পুরো টেস্ট ম্যাচে লড়াই করেছি – সাকিব

প্রথম প্রকাশঃ ডিসেম্বর ২৫, ২০২২ সময়ঃ ৩:৫৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৩:৫৯ অপরাহ্ণ

ক্রীড়া প্রতিবেদক

নিশ্চিত জয়টা হাত ছাড়া হলো। তাও এমন একটা দলের বিপক্ষে যাদের সাথে আজও জয় পাওয়া হয়নি। জিততে জিততে আজ ৩ উইকেটে ভারতের বিপক্ষে হারের পর টেষ্ট দলের অধিনায়ক সাকিব এলেন নিয়ম রক্ষার সংবাদ সম্মেলনে।

আসলে সাকিবের কাছে মুল প্রশ্ন তো একটাই ব্যাখা কি? সাকিব জবাবে বলেন, “আমার মনে হয় ওরা ভালো ব্যাট করেছে ওই সময়। অশ্বিন ও শ্রেয়াস আইয়ার, দুজনই ভালো ব্যাট করেছে। খুব সহজ উইকেট ছিল না ব্যাটিংয়ের জন্য। কিন্তু ওরা যেভাবে ব্যটি করেছে, ওদেরকে কৃতিত্ব দিতে হয়। আমরা চেষ্টা করেছি, সব দিক থেকেই চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটু ঘাটতি ছিল আমাদের, কোনো ভাবে।”

এই হারে আক্ষেপ আছে কিনা জানতে চাইলে সাকিব বলেন, “আক্ষেপ নেই আমার ওরকম কোনো। আমার মনে হয়, আমরা পুরো টেস্ট ম্যাচই ভালো লড়াই করেছি এবং এই মানসিকতাই সামনের টেস্ট গুলোতে থাকবে বলে আশা করি আমি। তাহলেই আমি মনে করি, ফল আমাদের পক্ষে আবে।”

স্বাগতিকদের লম্বা ইনিংন গড়তে না পারার বিষয়ে সাকিব বলেন, “একটু তো হতাশাজনক। কারণ এগুলোই হয়তো অনেক বড় পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। ওদের হয়তো প্রথম ইনিংসে রান ৩১৪ না হয়ে ২৫০ হতে পারত। দ্বিতীয় ইনিংসেও অবশ্যই সুযোগ ছিল। এসব ক্রিকেটের অংশ, তবে হতাশানজক যে অন্য দলগুলি এসব মিস করে না, আমরা যেগুলো করি।”

ভারতীয় ব্যাটিং প্রসঙ্গে সাকিব পাল্টা প্রশ্ন করলেন, “৭৫ রানে ৭ উইকেটে ফেলে দেওয়ার পর তো আশা করবেন যে আপনার দল জিতবে! বিশেষ করে যখন আরও ৮০ রান দরকার, কেবল তিন উইকেট আছে। বলাটা কঠিন যে কী হলে কী হতে পারত। আমার মনে হয় আমরা সব দিক থেকেই চেষ্টা করেছি। হয়তো আরেকটু ভালো বল করতে পারতাম, আরও কিছু সুযোগ হয়তো তৈরি করতে পারতাম… যে ধরনের উইকেটে খেলা হচ্ছিল, এখানে হয়তো আরও একটি-দুটি সুযোগ তৈরি করা উচিত ছিল। তবে আমি খুবই খুশি যেভাবে আমরা পুরো টেস্ট ম্যাচে লড়াই করেছি।”

তবে আফসোসের কথাও জানালেন সাকিব। বলেন, “কাছে গিয়ে জিততে না পারার আফসোস আছে। তবে এটাও ভালো যে অন্তত আমরা কাছে যেতেপারছি এখন। আশা করি, পরের বছর থেকে ভালো ফল দেখাতে পারব।”

নিজেদের দোষারোপ করে সাকিব বলেন,“আমার মনে হয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আমরা ভালো ফিল্ডিং করেছি। বেশ ভালো করেছি। ওয়ানডে সিরিজেও (ভারতের বিপক্ষে) ভালো করেছি। টেস্ট ম্যচে আমরা ওইভাবে ভালো করতে পারিনি। হতে পারে মনোযোগের ঘাটতি, কে জানে, হতে পারে ফিটনেসের ঘাটতি বা অন্য কিছুও হতে পারে। তবে এসব খুঁজে বের করতে হবে যে কীভাবে আমরা আরও বড় সময় ধরে মনোযোগ ধরে রাখতে পারি এবং ভুলগুলো না করি। আমি নিশ্চিত, অন্য কোনো দলই এতগুলো সুযোগ দিত না, যতটা সুযোগ আমরা দেই। অনেক্ষত্রে আছে, খুবই নিয়মিত জিনিসগুলো আমরা মিস করে ফেলি, যেটা অন্য দেশগুলো করে না। এই জায়গায় উন্নতি করতে পারলে অন্য জায়গাগুলোতে আমাদের খুব বেশি পার্থক্য নেই স্কিলের জায়গায় ব্যাটিং ও বোলিংয়ের দিক থেকে। কারণ আমরা রান খুব কম করছি না। এই জিনিসগুলোই (ক্যাচ মিস) আমাদের জন্য পার্থক্য গড়ে দিচ্ছে। আমাদের বোলারদের হয়তো ১৩-১৪ টি সুযোগ তৈরি করতে হয় ১০ উইকেট নিতে, অন্যদের ক্ষেত্রে যেটা হয়তো অনেক সময় ৯টা সুযোগ তৈরি করলেই ১০টা হয়ে যায়।”

ওরা উপমহাদেশ বলেই জিতল? অধিনায়ক বলেন, “না, সেটা মনে হয় নাই। ওরা দুজন খুব ভালো ব্যাট করেছে। আমাদের স্পিনারদের খুব ভালো সামলেছে। তবে সুযোগ ছিল আমাদের। যখন আমরা চা বিরতিতে ছিলাম, সুযোগ এসেছিল, একটু এদিক-ওদিক হলেই হয়তো হতে পারত। আর কিছু বলার নেই। যেটা আমি বললাম যে, ওভারঅল টেস্ট ম্যাচে খুব ভালো হয়েছে (পারফরম্যান্স) এবং এটা দর্শকের জন্যও আশাব্যঞ্জক যে তারা এখন থেকে ভাবা শুরু করবে, যে কোনো দে<ের সঙ্গেই আমরা খেলি, আমাদের ভালো করার সুযোগ আছে।”

পরিকল্পনা নিয়ে সাকিব বলেন, “২০২৩ সালে আমাদের তিনটা বা পাঁচটা টেস্ট ম্যাচ আছে এফটিপিতে, যেটা আমি জানি। আমি মনে করি তিনটি সিরিজই আমাদের জেতা উচিত, যে ধরনের দলের সঙ্গে আমরা খেলব। অবশ্যই জেতা উচিত। টি-টোয়েন্টিতেও আমরা বেশ ভালো একটা অবস্থায় চলে আসছি। আমার ধারণা, ৬ মাসের মধ্যে আমরা এক দল দাঁড় করাতে পারব যেটা ২০২৪ বিশ্বকাপে খুব ভালো করবে, যেটা আমরা হয়তো প্রত্যাশাও করি না, ততটা ভালো করার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করি, যেহেতু বিশ্বকাপটা ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ওয়ানডেতে আমরা সেটেলড দল, যেখানে আমাদের ভালো না করার কোনো কারণই নেই। ২০১৪ সালেল পর থেকে ঘরের মাঠে মনে হয় একটা সিরিজ হেরেছি কেবল। ওয়ানডেতে খারাপ করার কোনো কারণ আছে বলে মনে করি না। বিশ্বকাপের বছর, অবশ্যই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ এই একটা জায়গায় আমরা যে ধরনের প্রত্যাশা নিয়ে যাই, সেভাবে পারফর্ম করতে পারি না। তবে আমরা যদি, দল হয়ে খেলতে পারি, অবদান সব জায়গা থেকে আসে, তাহলে আমার ধারণা এই বিশ্বকাপ আমাদের খুব ভালো যাবে।”

নিজের বোলিং যোগ্যতা নিয়েও মুখ খুললেন সাকিব-“এই সিরিজে যারা রান পায়নি, পরের সিরিজে পাবে। আমার মনে হয়, আমি আরও ভালো বল করতে পারি। ধারাবাহিকভাবে আরও ভালো জায়গায় বল করতে পারতাম। যেটা হয়তো একটু আমার জন্য হতাশাজনক। আমার যে সামর্থ্য ও মান, আমি মনে করি যে আরও ভালো জায়গায় বল করতে পারতাম। লেগ স্পিনার থাকলে তো সবসময়ই বাড়তি একটি সুবিধা, যেটি আমাদের নেই আসলে। অনেকদিন ধরেই এটা বলা হচ্ছে এবং এটা বলতে বলতে ও আফসোস করতে করতে এখন আর চিন্তায়ও আসে না। আশা করি, কোনো সময় আমাদের লেগ স্পিনার আসবে এবং দলকে জেতাতে ভূমিকা রাখবে।”

মিরাজ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, “ওকে খুব পরিণত মনে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয়েছে, খুব ভালো টেম্পারমেন্ট আছে, টেস্ট ম্যাচের জন্য আদর্শ, যে ধরনের ব্যাটসম্যান আমরা খুঁজছিলাম। আমার মনে হয়, ও একটা বড় শূন্যস্থান পূরণ করার মতো সামর্থ্য রাখে। তবে এটা কেবলই শুরু। আশা করি, বাংলাদেশের হয় এমন ভালো ভালো ইনিংস ও খেলবে।”

শেষ দিকে যখন মিরাজের বলে ছক্কা হলো, তার আগ পর্যন্ত বিশ্বাস ছিল। কারণ এখানে হয় কী, দ্রুত তিনটা উইকেট পড়তেই পারে, একজন বোলার হ্যাটট্রিক করতেই পারে, তিনটি উইকেট পড়তেই পারে, খুবই নরম্যাল।”

হতাশা নিয়ে আর কত দিন? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন,“হতাশার গল্পগুলি আপনারা সুন্দর করে বলতে পারে, ভালো গল্পগুলো সুন্দর করে বলতে পারেন না। সমস্যা এটাই। যেটা আমি বললাম, ওভারঅল যদি সামারি টানি ২০২২ সালের, আমরা ভালো খেলেছি। খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। যে জায়গাগুলোয় আমাদের ঘাটতি ছিল, সেখানে অনেক বেশি উন্নতি করেছি আমার কাছে মনে হয়। আমাদের এখন যে ধরনের চিন্তাধারা, ড্রেসিংরুমে যে ধরনের কথা হয়, যে ধরনের লিডারশিপ এখন তৈরি হচ্ছে, ২০২৩ সালে আমরা… অবশ্যই দেখব বলে আমার মনে হয়।”

টেষ্টে উন্নতি নিয়ে সাকিব বলেন, “প্রথম শ্রেণির ম্যাচ আমাদের আরও বেশি খেলাতে হবে, যদি আমরা টেস্ট ক্রিকেটে সিরিয়াসলি উন্নতি করতে চাই। একজন ক্রিকেটারের ৫-৭-১০ ম্যাচের যে অভিজ্ঞতা, আর ৫০-৬০-৭০ ম্যাচ খেলার যে অভিজ্ঞতা, এটা অনেক পার্থক্য গড়ে দেয়। আমি নিশ্চিত, ভারতের যে ক্রিকেটাররা আসছে, ওদের প্রায় সবার একশর ওপরে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা আছে। যেখানে আমিই হয়তো এতদিন ধরে আছি… হয়তো আমি অনেক দিন ঘরোয়া খেলি না, তবে অন্যান্য যারা খেলে, একটা মৌসুমে কয়টা ম্যাচ খেলে? ৬টা থেকে ৮টা হয়তো। যদি এরকম খেলে, ১০ বছরে হবে ৮০টা ম্যাচ। আমরা যদি ৮০টা প্রথম শ্রেণির ম্যাচ কোনোভাবে ৫ বছরে খেলতে পারি, আমার কাছে মনে হয় অনেক ভালো টেস্ট ক্রিকেটার বের হবে।”

ওপেনার জাকির নিয়ে সাকিব বলেন,“ জাকিরের জন্য একটা সুবিধা হচ্ছে, ও কিন্তু নতুন ক্রিকেটার নয়। অনেক অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। ৭০টি ম্যাচ খেলেছে। খেলার মধ্যে ওই ব্যাপারটি দেখা যায়। যখন ১৯-২০ বছরের একটি ছেলে খেলবে, তার খেলার যে ধরন, একটা ৩০ বছরের ছেলে, জাতীয় দলের আশপাশ দিয়ে ছিল সবসময়, ৬০-৭০টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলে আসা ক্রিকেটার, তার টেম্পারমেন্ট দেখলেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন। আমি যেটা চাচ্ছি, এরকম ক্রিকেটাররা যদি আসে, ৫-৬-১০ বছর যে সার্ভিস দেবে বাংলাদেশ, তাদের ভালো সার্ভিস দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। জয় কিন্তু সিস্টেমের বাইরে নয়। অবশ্যই সিস্টেমে আছে। যখন ও ‘এ’ দলে রান পাওয়া শুরু করবে, ওর জন্য সুযোগ আসবে যখন, আমি চাই ও যেন ভালোভাবে নিতে পারে সুযোগটা, যেন ওর ক্যারিয়ারেও এরকম হয় যে ১০-১২-১৫ বছর খেলবে বাংলাদেশ দলে, ১০০ টেস্ট খেলবে।”

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

সর্বাধিক পঠিত

20G