ঐশীকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশ

প্রকাশঃ এপ্রিল ৩, ২০১৭ সময়ঃ ১:৪১ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৪১ অপরাহ্ণ

পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী হত্যায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া তাঁদের মেয়ে ঐশী রহমানকে সশরীরে হাজির করতে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আগামী ১০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১০টায় ঐশীকে হাইকোর্টে হাজির করতে কারা মহাপরিদর্শককে (আইজি প্রিজনস) এ নির্দেশ দেওয়া হয়।

আপিলের শুনানিকালে আজ সোমবার বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন ও বিচারপতি মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের ডিভিশন বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালত রায়ে বলেন, মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঐশী রহমান হত্যার সময় মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন। এবং বংশগতভাবে তাঁরা মানসিক রোগী। তাঁর দাদি, চাচারা বিকারগ্রস্ত। মেডিকেল রিপোর্টের সত্যতা যাচাই ও পর্যবেক্ষণ করতে তাঁকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ দেওয়া হলো।

তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির বিরোধিতা করে বলেন, ঐশীকে হাজির করা ঠিক হবে না। কেননা, মামলার এ পর্যায়ে তাঁকে হাজির করা হলে ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। মামলার সাক্ষ্য, তদন্ত সবকিছু শেষে বিচারিক আদালত রায় দিয়েছিলেন। হাইকোর্টে ঐশীকে হাজির করা হলে আদালতের মায়া জন্মাতে পারে। ঐশীর পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে। তাই তাঁকে হাজির করা ঠিক হবে না।

আদালত বলেন, ‘আমরা শুধু মেডিকেল রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করার জন্য হাজির করতে বলেছি। শুধু তার মানসিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করব।’ এ পর্যায়ে আদালত তাকে হাজির করতে নির্দেশ দেন।

ঐশীর আইনজীবী আফজাল এইচ খান ও সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী শুনানি করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জহিরুল হক জহির।

ঐশীর আইনজীবী আফজাল এইচ খান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আপিলে আমরা ২৫টি যুক্তি দেখিয়েছি। এর মধ্যে অন্যতম যুক্তি হলো ঐশী হত্যাকাণ্ডের সময় মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত ছিলেন।’

এ ছাড়া ২১ নম্বর সাক্ষী ডা. নাহিদ মাহজাবীন মোর্শেদের সাক্ষ্য আমলে নেননি আদালত। তিনি তাঁর সাক্ষ্যে বলেছেন, ঘটনার সময় ঐশীর মানসিক ভারসাম্য ছিল না। হত্যার আগে এক বোতল হুইস্কি খেয়েছিল ঐশী রহমান।

এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদে মামলার বাদী ঐশীর চাচা বলেছেন, তাঁর ভাই নিহত মাহফুজুর রহমান বিয়ে করেছেন ১৯৯৪ সালে। মেয়ে ঐশীর জন্ম হয়েছে ১৮ আগস্ট ১৯৯৬ সালে। এ ঘটনার সময় ঐশীর বয়স হয় ১৬ বছর। কিন্তু প্রসিকিউশন ১৯ বছর বয়স দেখিয়ে তাঁকে শিশু আইনে বিচার করতে দেয়নি। বাংলাদেশি ফৌজদারি আইন অনুযায়ী সে একজন কিশোরী। প্রাপ্তবয়স্ক হতে হলে তাঁর ১৮ বছর দরকার হতো। এ ছাড়া একজন আসামিকে ডিএনএ টেস্ট করার জন্য ছয়টি এক্স-রে করতে হয়। সেখানে ঐশীকে মাত্র তিনটি টেস্ট করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এসব পরীক্ষার এক্স-রে কপি আদালতে উপস্থাপন না করে শুধু রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে।

গত ১২ মার্চ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি হাইকোর্টে শুরু হয়।

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ২৫টি যুক্তি দেখিয়ে ঐশী রহমান হাইকোর্টে আপিল দায়ের করেন। আপিলে তিনি বলেছেন, তাঁর বিচার প্রক্রিয়া ছিল ভুলে ভরা। মিথ্যা সাক্ষীর ওপর ভিত্তি করে তাঁকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বয়সের ক্ষেত্রে মামলার বাদীর বক্তব্য গ্রহণ করেননি আদালত।

মামলার বিবরণে জানা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী স্বপ্না রহমানকে হত্যার দায়ে মেয়ে ঐশী রহমানকে ২০১৫ সালের ১৫ নভেম্বর দুবার মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। প্রতিটি মৃত্যুদণ্ডের সঙ্গে ২০ হাজার টাকা করে মোট ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর অন্যটি সরাসরি বাতিল হয়ে যাবে।

একই সঙ্গে ঐশীর বন্ধু মিজানুর রহমান রনিকে দুই বছর কারাদণ্ডাদেশ ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। মামলার অপর আসামি আসাদুজ্জামান জনিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহমেদ এ রায় ঘোষণা করেন।

প্রতিক্ষণ/এডি/শান

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

December 2025
SSMTWTF
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031 
20G