দিতিকে নিয়ে যতো আলোচনা-সমালোচনা

প্রথম প্রকাশঃ মার্চ ২১, ২০১৬ সময়ঃ ১০:০৪ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৫৪ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

diti 01 ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় একটি মুখ পারভীন সুলতানা দিতি। গুণী এই অভিনেত্রীর জন্ম ১৯৬৫ সালে, নারায়ণগঞ্জ জেলায়। লালমাটিয়া কলেজ থেকে বি.এ. কোর্স সম্পন্নকারী দিতি মিডিয়া জগৎ এ প্রথম পা রাখেন বিটিভি তে গান গাওয়ার মাধ্যমে। অভিনেতা আল মনসুরের হাত ধরে “ লাইলী মজনু ” নাটকের মাধ্যমে প্রকাশ পায় দিতির অভিনয় দক্ষতা।

১৯৮৪ সালে বিএফডিসি আয়োজিত নতুন মুখ এর সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হয় দিতির চলচ্চিত্র যাত্রা। নির্মাতা উদয়ন চৌধুরী দিতি এবং আফজাল হোসেনকে নিয়ে “ডাক দিয়ে যাই” চলচ্চিত্র নির্মান করেন কিন্তু সেটি অনাকাংক্ষিত কারনে মুক্তি পায়নি। ১৯৮৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আজমল হুদা মিঠু নির্মিত “আমিই ওস্তাদ ” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটে দিতির। এরপর শুধুই এগিয়ে চলার গল্প।

diti 04হীরামতি, প্রিয় শত্রু, ভাই বন্ধু, দুই জীবন, চরম আঘাত, স্বামী-স্ত্রী সহ আরোও অনেক সুপারহিট ছবি উপহার দিয়ে আশির দশকের শেষের দিক ও নব্বই দশকের শুরুতে দর্শক হৃদয়ে শাবানার তুমুল জনপ্রিয়তার পাশে শুরু হয় দিতির প্রতি ভালো লাগা। প্রায় দুই শতাধিকেরও বেশি চলচ্চিত্রে অভিনয়কারী দিতি “স্বামী-স্ত্রী” চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য ১৯৮৭ সালে অর্জন করেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার। ওপার বাংলার জনপ্রিয় নায়ক প্রসেনজিৎ থেকে শুরু করে এপার বাংলার আলমগীর, সোহেল চৌধুরী, ইলিয়াস কাঞ্চন, মান্নাসহ অনেক নায়কের বিপরীতে অভিনয় করেন দিতি।

শুধু চলচ্চিত্র বা নাটক নয়, বিজ্ঞাপনচিত্রেও ছিলেন দিতি বেশ জনপ্রিয় পাকিজা গার্ডেন প্রিন্ট শাড়ি তার অনবদ্য পারফরমেন্স এবং বিজ্ঞাপনের সেই বিখ্যাত জিঙ্গেল ” পড়েছি কপালে টিপ চোঁখে কাজল আংটি আনা নিপা কাঁচের নাক ফুল “আজো উদ্বেলিত করে সবাইকে। রূপালী পর্দায় দিতিকে নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনার প্রভাব রয়েছে তার ব্যাক্তি জীবনেও। সেই সময়ে দিতিকে নিয়ে আলোচিত ঘটনাসমূহের মধ্যে রয়েছে…………….

১. তুমুল জনপ্রিয়তা স্বত্বেও দিতিকে নিয়ে পরিচালকদের ভয় : নব্বই দশকের শুরুর দিকে পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নির্ভর হয়ে পড়ে দিতির উপর। একের পর এক ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে তার কাছে। এমন সময় হঠাৎ দিতি দেশ ছেড়ে পাড়ি জমান সুদূরে। ১৯৯৫ সালে আবারোও দেশে ফিরেন তিনি। বিদেশ ফেরত দিতিকে নিয়ে কাজ করতে ভয় পেত পরিচালকরা। আবার কখন বিদেশে চলে যায়। অবশ্য দিতির ভাষ্য ছিল, তার মধ্যে কাজের সততা ছিল। দেশে ফেরে একসঙ্গে সাইন করা ১২টি সিনেমার কাজই শেষ করেছিলেন দিতি।

২. শুটিং-এ দুর্ঘটনা : একবার শুটিং ফ্যানের সঙ্গে চুল আটকে গিয়েছিল দিতির। এ সময় তার সব চুল কেটে ফেলতে হয়েছিল। আরেকবার কেমিক্যালের কারণে দিতির চুল নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, তখন তিনি চুল ছেটে ফেলেন।

Sohail+Chy-Diti৩.দিতির সংসার ও ভাঙ্গন : দিতি প্রথম বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৬ সালে। বর চলচ্চিত্রেরই মানুষ সোহেল চৌধুরী। ১৯৮৫ সালে আমজাদ হোসেনের ‘হীরামতি’ ছবিতে অভিনয় করতে গিয়েই প্রেমে পড়েন দুজন। এরপর সাতপাঁকে বাধা পড়েন। ১৯৯৮ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাত দুটার দিকে সোহেল চৌধুরী খুন হন বনানীর ট্রাম্পস ক্লাবে। আর এ খুনের ঘটনা সারাদেশে বেশ আলোচনায় আসে। এ খুনের রহস্য আজও কিনারা হয়নি। কিন্তু তার পূর্বেই দিতি-সোহেলের ঘর ভেঙেছিল।

৪.ইলিয়াস কাঞ্চনের সাথে সর্ম্পক ও বিচ্ছেদ : দিতি ও সোহেল চৌধুরী দম্পতির ঘরে ১৯৮৭ সালে জন্ম নেয় মেয়ে লামিয়া চৌধুরী আর ১৯৮৯ সালে জন্ম নেয় ছেলে দীপ্ত। সোহেল চৌধুরীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ও তার মৃত্যুর পর দিতি তার সন্তানদের নিয়ে পা রাখেন ইলিয়াস কাঞ্চনের ঘরে । এটি দুজনেরই ছিল দ্বিতীয় বিয়ে। পর্দার জনপ্রিয় এ জুটি বাস্তবে খুব বেশি দিন থাকেননি জুটি হিসেবে। কারণ সর্ম্পকে জানা যায়, দাম্পত্য কলহের তিক্ততার কথা।

বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জল নক্ষত্র দিতি। ২০ মার্চ বিকাল চার ঘটিকায় দীর্ঘ দিন মরণব্যাধী ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে অবশেষে রূপালী আকাশ থেকে খসে পড়ে এই তারা। যতদিন বাংলা চলচ্চিত্র থাকবে বেঁচে ততদিন দিতি থাকবে তার অগণিত দর্শক হৃদয়ে, তার অনবদ্য অভিনয় ও শ্রুতিমধুর গানের মাধ্যমে।

প্রতিক্ষণ/এডি/এস আর এস

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G