রঙবাহারি স্বর্গের পাখি

প্রকাশঃ মার্চ ৮, ২০১৫ সময়ঃ ৫:১৭ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৪১ পূর্বাহ্ণ

birds of paradise

 

প্রকৃতিতে প্রতিদিন ঘটছে নানা ঘটনা।প্রকৃতি নিজেই একটা গল্পের ঝুড়ি।গাছের ডালে ডালে,আকাশে মেঘের রং,জলের ঢেউয়ে ঢেউয়ে হাজারো গল্প কথা।

তেমনি এক অজানা পাখির গল্প রয়েছে যে পাখি তার স্বর্গীয় রংঙের জন্য সুপরিচিত।‘এ পাখির বসবাস স্বর্গের বাগানে। দেখলেই মনে হয় যেন দেবতাদের ফুলবাগান থেকে ভুল করে পৃথিবীতে এসে পড়েছে।’ ইউরোপিয় নাবিকরা পাখিটির নাম দিলো ‘বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস’! দেহের মোহনীয় রঙ আর রঙের বৈচিত্রের কারণে বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর আর আকর্ষণীয় পাখি!

১৬ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপের নাবিকরা ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি এলাকায় ব্যবসা করতে গিয়ে অদ্ভুত সুন্দর এক পাখির দেখা পেলেন। সে পাখির দেহের গড়ন অনেকটা কাকের মত, কিন্তু পালকের রঙ আর লেজ এমন জাঁকালো রঙ্গীন আর মোহনীয় যে নাবিকরা সত্যি সত্যি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন! স্থানীয় মানুষজন পাখিটিকে বলতো- ‘ঈশ্বরের পাখি’।

নারী বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস পাখিরা অনেকটাই সাধারণ। দেখতে নাইটেংগেল পাখির মত। পুরুষ পাখিদের এই সৌন্দর্য মূলত নারী পাখিদেরকে আকর্ষণ করার জন্য। তারা গাছের ডালে দোয়েল পাখির মত নেচে নেচে হাঁটাহাঁটি করে। বাদুরের মত ডাল থেকে উল্টো ঝুলে থাকে।

ডানা ঝাপটিয়ে আর মুখ দিয়ে নানা রকম শব্দ তৈরি করে। তবে সবচেয়ে বেশী যেটা করে সেটা হলো- নানা রকম ‘ভংগী’ পালক ফুলিয়ে, পা বাঁকিয়ে, ডানা ছড়িয়ে, ঘাড় ঘুরিয়ে তারা মডেলদের মত এমন সব মোহনীয় ভঙ্গী করে যে, শুধু নারী বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস পাখিরাই না, মানুষরাও তাদের প্রেমে পড়ে যায়!

বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস পাখিরা একাকীত্ব পছন্দ করে। দলবদ্ধ হয়ে না থেকে একা একা ঘুরে বেড়ায়। স্বাধারণত ফল আর বীজ খায়। কিছু কিছু প্রজাতি ফল আর বীজের পাশাপাশি পোকামাকড়ও খায়। যারা পোকামাকড় খায় তাদের সবচেয়ে প্রিয় পোকা হচ্ছে মাকড়সা! গাছের ডালের যে জায়গা থেকে অনেকগুলো শাখা বের হয় আসে সেসব জায়গায় বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসরা বাসা বানাতে পছন্দ করে। বাসা বানাতে এরা লতা,পাতা আর ফার্ণের মত নরম জিনিস ব্যবহার করে।

বড় প্রজাতির পাখিরা একবারে একটি করে ডিম দেয়। ছোট প্রজাতিরগুলো দেয় দুই থেকে তিনটি ডিম। ১৬-২২ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। ডিম ফুটে বের হওয়ার আরও ১৬-৩০ দিনের মধ্যে বাচ্চাগুলি নিজেদের দায়িত্ব নিতে শেখে। বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস ০৬-৪৩ ইঞ্চি পর্যন্ত বড় হয়। বাঁচে ৫-৮ বছর। পালক সাদা, কালো, ধূষর, সবুজ, বাদামী, হলুদ, নীল বিভিন্ন রঙ্গের হয়ে থাকে।
বয়সে বড় বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসদের তেমন কোন বুনো শত্রু নেই। কিন্তু, শিকারী পাখি আর সাপ প্রায়ই তাদের বাসায় হানা দিয়ে বাচ্চা খেয়ে ফেলে। বড় বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসদের প্রধান শত্রু হচ্ছে মানুষ।

স্থানীয় অধিবাসীরা কয়েকশ বছর আগে থেকে অল্প কয়েক বছর আগে পর্যন্তও কাপড়, মালা আর মুকুট অলঙ্করণ করতে বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসের ঝলমলে রঙ্গিন পালক ব্যবহার করত।

তাছাড়া, তাদের বিভিন্ন পূজাপার্বণের আনুষ্ঠানিকতার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসের ‘পবিত্র’ পালক! নাবিকদের মাধ্যমে একসময় ইউরোপ-আমেরিকাতেও বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসের পালকের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়। আঠারো এবং ঊনিশ শতকে ইউরোপে বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসের পালকযুক্ত হ্যাট পড়া ছিলো সম্ভ্রান্ত বংশীয় নারীদের প্রচলিত ফ্যাশন! সামাজিক আর আর্থিক মর্যাদা প্রকাশ করতে সেসময় ইউরোপের অনেক পুরুষও তাদের সাজসজ্জায় বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসের পালক ব্যবহার করত।

পাপুয়া নিউ গিনি আর তার আশেপাশের দ্বীপগুলোতে বার্ডস-অফ-প্যারাডাইসদের সবচেয়ে বেশী দেখা যায়। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া আর অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব দিকেও এদের কিছু প্রজাতি বসবাস করে। প্রায় পঞ্চাশ প্রজাতির বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস রয়েছে। এদের কিছু প্রজাতি খুব দুর্লভ। Raggiana Bird-of-paradise (Paradisaea raggiana) সবচেয়ে বড় প্রজাতির বার্ডস-অফ-প্যারাডাইস। এটি পাপুয়া নিউ গিনির জাতীয় পাখি। সে দেশের লোকজন একে ডাকে ‘কুমুল’ নামে।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G