একটি জয়ের জন্য ১৫ বছর ধরে হা-হা-কার

প্রথম প্রকাশঃ অক্টোবর ২০, ২০২২ সময়ঃ ১২:৪০ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ

সংগ্রহ 

বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল ২০০০ সালে থেকে বিশ্ব ক্রিকেটে পথচলা শুরু করলেও বিগত ৩৩ টি২০ ম্যাচের ২৫টিতে হেরেছে। আর বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডে টানা ৪ ম্যাচে হারের পর বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে আফগানদের কাছে ৬২ রানে হার। কিন্তু এভাবে আর কত? বিগত ১৫ বছরের মধ্যে বিশ্বকাপের
মুল পর্বে আজও জয়-টা স্বপ্ন হয়েই আছে। সে আপেক্ষটাই পুরো দেশ জুড়ে ক্রিকেট ভক্তদের মাঝে। ক্রিকেট বোর্ড যতোই গান শোনাক না কেন, বাস্তবতা কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই।
অপেক্ষা—সেটাও নাকি একধরনের শিল্প। কিন্তু কখনো কখনো অপেক্ষার যন্ত্রণা সেই শিল্পবোধকে দুমড়েমুচড়ে দিয়ে যায়। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মনের কাছে অপেক্ষা তখন আরও অসহনীয় এক অনুভূতি হয়ে দাঁড়ায়। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এলে এ দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের যন্ত্রণা আরও বেড়ে যায়। ফ্ল্যাশব্যাকে তাদের মন চলে যায় ২০০৭ সালে। হিসাব করে দেখলে, একে একে পেরিয়ে গেছে পনেরো বছর! কিন্তু বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে আর কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ।
২০০৭-এ প্রথম বিশ্বকাপে মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ এক ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দারুণ এক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। জোহানেসবার্গে ২৭ বলে অপরাজিত ৬১* রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলেছিলেন অধিনায়ক নিজে। দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন। ছোটখাটো লোকটা বিশালদেহী বোলারদের বিপক্ষে কী সব ইম্প্রোভাইজিং শট খেললেন। বিশেষজ্ঞরা বলতে শুরু করলেন, “টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যদি হয় নিছক বিনোদন, তাহলে মোহাম্মদ আশরাফুলের ব্যাটিং অন্য টেলিভিশনের টিআরপি লুটে নেবে।” ছোটখাটো গড়নের হালকা-পাতলা একটা ছেলে ক্রিকেট ব্যাকরণ ভেঙেচুরে বলের ঠিকানা লিখছিলেন বাউন্ডারির বাইরে। কখনো বাতাসে ভাসিয়ে, কখনো সবুজ মাঠে সাদা বল দিয়ে আলপনা এঁকে। আর তাতেই নিশ্চিত হয় শুধু টেস্ট বা ওয়ানডে নয়, টি-টোয়েন্টিতেও মোহাম্মদ আশরাফুল বাংলাদেশের ম্যাচ উইনার।
ওই ম্যাচের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশ আর কোনো ম্যাচ উইনার পেল না। বাংলাদেশ মূল পর্বে কোনো ম্যাচও জিতল না। অথচ তারপর বাংলাদেশ ক্রিকেটে অনেক বড় বড় নাম এসেছে। কিন্তু ম্যাচ উইনার হিসেবে বাইশ গজে কেউ আবির্ভূত হতে পারলেন না। তাই একটা ম্যাচ জয়ের জন্য এ দেশের মানুষের অপেক্ষার প্রহর বাড়তে বাড়তে কখন পনেরো বছর পেরিয়ে গেছে, সেই হিসাবও ভুলে গেছেন তারা। ওপার বাংলার কণ্ঠশিল্পী কবীর সুমনের ‘তোমাকে চাই’ গানের ত্রিশ বছর পার হচ্ছে। তা নিয়ে এ দেশে কত হইচই। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের পর পনেরো বছর পেরিয়ে যাচ্ছে অথচ দ্বিতীয় জয় মেলেনি। সেই হিসাবটাও ক্রিকেট রোমান্টিকরা মনে করতে চান না।
করবেন কেন? যে রোমান্টিসিজম দুঃখকে উসকে দেয়, হতাশাকে বাড়িয়ে দেয়, তাকে কে মনে করতে চাইবেন। আর টি-টোয়েন্টি এখন পাওয়ার গেম। এখানে রোমান্স খোঁজার কিছু নেই। টি-টোয়েন্টি উচ্চাঙ্গসংগীত কিংবা মেলোডি নয়। রীতিমতো রক অ্যান্ড রোল। পাওয়ারের পাশবিকতায় ক্রিকেট রোমান্স ছারখার হয়ে গেছে। শক্তি, টেকনিক্যাল স্কিল আর ফিটনেসে বেঁচে আছে টি-টোয়েন্টি। কিন্তু সেই টি-টোয়েন্টি আবার ক্রিকেটারদের কাছে দাবি করে উচ্চাঙ্গের পেশাদারত্ব। সেই পেশাদারত্বের জায়গায় বাংলাদেশের ঘাটতি? যে কারণে বিশ্বকাপে জয়ের অভিমুখ খুঁজে পায় না বাংলাদেশ।
এবার র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকার সুবাদে সরাসরি মূল পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। জয়ের একটা প্রাক্‌-সম্ভাবনা তৈরিও আছে। বাছাইপর্ব থেকে উঠে আসা দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ খেলার কথা। সেই দলটা নামিবিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি ছিল। ধরা হচ্ছিল শ্রীলঙ্কা গ্রুপের শীর্ষে থেকে মূল পর্বে যাবে। তাদের মুখোমুখি বাংলাদেশকে হতে হবে না। কিন্তু দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার দলটা বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে নিজেদের জয়রথের নিচে এমনভাবে পিষে ফেলল, থেঁতলে যাওয়া লঙ্কানরা সেখানে থেকে কোমর সোজা করে দাঁড়িয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হবে, সে আশা করা যাচ্ছে না। তাই মূল পর্বে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে মুখ থুবড়ে পড়া লঙ্কানরা আবার ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। ‘ইন্ট্যান্ট ইম্প্যাক্ট’ শব্দমন্ত্র জপতে থাকা বাংলাদেশ লঙ্কানদের বিপক্ষে খিল আঁটা জয়ের দরজা খুলতে পারবে কিনা সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
কিন্তু অপেক্ষার বয়সও তো পনেরো বছর হয়ে গেল। আর কত? কুড়ি-কুড়ির খেলায় যেকোনো দল যেকোনো দিন যে কাউকে হারাতে পারে। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে সেটা বুঝিয়ে দিল নামিবিয়া। তাহলে বাংলাদেশ কেন অন্যদের হারাতে পারবে না।
ক্রিকেটীয় অনেক ব্যাখ্যা করা যাবে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারের নেই। এমনকি সাকিব আল হাসানেরও নেই। হোবার্ট, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড—সব গ্রাউন্ডের বাউন্ডারি লাইন যথেষ্ট বড়। সিডনি বাদে সব জায়গায় খেলা হবে ড্রপইন পিচে। অস্ট্রেলিয়ায় কেবল সামারের শুরু। তা ছাড়া এ মৌসুমে মোটামুটি বৃষ্টিও হয়েছে। পেসাররা তুলনামূলক বাড়তি সুবিধা পেতে পারেন। ব্যাটারদের বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারির জন্য নির্ভর করতে হবে পাওয়ার আর টাইমিংয়ের ওপর। পাওয়ার হিটারকেই এখনো খুঁজে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশ।
এসব মিলিয়ে ‘জয়’ বাংলাদেশের জন্য এবারও হয়ে থাকতে পারে দূরবর্তী কোনো স্টেশনের নাম। বিশ্বকাপে ‘বাংলাদেশ এক্সপ্রেস’ কি সেই স্টেশনে পৌঁছাতে পারবে? না কি জয়ের অপেক্ষা আরও বাড়বে?

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G