ফেনীতে এখনো আছে ঐতিহ্যের মাটির ঘর
প্রতিক্ষণ ডেস্ক
একসময় গ্রামবাংলার মানুষের আশ্রয়, ভালোবাসা ও ঐতিহ্যের প্রতীক ছিল মাটির ঘর। সময়ের স্রোতে তা প্রায় বিলীন হলেও ফেনীর কিছু প্রান্তে এখনো টিকে আছে সেই অতীতের নিঃশব্দ সাক্ষী। কাদা ও মাটির সংমিশ্রণে গড়া এসব ঘরে আজও মেলে প্রকৃতির শীতল পরশ, সরল জীবনের গল্প আর এক টুকরো প্রশান্তি। ফেনীর ছয়টি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে থাকা এসব মাটির ঘর পুরোনো দিনের স্মৃতি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে নীরবে। এর মধ্যে পরশুরাম উপজেলার সীমান্তবর্তী উত্তর গুথুমা গ্রামের তাকিয়া পাড়া এলাকায় রয়েছে এক অনন্য নিদর্শন—একটি দোতলা মাটির ঘর। স্থানীয় সাংবাদিক আজমীর মিশু ঘরটি ঘুরে দেখে বলেন, ‘এমন দোতলা মাটির ঘর এখন সত্যিই বিরল। নির্মাণশৈলী ও স্থায়িত্ব দেখে বোঝা যায়, গ্রামীণ কারিগরদের দক্ষতা কত নিখুঁত ছিল।’ সংরক্ষণ করা গেলে এটি পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হতে পারে বলেও তিনি মনে করেন। ঘরটির মালিক আবদুল মোমেন মঞ্জুর জানান, ‘এই ঘরটি প্রায় তিন দশকের পুরোনো। যত্ন ও ভালোবাসায় এখনো টিকিয়ে রেখেছি। গরমে ঠান্ডা, শীতে উষ্ণ—এমন আরাম অন্য কোথাও পাওয়া যায় না।’ দর্শনার্থী তানজিদ শুভ বলেন, ‘ভাবতাম, এমন মাটির ঘর শুধু সিনেমাতেই দেখা যায়। কিন্তু এখানে এসে সত্যিই অবাক হয়েছি। প্রকৃতির মাঝে এমন ঘর মানেই এক অনন্য শান্তির ছোঁয়া।’ সবুজ প্রকৃতির কোলে দাঁড়িয়ে থাকা এই মাটির দোতলা ঘর যেন চোখ জুড়ানো এক দৃশ্য। স্থানীয় প্রবীণ বাসিন্দা বশর মিয়া বলেন, ‘এই ঘরটা দেখলেই মনে হয়, সময় যেন একটু থেমে গেছে পুরোনো দিনে।’ বয়োজ্যেষ্ঠ নারী সবুরা খাতুন স্মৃতিময় কণ্ঠে বলেন, ‘বিয়ের পর এই মাটির ঘরেই সংসার শুরু করেছিলাম। বিকেলে উঠানে সবাই মিলে গল্প করতাম, পিঠা বানাতাম। এখন সেই দিনগুলো শুধু স্মৃতি।’ সময়ের সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ফেনীর গ্রামাঞ্চল। প্রবাসীদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, আধুনিকতার ছোঁয়া ও কংক্রিটের দালানের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ ঐতিহ্য। তবুও এসব মাটির ঘর এখনো টিকে আছে ঐতিহ্যের শেষ প্রতীক হয়ে—যা মনে করিয়ে দেয়, বাংলার শিকড় এখনো মাটিতেই মিশে আছে।










