কবরস্থানে ঠাঁই নিয়েছেন বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীরা

প্রকাশঃ নভেম্বর ৪, ২০২৫ সময়ঃ ৬:০৯ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৬:০৯ অপরাহ্ণ

প্রতিক্ষণ ডেস্ক

ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ায় গাজার অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছে কবরস্থানে। মৃতদের চিরনিদ্রার জায়গা এখন বাস্তুচ্যুত মানুষের জীবনধারণের শেষ ভরসা। কোথাও কবরফলকই হয়ে উঠেছে তাদের বসার টেবিল, কোথাও আবার সেটিই রাতের ঘুমের বিছানা।

গাজার দক্ষিণাঞ্চল খান ইউনিসের একটি কবরস্থানে প্রায় ৩০টি ফিলিস্তিনি পরিবার ছোট ছোট তাঁবু গেড়ে রয়েছেন। অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জায়গা না পেয়ে তারা সন্তানদের নিয়ে কবরের মাঝের সংকীর্ণ ফাঁকেই দিন কাটাচ্ছেন। সেই নীরব কবরস্থানে এখন ঝুলছে নামাজের চাদর, ধোঁয়া উঠছে রান্নার চুলায়, শিশুরা খেলছে কবরের ওপরেই।

এমনই একটি পরিবারের সদস্য মাইসা ব্রিকাহ জানান, পাঁচ মাস ধরে তারা এখানে বসবাস করছেন। দিনের আলোয় শিশুরা কবরকে খেলাঘর বানালেও রাত নামলে ভয় ঘিরে ধরে। ইসরায়েলি গোলার শব্দের পাশাপাশি অন্ধকার কবর আর বেওয়ারিশ কুকুরের ভয় শিশুদের তাড়িয়ে বেড়ায়। তবুও কোথায় যাবে? তাদের বাড়িঘর এখন ধ্বংসস্তূপ; এলাকায় ফিরলেই আবার মৃত্যু ঝুঁকি।

মোহাম্মদ শামাহর গল্পও একই রকম। তিনিও উত্তরের এলাকা থেকে জীবন বাঁচাতে এখানে এসেছেন। রাত নামলে তিনিও আতঙ্কে তাঁবুর ভেতরে লুকিয়ে থাকেন। হাতে ছিল মাত্র ২০০ শেকেল—সেই টাকাতেই বন্ধুর সহায়তায় তাঁবু খাটিয়েছেন কবরের পাশে। পানির অভাবে অল্প পানি দিয়েই সব কাজ সারতে হয়, বলে জানান তার স্ত্রী হানান শামাহ।

জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বাহিনী বহুবার কবরস্থানেও হামলা চালিয়েছে। তাদের দাবি, সন্ত্রাসীরা এসব জায়গা ব্যবহার করে টানেল বা আড়াল হিসেবে—এ কারণেই কবরস্থানও এখন সামরিক টার্গেট।

গাজায় সাধারণত পরিবারগুলো প্রিয়জনকে বাড়ির কাছাকাছি কবর দেয়ার রীতি অনুসরণ করে। কিন্তু যুদ্ধ সেই প্রথা ভেঙে দিয়েছে। হাসপাতাল প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন স্থানে সাময়িকভাবে দাফন করা অনেক মরদেহ এখন ফের কবরস্থানে এনে সমাহিত করা হচ্ছে। নতুন কবর খোঁড়ার জায়গা তৈরি করতে গিয়ে বাস্তুহারা মানুষের মাথার ওপর বাড়ছে উচ্ছেদের শঙ্কা।

শামাহর প্রশ্ন—‘এখান থেকে আর কোথায় যাব? জীবিত হয়েও তো মৃতদের সঙ্গেই থাকছি।’

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামলায় এখন পর্যন্ত গাজায় প্রাণ হারিয়েছেন ৬৮ হাজারেরও বেশি মানুষ। ঘরছাড়া মানুষ ২০ লাখের ওপর। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও জীবনে স্বস্তির ছাপ নেই—কবরস্থানে গেড়ে বসা তাঁবুগুলোর প্রতিটি দিন যেন টিকে থাকার আর্তনাদ।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G