প্রতিক্ষণ ডেস্ক
প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর পর প্রথমবারের মতো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—ইকসুর গঠনতন্ত্র সিন্ডিকেটে অনুমোদন পেয়েছে। গত ৩১ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৭১তম সিন্ডিকেট সভায় কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের গঠনতন্ত্র পাস হয়, যা ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এ পাঠানো হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর এটি অর্ডিন্যান্স আকারে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে যুক্ত হবে।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি এবং প্রতিটি হলে ১৫টি পদ থাকবে। কেন্দ্রীয় সংসদের ২৩টি এবং হল সংসদের ১৩টি পদে সরাসরি ভোট দিতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি থাকবেন উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ থাকবেন সংসদ থেকে নির্বাচিত। হল সংসদে সভাপতি থাকবেন প্রাধ্যক্ষ এবং কোষাধ্যক্ষের ভূমিকা পালন করবেন সহকারী প্রাধ্যক্ষ। অনির্বাচিত পদের বাইরে সব পদে শিক্ষার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন।
পূর্ণকালীন স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও এমফিল শিক্ষার্থীরা সদস্যপদ ফি দিয়ে ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। তবে সান্ধ্যকালীন, পেশাগত কোর্সের শিক্ষার্থী ও বহিষ্কৃতরা ভোটাধিকার পাবেন না। এমফিল শিক্ষার্থীদের জন্য বয়সসীমা ৩০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে এবং তারা মাত্র একবারই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত না করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন অনেক ছাত্রনেতা। তাদের মতে, সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে প্রতিনিধিত্ব না থাকলে ছাত্র সংসদের কার্যকারিতা কমে যাবে। একই সঙ্গে তারা নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার দাবি জানান।
ইবির ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, “৫ আগস্টের পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়েছে, ইবিতেও সেটি চাই। তবে আমরা চেয়েছিলাম শুধু নিয়মিত স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীরাই ভোটার ও প্রার্থী হোক।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নির্বাচিত ভিপি ও জিএস যেন সিন্ডিকেট সদস্য হন—এ দাবিও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, “দীর্ঘদিনের দাবির পর ছাত্র সংসদের গঠনতন্ত্র দৃশ্যমান হলো। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ও প্রশাসনের দ্রুত তৎপরতা।”
ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত বলেন, “গঠনতন্ত্রের খসড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হলে ভালো হতো। পাশাপাশি নির্বাচনের রোডম্যাপ আগে ঘোষণা করলে শিক্ষার্থীরা আরও পরিষ্কার ধারণা পেতেন।”
তিনি আরও বলেন, “ছাত্র প্রতিনিধিদের সিন্ডিকেটে অন্তর্ভুক্ত না হলে সংসদ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। সবাই চান ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক।”
আগ্রাসনবিরোধী শিক্ষার্থী জোটের সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট মনে করেন, ছাত্র সংসদ গঠিত হলে শিক্ষার্থীরা লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতির বাইরে এসে নিজেদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে।