:৫৩ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৮:৩০ পূর্বাহ্ণ

জহির উদ্দিন মিশু

machermela1মাছের মেলা! নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে বড় বড় মাছের কাল্পনিক সব সংগ্রহ। এ কল্পনাকে বাস্তবে নিয়ে আসে প্রতি বছরের শীতের শেষে অনুষ্ঠিত শেরপুরের ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলা। কুশিয়ারা নদীর পাড়ে ঢুকতেই টের পাওয়া যায় বাতাসে তরতাজা মাছের ঘ্রাণ। চারপাশের ডালায় সাজানো অগনিত নানা জাতের মাছ শীতের মিঠেকড়া রোদে চকচক করছে। কুশিয়ারার তীরে হাজারো মানুষের ভিড়। এখানে শুধু মাছ কিনতে সবাই আসেনি। অনেকে এসেছে মাছ দেখতে। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুরের মাছের মেলার দৃশ্য এটি।

মৌলভীবাজারের শেরপুরে কুশিয়ারা নদীর তীরে প্রায় দুইশত বছর পূর্ব থেকে চলে আসছে এ মেলা। এখনও তা চলছে। তবে মাছের মেলাটি এখন সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়ে তিনদিনে বর্ধিত হয়েছে। বাঙালির সংস্কৃতিতে বারো মাসে তেরো পার্বনের একটি পার্বন হলো পৌষ সংক্রান্তি। মূলত অগ্রহায়ণের ধান কাটার পর থেকে শুরু হয় নবান্ন উৎসব।machermela3

মৌলভীবাজার জেলা সদর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে সদর উপজেলার একেবারে শেষভাগে শেরপুর এলাকায় বসে মাছের মেলা । পশ্চিমে হবিগঞ্জ জেলার নবিগঞ্জ উপজেলা, উত্তরে কুশিয়ারা নদী। নদী পার হলেই সিলেট জেলার বালাগঞ্জ উপজেলা। মৎস্য ব্যবসায়ীদের দাবী অনুযায়ী দেশের সবচেয়ে বৃহৎ মাছের মেলা এটি।

এটি যদিও মাছের মেলা নামে পরিচিত তথাপি মাছ ছাড়াও বিভিন্ন পসরার কয়েক হাজার দোকান বসে কুশিয়ারার তীর জুড়ে। মেলায় মাছ ছাড়াও ফার্নিচার, গৃহস্তলী সামগ্রী, খেলনা সামগ্রী, নানা জাতের দেশীয় খাবারের দোকানসহ গ্রামীণ ঐতিহ্যের দোকানও স্থান পায়। এছাড়া শিশুসহ সব শ্রেণীর মানুষকে মাতিয়ে তোলার জন্য রয়েছে বায়োস্কোপ ও চড়কি খেলা। আগে এই মাছের মেলায় স্থানীয় বিভিন্ন হাওর-বাওরের, নদ-নদীর মাছ নিয়ে আসতো জেলেরা। এখন মৎস্য খামারগুলোর মাছতো আসেই। আসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীদের বিরাট বিরাট চালান। সিলেটের কুশিয়ারা নদী, সুরমা নদী, মনু নদী, হাকালুকি হাওর, টাঙুগুয়ার হাওর, কাওয়াদিঘি হাওর, হাইল হাওরসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা রুই, কাতলা, বোয়াল, গজার, বাঘ, আইড় মাছ সহ বিশাল আকৃতির মাছ নিয়ে আসেন এ মেলায়।machermela2

মাছের মেলায় পাঁচ হাজার টাকা মূল্যের নীচে কোন মাছ পাওয়া যায় না। বড় ব্যবসায়ীরা সপ্তাহ খানেক পূর্বে বড় বড় মাছ সংগ্রহ করতে থাকেন। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে আড়ৎ থেকে ছোট বড় অনেক জাতের মাছ নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়েন। মাছের গন্ধে মৌ মৌ করে ওঠে পুরো এলাকা। এছাড়া মেলা উপলক্ষ্যে শেরপুর, নবিগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজারসহ আশেপাশের গ্রামের প্রবাসীরা প্রতিবছর মেলার জন্য দেশে এসে থাকেন। বর্তমানে এই মেলা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান, মুসলিমসহ সব ধর্মের মানুষের জন্য মিলনমেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যেভাবে যেতে হবে: ঢাকা থেকে মৌলভীবাজার যাওয়া যায় বাসে করে। মৌলভীবাজার থেকে বেবি টেক্সি কিংবা মাইক্রোবাসে করে যেতে হবে শেরপুর।

প্রতিক্ষণ/এডি/জহির

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G